ফরহাদ/ নাজমুল/হেলাল শেখ ঃ
ঢাকার আশুলিয়ায় বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড বেড়েই চলছে। বিভিন্ন সুত্রে জানা যায়,
যত্রতত্র মানুষের লাশ উদ্ধার করছেন থানা পুলিশ। এর মধ্যে আশুলিয়ার (নবীনগর) একটি বাস থেকে ২৮
জন ডাকাত সদস্যকে গ্রেফতার করায় বিভিন্ন মহলে আলোচিত।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, ১। বশির মোল্লা (৩২), আলামিন বেপারী (২৬), স্বপন আলী (২৬), জাকির
(৩৮), শিপন মিয়া (২০), মামুন শেখ (২৭), রফিকুল ইসলাম (৩০), আবু সাঈদ ফকির (৪১), বাবুল
হক (৩৮), বাহারুল ইসলাম (১৯), কামরুল পাটোয়ারী (২০), ইকবাল হাসান (২৩), সোহরাব মিয়া
(২৮), মাসুম হাওলাদার (৩২), রোহিত সরকার (২০), কাউছার (২৫), মহসিন মিয়া (২১), মেহেদী
হাসান (২০), হাবিবুর রহমান (২৩), ওহিদুজ্জামান মিলন (২৮), সানাউল্লাহ বেপারী (৩৭), শফিকুল
ইসলাম (২০), কাশেম (২৬), মোকছেদ (৩৬), শেখ মোঃ জাহিদুল ইসলাম (৩২), এনামুল হক (২৫),
শাহ আলম (১৮) রুহুল আমিন (২৩)। এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানায় মামলা রুজু করা হয়েছে, মামলা
নং ০৭। তারিখঃ ০৩/১১/১৭ ইং, ধারা ৩৯৫/৩৯৭/৪১২ দন্ডবিধি।
উক্ত মামলার বাদী আসিফ আহম্মেদ দাবি করেছেন, উক্ত আসামীদের মধ্যে ৫/৬ জন আসামী তার
বুকে পিস্তল ঠেকাইয়া বলে আমরা বাসেযারা আছি সবাই ডাকাত তোর কাছে যা আছে সব
দিয়া দে। তিনি উল্লেখ করেছেন মাত্র ১০০০০/ (দশ হাজার) টাকার জন্য এই ডাকাতির ঘটনা
ঘটেছে। ঘটনার দিন রাত অনুমান সাড়ে ১০টার দিকে আটককৃত ডাকাতদের মধ্যে ১ নং
আসামী বসির মোল্লার কাছ থেকে পুলি একটি পিস্তল ও গুলি উদ্ধার করেছেন। এ ডাকাতির
ঘটনা নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে হাসাহাসি ও আলোচিত। জনমনে প্রশ্নঃ মাত্র ১০ হাজার টাকার
জন্য কি একটি বাসে ২৮ জন ডাকাত উঠেছে? সেখানে কি বাদি একাই যাত্রী ছিলেন?
অনেকেই বিষয়টি রহস্যজনক মনে করছেন। উক্ত ডাকাতির ঘটনাটি ধামরাই থানার কালামপুর
বাষ্ট্যান থেকে আশুলিয়া থানার নবীনগর এসেই যাত্রীবেশি ডাকাতি ঘটনা ঘটেছে।
জানা গেছে, নিরাপদ “ক্রাইম জোন”-এ পরিণত হয়েছে রাজধানীর নিকটবর্তী এলাকা শিল্পাঞ্চল
আশুলিয়া। মাদক, জুয়া, দেহু ব্যবসা, খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি-সন্ত্রাস যেন অনেকটাই
স্বাভাবিক ঘটনা আশুলিয়াবাসীর কাছে। গত বছরের উল্লেখ্য- সোমবার ৯ জানুয়ারি ২০১৭ ইং এর
আগের ১১ মাসে ১২৩ টি লাশ উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ, একটি বহুল প্রচারিত জাতীয় দৈনিক
পত্রিকায় রিপোর্র্ট ও অনেকের অভিমতঃ আশুলিয়ায় অতিমাত্রায় দুর্নীতির কারণে যত্রতত্র মিলছে
মানুষের লাশ। এ রিপোর্টের তথ্য সুত্রে জানা গেছে, বেশিরভাগ হ্যাকান্ডের তদন্তের কুলকিনারা
নেই বললেই চলে। অপরাধ দমন বাদ দিয়ে কিছু পুলিশ সদস্য জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন অপরাধে এ
যেন দেখার কেউ নেই।
আশুলিয়াবাসীর অভিযোগ উঠেছে, লাশকে পুঁজি করে প্রায়ই নানারকম হয়রানি আয়োজন করে
পুলিশ। বিশেষ করে ভাড়াটে গার্মেন্টস কর্মী আত্মহত্যার ঘটনায় বাড়ির মালিকদের ধরে এনে
থানা লকআপে আটকে রাখার অসংখ্য নজির রয়েছে। কথিপয় পুলিশ অফিসারের চাহিদামাফিক
টাকা আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের খুনি সন্দেহে হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়। তবে টাকা পেলেই
পাল্টে যায় চিত্র, তাকে বানানো হয় মামলার সাক্ষী। এরকম ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে
নিউজ প্রকাশ হলেও কারো কোনো মাথা ব্যথা নেই বলে মনে করেন সচেতন মহল।
গত ২৪/১১/২০১৭ইং তারিখে আশুলিয়া থানার জিডি নং ১৮৭৬ মোছাঃ মৌসুমী বেগম (২১)
আত্মহত্যা করার ঘটনায় তার স্বামী আব্দুল মোতালেব (২২) কে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করেন পুলিশ।
মোতালেব কে ছেড়ে দেয়ার কথা বলে তার বাবা ফরমান এর কাছে আশুলিয়া থানার এস আই শফিকুল
ইসলাম শফিক দাবি করেন মোটা অংকের টাকা। ফরমান একজন প্রতিবন্ধী এক হাত নেই, এক
চোখ অন্ধ-ভিক্ষা করে সংসার চালায় সে ২০ হাজার ২০০ টাকা ওই পুলিশ অফিসারকে দেওয়ার পরও তার
ছেলেকে ছেড়ে না দিয়ে ৫৪ ধারায় আসামী করে আদালতে প্রেরণ করেছেন বলে প্রতিবন্ধী ফরমান
জানান। মোতালেব ও তার স্ত্রী মৌসুমী আশুলিয়ার জামগড়া রূপায়ন আবাসন ১ নং গেটের
সামনে দেলোয়ার ভান্ডারীর বাড়ীতে ৬ মাস আগে একটি পকেট রুম ভাড়া নিয়ে বসবাস করতেন।
এ বিষয়ে এস আই শফিক এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। এরকম অনেক
ঘটনা আশুলিয়াবাসীর কাছে মনে হয় স্বাভাবিক। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে অনেক ভুক্তভোগীর সাথে
কথা হলেও তারা নাম প্রকাশে রাজি হননি। অনেকেই বলেন, কিছু পুলিশই সাধারণ মানুষকে
জিম্মী করছে, পুলিশ কর্তৃক সাধারণ মানুষকে গ্রেফতার করে টাকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়ায়
অপরাধ আরও বাড়ছে।
এলাকাবাসী বলছে, স্থানীয় প্রভাবশালীদের আশ্রয় প্রশ্রয়ে ঠেকানো যাচ্ছে না নারী
নির্যাতন, ধর্ষণ, খুন, রাহাজানি, অপহরণ, চাঁদাবাজি, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই। বিশেষ
কিছু ঘটনা যেমনঃ ধর্ষণ সংক্রান্ত মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে অভিযোগকারীকে নিরুৎসাহিত করে
স্থানীয় পর্যায়ে মিট-মীমাংসা করার পরামর্শ দেওয়া হয় পুলিশের পক্ষ থেকে। বিশেষ করে আশুলিয়ার
বিভিন্ন সিস্টেমমত মাসোয়ারা চলে আসছে সব খাতেইঃ হকার থেকে শুরু করে ফুটপাথ
দোকানি, ভাঙ্গারি পট্রি, ঝুট ব্যবসায়ী, অবৈধ অটো রিকসা, অবৈধ গ্যাস সংযোগ,
ইটভাটা, লাইসেন্সবিহীন ফার্মেসী, মাদক ব্যবসাসহ অর্ধশতাধিক খাত থেকে দৈনিক ও
মাসিক হারে চাঁদা ধার্যকৃত মাসোয়ারা উঠানো হয়। উক্ত বিষয়ে তদন্ত করলে কেঁচো
খুঁড়তে সাপের সন্ধান পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন অনেকেই।
উক্ত এলাকায় আইনঙ্খলা রক্ষায় জনগণের নিরাপত্তার জন্য এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থা ও
পুলিশ প্রশাসনের উপর মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন সর্বস্তরের জনসাধারণ।