শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৫২ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
নিষিদ্ধ হওয়া ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা গ্রেপ্তার রাজধানীতে নিষিদ্ধঘোষিত হিজবুত তাহরীরের ২ সদস্য গ্রেপ্তার বগুড়ায় আইন কর্মকর্তা নিয়োগ বিএনপি-জামায়াতপন্থি ১০৭ জন অতি বৃষ্টির কারণে লালমনিহাট জেলায় বন্যা নিম্ন অঞ্চল প্লাবিত বগুড়ায় ট্রাক পরিবহনের সভাপতি-সম্পাদকের বিরুদ্ধে ১০ কোটি টাকার আত্মসাৎ ও মামলা টিএমএসএস সদস্যদের (RAISE) প্রকল্পের উন্নয়ন বিষয়ক প্রশিক্ষণ দীর্ঘ ১৩ বছর পর আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে চাকুরী ফেরত পেলেন প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক আশুলিয়ায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত ও নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া ও মিলাদ মাহফিল পরিত্যক্ত চুল পুনরায় ব্যবহারের মাধ্যমে ভাগ্য বোনার চেষ্টা আদিতমারীর নারীদের। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চিফ প্রসিকিউটর হলেন অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম

‘ভয়ঙ্কর চাচি’ এবার ধরা পড়লেন পাবনায়

বাংলার প্রতিদিন ডেস্ক ::
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৭
  • ১৬০ বার পড়া হয়েছে

অনলাইন ডেস্কঃ

পাবনায় ‘ভয়ঙ্কর দেবর’ ও ‘ভয়ঙ্কর বন্ধু’র পর এবার ধরা পড়লেন ‘ভয়ঙ্কর চাচি’। সেই চাচি শিশু ভাতিজাকে হত্যা করার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও দিয়েছেন।

প্রথম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক শিশুকে দল বেঁধে যেভাবে খুন করে গুম করা হয় সেই বর্ণনা পড়লে গা শিউরে উঠবে সবার।

পাঠকদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সেই বর্ণনা তুলে ধরেছেন পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) গৌতম কুমার বিশ্বাস। আজ সোমবার তিনি তাঁর ফেসবুকে পেজে সেই কথা লিখেছেন।

শিশু আনিসের লাশ উদ্ধারের পরদিন পাবনার বেড়া উপজেলার ঢালারচর উত্তরপাড়ায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস। ছবি : সংগৃহীত

এর আগে গত ২২ নভেম্বর বুধবার পাবনার বেড়া উপজেলার আমিনপুর থানাধীন ঢালারচর উত্তরপাড়া এলাকার একটি খাল থেকে নিখোঁজ শিশু আনিস হোসেন মোল্লার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আনিস মোল্লা ঢালারচর মোল্লাপাড়া এলাকার রতন মোল্লার ছেলে। সে চর নতিবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণিতে পড়ত।

ঘটনার পর আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকুমার মহন্ত জানান, গত ২০ নভেম্বর সোমবার স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে শিশু আনিস হোসেন মোল্লা নিখোঁজ হয়। পরিবারের লোকজন বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করেও কোনো সন্ধান পায়নি। সেদিন রাতেই শিশুটির মা আন্না খাতুন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এরপর বুধবার ঢালারচর উত্তরপাড়া এলাকার একটি খালে এলাকাবাসী আনিস মোল্লার মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

কে বা কারা হত্যা করল নিরীহ শিশু আনিসকে? কেন? কীভাবে? ফেসবুকে সেই বর্ণনা দিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস। এনটিভি অনলাইনের পাঠকদের জন্য তা নিচে তুলে ধরা হলো :

খাল থেকে লাশ উদ্ধারের পর নিথর পড়ে আছে আনিস। ছবি : সংগৃহীত

গল গল করে রক্ত বের হচ্ছে নাক দিয়ে। আড়ষ্ট জিহ্বাটা নড়ল একটুখানি, কিন্তু কোনো আওয়াজ বের হলো না, তবে মায়াভরা দুটো চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল অভিমানের অশ্রু। কিছুই বুঝল না ক্লাস ওয়ানে পড়ুয়া দুধের শিশু আনিস। শুধু দেখল তার আপন চাচি শক্ত করে ধরে রেখেছে তাকে। আর তার ভাইগুলো জল্লাদের মতো গলা টিপে ধরেছে তার। এরপর থেমে গেল পৃথিবীর সব কোলাহল। সভ্য পৃথিবীর অসভ্য দংশনে বুক ভরা অভিমান নিয়ে চিরতরে চলে গেল ছোট্ট শিশু আনিস।

আজ লিখতে মন চাইছে না। লজ্জা, ঘৃণা আর ক্ষোভে স্তব্ধ হয়ে গেছি। আপন চাচি হত্যা করল দুধের শিশুকে! এও কি পারে মানুষ! কীভাবে পারল এই নারকীয় বর্বর কাজ করতে? তবে, শুনুন পুরো ঘটনা।

ঘটনাটি ঘটেছে পাবনা জেলার আমিনপুর থানার খয়েরকান্দি (ঢালারচর) গ্রামে। পাঁচ বছর আগে লাভলীর (শিশু আনিসের চাচি) বিয়ে হয় একই গ্রামের সাইফুলের সঙ্গে। কিন্তু বনিবনা না হওয়ায় বছর তিনেক হলো বাপের বাড়িতেই থাকেন তিনি। গত বছর সাইফুল এলাকায় নিয়ে আসে একটা মেয়েকে, বিয়ে করার জন্য। জানতে পেরে লাভলীর ভাইয়েরা মারধর করেন সাইফুলকে এবং সালিসির মাধ্যমে সাইফুলকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেন। সাইফুল এদিকে না দেন টাকা, না নেন লাভলীকে ঘরে তুলে।

এদিকে ভাই-ভাতিজাদের নিয়ে দিব্বি সুখে রয়েছেন সাইফুল। বেশ আনন্দেই কাটছে দিন। এই দৃশ্য লাভলী আর তাঁর পরিবারের সহ্য হলো না। পিশাচ ভর করল তাঁদের ঘাড়ে। প্রতিশোধের নেশা পেয়ে বসল। তাঁরা ঠিক করলেন সাইফুলের পরিবারের ক্ষতি করবেন। অমনি পরিকল্পনার ছক এঁটে ফেললেন তারা। সাইফুলের বড় ভাইয়ের শিশু বাচ্চাকে টার্গেট করা হলো।

২০-১১-১৭ তারিখে আনিসকে খাজা খাওয়ানোর লোভ দেখিয়ে স্কুল থেকে নিজ বাড়িতে ডেকে নিয়ে আসেন লাভলী। চাচিকে নিজের মায়ের মতোই বিশ্বাস করত আনিস। তাই সাত-পাঁচ না ভেবে খুশি মনে চলে আসে চাচির সঙ্গে। লাভলীর কোলে বসেই ভাত খায় সে। পিশাচ লাভলী ভাতের সঙ্গে কড়া ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেয়। গভীর ঘুমে অচেতন হয়ে পড়ে দুরন্ত বাচ্চাটি। লাভলী নিজের বাড়িতেই লুকিয়ে রাখেন বাচ্চাটিকে। দেখতে থাকেন এরপর কী ঘটে।

এদিকে আনিস ঘরে ফেরেনি দেখে পাগলের মতো খোঁজাখুঁজি শুরু করেন আনিসের বাবা-মা। ধীরে ধীরে রাত নেমে আসে। এরই মধ্যে শোনা যায়, লাভলীর সঙ্গে নাকি আনিসকে দেখেছিল কেউ কেউ। বিষয়টি বেমালুম অস্বীকার করেন লাভলী ও তাঁর পরিবার। মাঝে একটি দিন কেটে যায়। তবু ঘুম ভাঙে না শিশুটির। এরপর ২১-১১-১৭ তারিখ গভীর রাতে ঘটে এক নির্মম ঘটনা। ঘুমন্ত আনিসের হাত চেপে ধরেন লাভলী। তাঁকে সাহায্য করেন তাঁর মা ও ভাবী। এরপর লাভলীর এক ভাই বুকের ওপর চড়ে বসেন শিশু আনিসের। নোংরা আক্রোশে ঘুষি মেরে দুটি দাঁত ভেঙে ফেলেন। অপর দুই ভাই সঙ্গে থেকে লাভলীরই ওড়না পেঁচিয়ে এবং গলা টিপে হত্যা করেন আনিসকে। এই নরপিশাচদের নারকীয়তা এখানেই শেষ হয়নি। এরপর ওড়না জড়িয়ে ছোট্ট দেহটি ফেলে আসেন পাশের ডোবায়।

এদিকে সন্তানের শোকে পাগল বাবা-মা আর তার স্বজনরা হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকে বাচ্চাটিকে। এরপর ২২-১১-১৭ তারিখ তারা গ্রামের ভেতরের এক ডোবায় আনিসের লাশ খুঁজে পায়। সব কিছুই ঠিক-ঠাক ছিল। কিন্তু, শেষ রক্ষা হয়নি লাভলীর। তাড়াহুড়োর সময় ভুল করে লাশের পাশেই তিনি ফেলে আসেন তাঁর ওড়না। এরই রেশ ধরে গ্রেপ্তার হন তিনি। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে আর লুকাতে পারেন না তাঁর অপকর্ম। অবশেষে বর্ণনা করেন তাঁর পাশবিকতার কথা। আদালতে (শনিবার) জবানবন্দি দেন লাভলী। সুজানগর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার রবিউল, তদন্তকারী কর্মকর্তা মঈন এবং আমিনপুর থানার সংশ্লিষ্টদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় উদঘাটিত হয়েছে এই ভয়ঙ্কর হত্যাকাণ্ডের রহস্য।

শিশু আনিসের লাশ উদ্ধারের পরদিন পাবনার বেড়া উপজেলার ঢালারচর উত্তরপাড়ায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস। ছবি : সংগৃহীত

সবশেষে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস লেখেন, ‘যে শিশুটি এখনো মায়ের কোলই ছাড়েনি, মুখে তুলে না দিলে খেতে পারে না, রাতে মায়ের গলা না জড়িয়ে ধরলে ঘুমোতে পারে না, তার গলায় ফাঁস পরিয়েছে তারই মায়ের মতো, তারই আপন চাচি। এর চেয়ে বিশ্বাসঘাতকতা, এর চেয়ে ন্যক্কারজনক আর কী হতে পারে! বলার ভাষা নেই। শুধু হাত জোড় করে শিশু আনিসকে বলতে চাই-বাবা আনিস, আমাদের ক্ষমা করো।’

লাভলী বর্তমানে কারাগারে আছেন। শিশু আনিস হত্যাকাণ্ডে তাঁর মা, ভাবী ও তিন ভাই জড়িত থাকলেও তাঁদের এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

চলতি মাসেই পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার কাশিনাথপুর ইউনিয়নের পাইকরহাটি গ্রামে গৃহবধূ আলেয়া খাতুন (৪০) হত্যার রহস্য উদঘাটন করে পুলিশ। ৭ নভেম্বর গ্রেপ্তার করে আলেয়ার চাচাতো দেবর টুটুল মল্লিককে (৩০)। বিলের মধ্য থেকে উদ্ধার করা হয় আলেয়ার লাশ।

আলেয়া গত ১ নভেম্বর থেকে নিখোঁজ ছিলেন। ওই ঘটনায় কোনো প্রত্যক্ষদর্শী ছিল না, ছয়দিন ধরে আলেয়ার কোনো খবর ছিল না, শুধু একটি জিডির সূত্র ধরে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করেন পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বেড়া-সাঁথিয়া সার্কেল) আশিস বিন হাসান।

এ নিয়ে গত ১১ নভেম্বর ‘পুলিশ কর্মকর্তার দক্ষতায় বেরিয়ে এলো ভয়ঙ্কর দেবর’ শিরোনামে এনটিভি অনলাইনে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

ওই ঘটনার ১১ দিনের মাথায় আরেকটি ‘ভয়ঙ্কর’ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করে পাবনা জেলা পুলিশ। ধরা পড়েন বন্ধুরূপী ভয়ঙ্কর এক খুনি। তাঁর নাম মামুন হোসেন। বাড়ি পাবনার সুজানগর উপজেলার উলট গ্রামে। গত ২০ সেপ্টেম্বর রাতে তিনি তাঁর কাছের বন্ধু ও কলেজের সহপাঠী রবিউল ইসলামকে কড়া ঘুমের ওষুধ মেশানো পানি খাইয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। এরপর ঘরের মধ্যে একাই লাশের জানাজা পড়েন মামুন। বন্ধুকে তাঁর শোয়ার চৌকির পাশে মেঝের মাটিতে কবর দেন। সেই রাতে তাহাজ্জুদের নামাজও পড়েন। ঘরের মধ্যে সেই কবরের পাশে অনেক দিন ঘুমিয়েছেন। রবিউলের বাপ-ভাইদের সঙ্গে তাঁর সন্ধানও করেন। পুলিশের দক্ষতায় প্রায় দুই মাস পর ধরা পড়েন রবিউল। স্বীকার করেন সব। এ নিয়ে ১৮ নভেম্বর  প্রকাশিত হয় ।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © banglarprotidin.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themebazarbanglaro4451