সখীপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি:
টাঙ্গাইলের সখীপুরে নার্সের অমানবিক নির্যাতনে নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া
গেছে। সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নার্স মুক্তি ও জরিনা আক্তারের অমানবিক
নির্যাতনে শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে জানান কামরুন্নাহার বেগম কামনা (৩০) নামের
এক গর্ভবতী মা। এ ঘটনায় শনিবার সখীপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই
গর্ভবতীর স্বামী রফিকুল ইসলাম । অভিযুক্ত নার্স মুক্তি ও জরিনা বেগমকে শো’কজ করা
হয়েছে।
গর্ভবতী কামরুন্নাহার অভিযোগ করেন, গত মঙ্গলবার কামরুন্নাহার বেগম কামনা
সন্তান প্রসব হওয়ার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়। সকাল ৯ টার দিকে
হাসপাতালে ডাক্তার আসার আগেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দুই নার্স মুক্তি আক্তার ও
জরিনা আক্তার জোরপূর্বক অপরেশন থিয়েটারে নিয়ে ওই গর্ভবতী মহিলার জরায়ূর মুখে
হাত ঢুকিয়ে বুকের উপর চেপে বসে বাচ্চা বের করার চেষ্টা করেন। দীর্ঘক্ষন চেষ্টার পরেও
বাচ্চা প্রসব না হওয়ায় অবশেষে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও)
ডা. শাহীনুর ইসলাম এসে রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন দেখে রোগীকে টাঙ্গাইল জেনারেল
হাসপাতালে রেফার্ড করেন। এতে নার্স মুক্তি ও জরিনা ক্ষিপ্ত হয়ে ওই গর্ভবর্তীকে অকথ্য
ভাষায় গালি গালাজ করে এবং তাকে টেনে হিঁচড়ে বের করে দেয়। পরে ওই গর্ভবতীকে
স্থানীয় লাইফ কেয়ার ক্লিনিকে নিয়ে দ্রুত সিজারিয়ান অপারেশন করালে তার অর্ধ-
গলিত মাথা বিশিষ্ট বাচ্চা প্রসব হয় এবং কয়েক মিনিট পরেই মৃত্যু হয়। প্রসূতী
কামরুন্নাহার বেগম আরো বলেন, সরকারি হাসপাতালের দুই নার্স মুক্তি ও জরিনা
প্রায় দুই ঘন্টা ধস্তাধস্তি করে আমার সন্তানকে মেরে ফেলেছে। আমি তাদের বিচার
চাই। এ ঘটনায় শনিবার সখীপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই গর্ভবতীর
স্বামী রফিকুল ইসলাম।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ওই দুই নার্সের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা এব্যপারে
কোন কথা বলতে রাজি হননি। আবাসিক মেডিকেলে অফিসার মো. শাহীনুর ইসলাম
বলেন, ওই গৃহবধূর নরমাল ডেলিভারি সম্ভব নয় বলে তাকে আমি টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা
মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালে রেফার্র্ড করি। তবে আমার অনুপস্থিতিতে নার্স
কি করেছে তা আমি জানি না।
স্থানীয় লাইফ কেয়ার ক্লিনিকে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. ডি.আই
রেজাউল করিম বলেন, আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওই গর্ভবতীকে ভর্তি করে সিজারিয়ানের
মাধ্যমে অর্ধ গলানো মাথা নিয়ে একটি ছেলে সন্তান জন্মের কিছুক্ষণ পরেই মারা যায়।
তিনি আরো বলেন, বাচ্চার সাইজ বড় থাকায় নরমাল ডেলিভারীর চেষ্টার কারণে বাচ্চাটির
মাথায় প্রচন্ড আঘাত লাগে।
ওই গৃহবধুর স্বামী মো রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার স্ত্রীর উপর নার্সরা অমানবিক
নির্যাতন করেছে। যে কারণে আমার বাচ্চার মৃত্যু হয়েছে। তিনি এর দৃষ্টান্ত মূলক
শাস্তি দাবি করেন।
সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা রাফিউল করিম খাঁন বলেন, এ ঘটনায় শনিবার
অভিযুক্ত দুই নার্স মুক্তি ও জরিনাকে শো’কজ করা হয়েছে। আগামী তিন
কার্যদিবসের মধ্যে এর জবাব চাওয়া হয়েছে।
সখীপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাকছুদুল আলম বলেন, লিখিত অভিযোগ
পেয়েছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।