বাসস,
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ সম্পূর্ণরূপে নির্মূলের মাধ্যমে শোষণমুক্ত সমাজ-প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে বাঙালি জাতিকে আবারও ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
আজ রোববার জাতীয় সংসদের ১৯তম ও ২০১৮ সালের প্রথম অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে এ আহবান জানান রাষ্ট্রপতি। সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলের নেতা রওশন এরশাদ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় সংসদ দেশের জনগণের আশা-আকাঙ্খার কেন্দ্রবিন্দু উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বর্তমান সরকার সার্বিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অভূতপূর্ব গতিশীলতা সঞ্চারণের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও আধুনিক দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ঐকান্তিক প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, পরমতসহিষ্ণুতা, মানবাধিকার ও আইনের শাসন সুসংহতকরণ এবং জাতির অগ্রযাত্রার স্বপ্ন ও আকাঙ্খার সফল বাস্তবায়নে সরকারি দলের পাশাপাশি বিরোধীদলকেও বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে হবে।’
আবদুল হামিদ জনগণের প্রত্যাশা পূরণের প্রতিষ্ঠান এই মহান জাতীয় সংসদে সরকারি ও বিরোধী দলসহ সবাইকে সম্মিলিতভাবে যথাযথ ও কার্যকর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি অর্জনের যে পথ জাতি পরিক্রমণ করছে, তা দেশকে বহুদূর এগিয়ে নিয়ে যাবে। বিশ্বসভায় ইতিমধ্যে অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও সামাজিক অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি অর্জনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ একটি সম্মানজনক অবস্থানে সমাসীন হয়েছে এবং অচিরেই একটি উন্নত দেশ হিসেবে আপন মহিমায় উদ্ভাসিত হবে।’
রাষ্ট্রপতি জানান, ‘রূপকল্প-২০২১’-এর ভিত্তিতে প্রণীত প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ও ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আওতায় বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাও বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তিতে বাংলাদেশ মধ্য-আয়ের দেশে পরিণত হবে এবং ২০৪১ সালে বিশ্বসভায় একটি উন্নত দেশের মর্যাদায় অভিষিক্ত হবে, এটাই জাতির প্রত্যাশা। তিনি দৃঢ়ভাবে আশাবাদী, সুশাসন ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপায়ন এবং সমাজের সব স্তরে প্রত্যক্ষ জন-সম্পৃক্তির মধ্য দিয়ে সরকার নির্ধারিত লক্ষ্যসমূহ অর্জনসহ একটি আদর্শ সমাজভিত্তিক কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠনে সক্ষম হবে।’
ভাষণের শুরুতে রাষ্ট্রপতি স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন। তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অমর শহিদ, চার জাতীয় নেতা, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।
এছাড়া তিনি গণতান্ত্রিক সংগ্রাম, ভাষা, সংস্কৃতি ও মর্যাদা সমুন্নত রাখার লড়াইয়ে আত্মত্যাগকারী শহীদদেরও স্মরণ করেন। পাশাপাশি বাঙালির গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার তিন মহান পুরুষ – শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তাঁর ১৫৭ পৃষ্ঠার ভাষণে সরকারের ৯ বছর শাসনামলে জাতীয় উন্নয়নের সব ক্ষেত্রে অর্জিত সাফল্য বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন। পাশাপাশি ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে সরকারের নেয়া বিভিন্ন কার্যকর পদক্ষেপ বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন ।
আবদুল হামিদ বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একাত্তরের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণকে ইউনেস্কো বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ইন্টারন্যাশনাল মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্ট্রারে অন্তর্ভুক্ত করেছে।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘কালোত্তীর্ণ এই ভাষণটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ন্যায় এবং মুক্তির পথে উজ্জীবিত করবে। এ স্বীকৃতি অর্জনের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলতর হয়েছে। দেশ ও জাতির জন্য এ এক বিরল সম্মান।’ ঐতিহাসিক এই অর্জনের জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী এবং দেশের জনগণকে ধন্যবাদ জানান।