জাকির হেসেন, পীরগঞ্জ (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি ঃ ৭১’র
স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়ে জয়ী হলেও জীবনযুদ্ধে পরাজিত রয়েই
গেছেন ঠাকুরগাওয়ের পীরগঞ্জের আব্দুল মজিদ ভুইয়া। অভাব অনটন এখন
তার নিত্য সঙ্গী। চা-খিলি পানের দোকান করে দিনে ঠিকমত একবেলা
খাবার জুটে না তার ভাগ্যে। পাননি মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতিও। কর্মের
স্বীকৃতি পেতে ঘুরছেন স্থানীয় এমপিসহ রাজনৈতিক নেতাদের
দ্বাড়ে দ্বাড়ে কিন্তু কে শুনে অসহায় এ মুক্তিযোদ্ধার কথা। বিভিন্ন
সুত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালিন সময়ে
মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করার অপরাধে পীরগঞ্জ উপজেলার রঘুনাথপুর
মহল্লার ষ্টেশনপাড়ার আব্দুল মজিদ ভূঁইয়ার ভাই আব্দুর ওহিদ ও রফিক কে
হত্যা করে পাক হানাদার বাহিনী। এরপর ভাই হত্যার প্রতিশোধ নিতে
এবং শত্রুর হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে তৎকালীন এমসিএ ইকরামুল হক
এর সহযোগীতায় ডালটা কোম্পানীতে ইপিআর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে
প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন আব্দুল মজিদ ভূঁইয়া।
যুদ্ধ করেন বিভিন্ন স্থানে। দেশ স্বাধীন হয়। ভাই হারানোর শোকে
কেটে যায় কয়েক বছর। এক পর্যায়ে তাগিদ অনুভব করেন নিজেকে
মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি লাভের। ১৯৯৮ইং সালে তৎকালীন
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কামান্ডার ইকরামুল হকের সুপারিশ নিয়ে সাবেক
এমসিএ ইকরামুল হকের সহায়তায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ে আবেদন
করেন। ২০১৩ সালে মন্ত্রণালয় থেকে তার নামে গেজেট প্রকাশ করা হয়।
যাহার নম্বর- ১৬৪৩। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পীরগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এর
ভোটর তালিকাতেও তার নাম অন্তর্ভূক্ত হয়। ২০১৪ সালে পীরগঞ্জ
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নির্বাচনে ভোটও দেন তিনি। যাহার ভোটার নম্বর
২৬০। কিন্তু নানা আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে ভাতা চালু হয়নি।
সম্প্রতি সময়ে উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই
কার্যক্রম পরিচালিত হয়। কিন্তু এলাকার একটি বিশেষ মহলের ষড়যন্ত্রের
শিকার হয়ে যাচাই বাছাইয়ের পর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সুপারিশের
চুড়ান্ত তালিকায় নাম অর্ন্তভূক্ত হয়নি তার। এদিকে স্বাধীনতার পর
থেকে কখনো কাঠ মিস্ত্রি আবার কখনো চায়ের দোকান করে সংসার
চালাতে থাকেন তিনি। আগে শরীরিক সক্ষ্যমতা থাকলেও কয়েক বছর ধরে
তিনি রয়েছেন ভাটা টানে। তেমন কোন কাজ কর্ম করতে পারছেন না।
এখন ছোট্ট একটি চা-পানের দোকানই তার পরিবারে একমাত্র ভরসা।
সেই দোকান করে যা পান তা দিয়ে স্ত্রী সন্তান নিয়ে কোন মতে এক
বেলা খেয়ে দিন কাটছে তার। অভাব আনটন যেন নিত্য সঙ্গী তার।
একদিকে নিজে যুদ্ধে অংশ নিয়েও পাচ্ছেন না মুক্তিযোদ্ধার
স্বীকৃতি। অন্যদিকে দুই ভাই শহিদ হলেও পাননি শহীদ পরিবারের
মর্যাদা। সব মিলিয়ে হতাশায় দিন কাটছে তার। মজিদের দাবী জীবনের
শেষ পর্যায়ে এসে কিছুই চাননা তিনি। শুধু মৃত্যুর আগে জেনে
যেতে চান নিজের মুক্তিযোদ্ধার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি।