বাংলার প্রতিদিন ডটকম ঃ-
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘আমি যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত আছি। আমাকে জেল বা সাজার ভয় দেখিয়ে কোনো লাভ হবে না। আমি মাথা নত করব না। জনগণের অধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবি থেকে পিছু হটব না।’
আজ বুধবার রাজধানীর গুলশানে নিজের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বিকেল ৫টার দিকে ওই সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য আছে। ওই মামলার প্রধান আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। এর আগের দিন আজ সংবাদ সম্মেলন করলেন তিনি।
প্রায় ২৫ মিনিটের বক্তব্যে দেশের পরিস্থিতি, রাজনৈতিক অবস্থা, দলের পরিস্থিতির পাশাপাশি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা নিয়ে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন বিএনপির চেয়ারপারসন।
‘আদালতকে ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে’
সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমাকে রাজনীতির ময়দান ও নির্বাচন থেকে দূরে রাখা এবং জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য আদালতকে ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। কিন্তু তাতেই একদলীয় শাসন কায়েম ও খালি মাঠে গোল দেয়ার খায়েশ পূরণ হবে বলে আমি মনে করি না।’
পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান ও বিগত ১/১১-এর সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে খালেদা জিয়া বলেন, স্বৈরশাসক আইয়ুব খান এক সময় মিথ্যা অভিযোগে মামলা করে এ দেশের জনপ্রিয় রাজনীতিবিদের ‘এব্ডো’ অর্থাৎ নির্বাচন ও রাজনীতিতে অংশগ্রহণের অযোগ্য ঘোষণা করেছিল। ইতিহাস সাক্ষী, সেই ‘এব্ডো’ টেকে নাই। গণঅভ্যুত্থানে আইয়ুবের পতন ঘটেছিল।’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘ফখরুদ্দীন-মঈনুদ্দিনের অবৈধ সরকার রাজনীতিবিদদের হেয় করা এবং দীর্ঘদিন ক্ষমতায় টিকে থাকার উদ্দেশ্যে আমাকে বিদেশে চলে যেতে বলা হয়েছিল, আমি তাদের কথায় রাজি না হয়ে আপনাদের ছেড়ে দেশ ছেড়ে যাইনি। যার জন্য আমার এবং আমার সন্তানদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছিল। আমাকে এক বছর নয় দিন কারারুদ্ধ করে রেখেছিল। আমার দুই সন্তানকেও কারারুদ্ধ করে নির্যাতন করেছিল। সেই অবৈধ সরকার আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছিল। সেই অবৈধ সরকারের সঙ্গে গোপন আঁতাত করে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনাসহ তাদের দলের নেতা-কর্মীদের হাজার হাজার মামলা তুলে নিয়েছে। আর আমিসহ আমাদের নেতা-কর্মীদের সেই সব মামলায় হেনস্তা করা হচ্ছে। যোগ হয়েছে হাজারো নতুন নতুন মিথ্যা মামলা।’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘জরুরি সরকারের সেসব মামলায় আওয়ামী লীগের অনেকের সাজা হয়েছিল। দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত সেই আসামিরাও বিনাভোটে এমপি-মন্ত্রী হয়ে এখন আমার বিরুদ্ধে হুংকার দিচ্ছে। তারা ক্ষমতায় থাকবেন আর আমাদের বিরুদ্ধে শুধু অবৈধ সরকারের দেয়া মামলা চলবে। এই অন্যায় বাংলাদেশ মেনে নেবে না।’
‘তিন-তিনবার তারা আমাকে প্রধানমন্ত্রী করেছেন’
বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, ‘আমার প্রিয় দেশবাসী আমাকে তার প্রতিদান দিয়েছে অপরিমেয় ভালোবাসায়। প্রতিবারের নির্বাচনে পাঁচটি করে আসনে পর্যন্ত তারা আমাকে নির্বাচিত করেছেন। কোনো নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে আজ পর্যন্ত আমি পরাজিত হইনি। জনগণের সমর্থনে বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হবার গৌরব আমি অর্জন করেছি। তিন-তিনবার তাঁরা আমাকে প্রধানমন্ত্রী করেছেন। এখনো আমি দেশের যে প্রান্তেই যাই উচ্ছ্বসিত জনজোয়ারে আমি তাঁদের ভালোবাসায় অভিষিক্ত হই। আমি রাষ্ট্র পরিচালনায় কিংবা বিরোধী দলে যেখানেই থাকি এই জনগণ প্রতিটি সুখে-দুঃখে, শান্তিতে-সংগ্রামে আমার সাথী হন। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘রাজনীতির অঙ্গনে পা রাখার পর থেকে আমি জনগণকে যতটা সময় দিয়েছি, পরিবার ও সন্তানদের ততটা সময় দিতে পারিনি। কারাগারে থাকতে আমি আমার মাকে হারিয়েছি। অফিসে অবরুদ্ধ থাকা অবস্থায় আমি একটি সন্তান হারিয়েছি। আরেকটি সন্তান নির্যাতনে পঙ্গু হয়ে দূরদেশে এখনো চিকিৎসাধীন। আমার এই স্বজনহীন জীবনেও দেশবাসীই আমার স্বজন। আল্লাহ্ আমার একমাত্র ভরসা। আমি যেমন থাকি, যেখানেই থাকি যতক্ষণ বেঁচে থাকব দেশবাসীকে ছেড়ে যাব না।’
‘শাসক মহল আমাদের চেয়েও বেশি অস্থির’
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেন, ‘আপনারা জানেন, আমার বিরুদ্ধে তেমনি এক মিথ্যা মামলায় আগামীকাল রায় হবে। এই রায়কে কেন্দ্র করে শাসক মহল আমাদের চেয়ে বেশি অস্থির ও ভীত হয়ে জনগণের চলাচলের অধিকার, প্রতিবাদের অধিকার, সভা-মিছিলের সাংবিধানিক অধিকার প্রশাসনিক নির্দেশে বন্ধ করা হচ্ছে। ভিত্তিহীন ও মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিবাদের ভয়ে ভিত হয়ে এ হীন পথ খুঁজে নিয়েছে সরকার। সারা দেশে তারা বিভীষিকা ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। জনগণের প্রতিবাদের সম্ভাবনাকে তারা এতটাই ভয় পায়!’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘আদালত রায় দেয়ার বহু আগে থেকেই শাসক মহল চিৎকার করে বলে বেড়াচ্ছে, আমার জেল হবে। যেন বিচারক নন, ক্ষমতাসীনরাই রায় ঠিক করে দিচ্ছে। প্রধান বিচারপতিকে চাপের মুখে পদত্যাগ ও দেশত্যাগে বাধ্য করার পর কোনো আদালত শাসকদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ন্যায়বিচার ও ইনসাফ কায়েম করতে সাহস পাবে কি না, তা নিয়ে সকলেরই সন্দেহ আছে। তারপরও দেশবাসীর উদ্দেশে সগৌরবে জানাতে চাই যে, আপনাদের খালেদা জিয়া কোনো অন্যায় করেনি। কোনো দুর্নীতি আমি করিনি।