প্লাবন শুভ, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি:
গত বছরের স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় আমনসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে
এবার দিনাজপুরের ফুলবাড়ী চাষিরা ভূট্টা চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। আবহাওয়া
অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের
বন্যায় আমনসহ বিভিন্ন ফসল ব্যাপকভাবে নষ্ট হয়ে যায়। সেই ক্ষতি সমন্বয় করার
জন্য উপজেলার পৌর এলাকাসহ সাতটি ইউনিয়নে ২হাজার ৬৭৫হেক্টর জমিতে
ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৩হাজার
২৭২মেট্রিক টন। তবে গত বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত চাষ হয়েছে ২হাজার
৬৫০হেক্টরে।
চাষিরা বলেন, গত বছরের আগস্ট মাসে বন্যায় বিভিন্ন ফসল পানিতে ডুবে
পচে যায়। অর্থ ও চারার অভাবে অনেক কৃষক আমন রোপন করতে পারেননি। তাই
আমনের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবার কৃষকরা ভুট্টা চাষে ঝুঁকে পড়েছেন।
উপজেলার শিবনগর ইউনিয়নের গঙ্গাপ্রসাদ গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম
বলেন, গত বছরের বন্যায় দুই বিঘা জমির আমন নষ্ট হয়ে গেছে। ওই জমিতে ভুট্টা
চাষ করা হয়েছে। ভুট্টা চাষে বেশি টাকা লাগে না। কম খরচে ভালো ফলন ও দাম
পাওয়া যায়। ফলন ভালো হওয়ায় তিনি ভীষণ খুশি।
রাজারামপুর ঘাটপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল গণি বলেন, বন্যার পানিতে
তিন বিঘা জমির আমন ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। পানি সরে যাওয়ার পর বীজতলাসহ
অর্থের অভাবে সেই জমি পড়ে থাকে। কিন্তু পরে সেই জমিতে ভুট্টা চাষ করা
হয়েছে। আবাদ ভালো হয়েছে।
শিবপুর গ্রামের কৃষক আনোয়ার সাদাত বলেন, বন্যার পানির তোড়ে পাঁচ
বিঘা জমিতে লাগানো আমন ক্ষেত পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। পরে দুই বিঘা
জমিতে দ্বিতীয় দফায় আমন চাষ করা হয়। কিন্তু বীজতলার অভাবে অন্য তিনবিঘা
জমিতে আমন চাষ করা যায়নি। তবে ওই জমিতে ভুট্টা চাষ করা হয়েছে।
খয়েরবাড়ি জমিদারপাড়া গ্রামের কৃষক সুখিল চৌধুরী বলেন, ভুট্টা চাষে
সেচ, সার ও কীটনাশক তেমন প্রয়োজন হয় না। ভুট্টার গাছ জ্বালানি হিসেবে
ব্যবহার করা যায়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এটিএম হামীম আশরাফ বলেন,
অন্যান্য ফসলের তুলনায় ভুট্টা লাভজনক একটি ফসল। প্রতি হেক্টর জমিতে ৮দশমিক ৫
থেকে ৮দশমিক ৯ মেট্রিক টন পর্যন্ত ভুট্টা উৎপাদন হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও
পোকামাকড়ের আক্রমণ না হলে চলতি মৌসুমে আশানুরূপ ফলনের সম্ভাবনা
রয়েছে।