গোলাম সারোয়ার নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর খনিজ সম্পদ দেশের উত্তরাঞ্চলে ভারী শিল্পায়নে সম্ভাবনার হাতছানি দি”েছ। প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা, চুনা পাথর ও চিনামাটির সন্ধান পাওয়ায় আশায় বুক বাঁধছেন ¯’ানীয় শিল্পোদ্যোক্তারা। ব্যবসায়ীরা বলছেন- কেবল যাতায়াত ব্যব¯’ার উন্নয়ন আর বিনিয়োগ বাড়ানো গেলেই পুরো উত্তরাঞ্চল হতে পারে খনিজ সম্পদ আহরোনের একটি বড় ক্ষেত্র। পাশাপাশি গড়ে তোলা যেতে পারে শিল্প জোন।
ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর (জিএসবি) সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬২ সাল থেকে স্বাধীনতার আগে-পরে উত্তরাঞ্চলের অন্তত ৫ থেকে ৭ টি ¯’ানে খনিজ সম্পদের সন্ধানে প্রাথমিক জরিপ চালানো হয়। জরিপের পর কূপ খনন করে নওগাঁর পতœীতলায় চিনামাটি, জয়পুরহাটের জামালগঞ্জে কয়লা ও সব শেষ চলতি বছরেই বদলগাছী উপজেলার তাজপুরে দেশের সবচেয়ে বড় ও উৎকৃষ্ট চুনা পাথরের সন্ধান পাওয়া যায়।
জিএসবির মহা পরিচালক ড. নেহাল উদ্দিন জানান, জামালগঞ্জ খনি দেশের প্রথম ও সবচেয়ে বড় কয়লা খনি। জয়পুরহাট ও নওগাঁ জেলার প্রায় ১২ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে এ খনির বিস্তৃতি। খনিতে প্রায় ১ হাজার ৫০ বিলিয়ন টন কয়লার মজুদ রয়েছে। ধারনা করা হ”েছ খনিতে পাওয়া যাবে মিথেন গাসও। গ্যাসের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলছে। আশা করা যা”েছ জামালগঞ্জ খনি থেকে প্রাপ্ত গ্যাস দেশের জ্বালানী খাতের সাথে একটি বড় অংশ যোগ হবে।
এদিকে নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার তাজপুরে চুনা পাথরের খনি আবিষ্কারের পর শেষ হয়েছে প্রথম ধাপের কাজ। তবে মজুদের পরিমান নির্ণয়ে চলতি অর্থ বছরের সেপ্টেম্বর নাগাদ আবারো শুরু হবে দ্বীতিয় ধাপের কাজ। এছাড়া প্রায় ৪ হাজার ফুট গভীর করে কয়লার সন্ধানও করা হবে এই খানিতে।
জিএসবির উপ পরিচালক মহিরুল ইসলাম জানান, তাজপুরে কয়লা পাওয়া গেলে এটি হবে দেশের ৬ষ্ঠ কয়লা খনি। এর আগে যেসব কয়লা খনি আবিষ্কার হয়েছে সেগুলো জিএসবির গবেষকরাই আবিষ্কার করেছেন। একই সাথে নতুন আরো একটি খনিজ সম্পদ এলাকার সন্ধান পাওয়ার কথা জানান তিনি।
মহিরুল ইসলাম জানান, নওগাঁর মহাদেবপুর ও সাপাহার উপজেলার মাঝামাঝি একটি বড় এলাকা জুড়ে জরিপ চালিয়ে মাটির নিচে মূল্যবান সম্পদ পাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। আরো নিশ্চিত হতে চলতি অর্থ বছরের অক্টোর নাগাদ কাজ শুরু করবে জিএসবি।
এদিকে একে-একে বেশ কয়েকটি খনিজ সম্পদ প্রাপ্তি ও সম্ভাবনাকে আশির্বাদ হিসেবে দেখছেন ¯’ানীয় ব্যবসায়ীরা।
নওগাঁ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির সভাপতি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী দ্বীন জানান, তুলনা মূলক ভাবে অনেকটা পিছিয়ে চলছে নওগাঁ, জয়পুরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নাটোরসহ আশেপাশের জেলার ব্যবসা-বানিজ্য। গ্যাস ও পর্যাপ্ত বিদ্যুতের অভাবে এ অঞ্চলের ক্ষুদ্র ও মাঝাড়ি শিল্প গুলোও দিন-দিন মুখ থুবরে পড়ছে। উৎপাদন ব্যায় বেশী হওয়ায় অন্যান্য এলাকার তৈরী পণ্যের দামের সাথে পাল্লাদিয়ে চালানো যা”েছ না। কিন্তু প্রাকৃতিক খনিজ বিশেষ করে মিথেন গ্যাস প্রাপ্তির খবরে ব্যবসায়ীরা আগামীতে উত্তরাঞ্চলে ভারী শিল্পায়নের স্বপ্ন দেখছেন।
এ বিষয়ে নওগাঁর ¯’ানীয় উন্নয়ন পরামর্শক অবসর প্রাপ্ত মেজর আব্দুল হাকিম বলেন, যাতায়াত ব্যব¯’াসহ এলাকার কিছু অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করানো গেলে উত্তরাঞ্চলের জেলা নওগাঁ-জয়পুরহাট হতে পারে খনিজ সম্পদ আহরনের একটি বড় ক্ষেত্র। দক্ষিনাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলের মর্ধবর্তী হওয়ায় নওগাঁর খনিজ সম্পদগুলো খুবই সম্ভাবনাময়ী বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এছাড়া তিনি আরো বলেন, কৃষি ও পরিবেশ রক্ষা কৌশল অবলম্বন করে এই অঞ্চলে একটি পূর্নাঙ্গ শিল্প কেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া যেতে পারে। #