অনলাইন ডেস্কঃ-
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বর্তমান সরকার পুলিশের ওপর ভর করে ক্ষমতায় আছে। পুলিশকে যে পরিমাণে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে তাতে মনে হচ্ছে পুলিশের হাতেই এখন গণতন্ত্রের মৃত্যু পরোয়ানা।
আজ শনিবার বিকেলে দলের নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, বর্তমানে দেশের এমন এক অবস্থা যাতে মনে হচ্ছে কারো মৃত্যুর পর জানাজা, কুলখানি ও রুহের মাগফিরাত কামনা করতে গেলেও পুলিশের অনুমতি নেওয়া লাগবে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিএনপির আজকের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে সরকার অশান্তির যে আগুন জালাল সেটা আপনারা প্রত্যক্ষ করেছেন। সরকারের চণ্ডনীতির কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বেপরোয়া সন্ত্রাসীদের মতো আচরণ করছে। তারা হিতাহিত বিবেক বিবেচনাহীন হয়ে বিরোধী দলের ওপর হামলে পড়ছে। এরা অবৈধ ক্ষমতাসীনদের চাহিদা মেটাতে জনগণকে পরাধীনতার সুদৃঢ় বন্ধনে বন্দি করে রাখার দায়িত্ব নিয়েছে।
রিজভী বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে গত ২২ ফেব্রুয়ারি বিএনপি ঘোষিত আজকের শান্তিপূর্ণ কালো পতাকা প্রদর্শনের কর্মসূচির ওপর এক কদর্য হিংস্র আক্রমণ চালিয়েছে পুলিশ। পুলিশের গুণ্ডামিতে ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে বিএনপি নেতাকর্মীদের। ফুটপাথে শান্তিপূর্ণভাবে দাঁড়াতে গেলে পুলিশ আচমকা তাদের ওপর চড়াও হয়ে নেতাকর্মীদের পাইকারিহারে নির্দয়ভাবে পেটাতে পেটাতে পুলিশভ্যানে তুলতে শুরু করে। আহতদের আর্তচিৎকারে তৃষ্ণায় পানি চাইলে পুলিশ অশ্রাব্য গালিগালাজ দিতে থাকে। পুলিশ নেতাকর্মীদের লাঠিপেটা করতে করতে আমাদের কার্যালয়ের গেটের মধ্যে ঢুকে পড়ে এবং সেখান থেকে একজনকে ধরে নিয়ে রাস্তায় ফেলে গলায় বুটজুতা দিয়ে ঠেসে ধরে। পুলিশ অমানবিকতার এক জান্তব হিংস্রতা প্রদর্শন করেছে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর। পুলিশী সহিংসতায় দলের মহিলা নেতাকর্মীসহ পুরুষ নেতাকর্মীদেরও রক্তাক্ত করা হয়েছে। আহত নেতাকর্মীদের চিকিৎসার জন্য নিতে আসা সাতটি অ্যাম্বুলেন্সও ফিরিয়ে দেয় পুলিশ। দলের যুগ্ম মহাসচিব ও সাবেক এমপি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের সাথে পুলিশ যে নৃশংস আচরণ করেছে তা মনুষ্যত্বহীনতা। তার ঘাড় জাপটে ধরে শার্টের কলার ও বুকে পিঠের কাপড় টেনে সিএনজিতে তোলা হয়। একজন শিক্ষিত ও মননশীল রাজনীতিবিদের সাথে পুলিশের এই আচরণে আমাদের সেই অভিযোগটিই প্রমাণিত হলো যে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যুবলীগ-ছাত্রলীগ দিয়ে ভরানো হয়েছে। এমনকি দায়িত্বরত সাংবাদিকদেরও অশ্লীল গালিগালাজ ও শারীরিকভাবে হেনস্তা করা করেছে পুলিশ। আমি দলের পক্ষ থেকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।’
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘এই গণতন্ত্রবিনাশী ভোটারবিহীন সরকার বিরোধীদলের হাত-পা বেঁধে গণতন্ত্রকে বঙ্গোপসাগরে ডুবিয়ে দিতেই পুলিশকে দিয়ে পাণ্ডামী করাচ্ছে। তাই বিরোধী দলের আওয়াজ শুনলেই তাদের বুকে কম্পন সৃষ্টি হয়। গণতন্ত্র ও সংবিধানকে কেড়ে নিয়ে একতরফা রাজত্ব কায়েম করতেই বিএনপিসহ বিরোধী দলের কর্মসূচির ওপর ঝাঁপিড়ে পড়ছে। অত্যাচারী রাষ্ট্রে নিষ্ঠুর বলপ্রয়োগের মাধ্যমে প্রতিবাদ দমন করার জন্যই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের আচরণে মনে হয়, বিএনপির নেতাকর্মীদের কেউ মারা গেলে তাদের জানাজা, দাফন ও আত্মার মাগফিরাতের জন্য মিলাদ করতে গেলেও পুলিশের অনুমতি লাগবে। পুলিশের হাতে এখন গণতন্ত্রের মৃত্যু পরোয়ানা। পুলিশী আক্রমণে বিএনপি নেতাকর্মীদের অবস্থা যেন আদিম জিঘাংসার বহিঃপ্রকাশ, অবিশ্বাস্য ও মর্মস্পর্শী। আবারও আমি বিএনপি নেতাকর্মীদের জীবনপ্রবাহ রুদ্ধ করে দেওয়ার মতো পুলিশের আক্রমণের তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানাচ্ছি।’
কর্মসূচি: রিজভী বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে এবং আজকে বিএনপির শান্তিপূর্ণ কালো পতাকা প্রদর্শন কর্মসূচির ওপর পুলিশের ন্যক্কারজনক হামলার প্রতিবাদে আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ সোমবার বিএনপির উদ্যোগে ঢাকা মহানগরীর থানায় থানায় এবং দেশব্যাপী জেলা সদর ও মহানগরে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক বেলাল আহমদ, তাইফুল ইসলাম টিপু, নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।