বাংলার প্রতিদিন ডটকম ঃ-
জনপ্রিয় লেখক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের মাথা, পিঠ ও হাতে ছুরিকাঘাত করা হলেও সেগুলো ‘হেভি ইনজুরি’ নয়, মূলত চামড়ার ওপরই বেশিরভাগ আঘাত লেগেছে বলে জানিয়েছে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) চিকিৎসা বোর্ড।
পাঁচ সদস্যের চিকিৎসা বোর্ডের প্রধান মেজর মুন্সী মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘উনার (জাফর ইকবাল) মাথায় ছোট ছোট চারটা আঘাত, পিঠের ওপরের দিকে একটা আঘাত এবং বাঁ হাতে একটি আঘাত রয়েছে। যেগুলো ভালোমতো চিকিৎসা প্রদান, ড্রেসিং ও অন্যান্য চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তিনি সজ্ঞান, সচেতন ও আশঙ্কামুক্ত আছেন।
চিকিৎসা বোর্ডের প্রধান আরো জানান, জাফর ইকবালের ওপর আঘাত হেভি ইনজুরি নয়। মূলত চামড়ার ওপর আঘাত লেগেছে। এরপরও তাঁর সম্পূর্ণভাবে সুস্থ হয়ে উঠতে কয়েক দিন সময় লেগে যাবে। তাঁর মানসিক অবস্থাও ভালো আছে বলে জানান তিনি।
‘চিকিৎসার কারণে এখনই বিদেশে নেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। সুপারিশও করছি না। তবে পরবর্তী সময়ে যদি কোনো সময় প্রয়োজন মনে হয়, তখন হয়তো সেটি বলা যাবে,’ যোগ করেন মেজর মুজিবুর। তিনি আরো জানান, আজ সকাল থেকে জাফর ইকবাল পানিজাতীয় জিনিস খেতে পারছেন। পেটে কোনো আঘাত নেই।
আজ রোববার বেলা সোয়া ১১টায় সিএমএইচের প্রশাসনিক ভবনে জাফর ইকবালের চিকিৎসার জন্য গঠিত বোর্ডের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানানো হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের একটি উৎসব ছিল। সেই উৎসবে অংশ নিয়ে অন্যদের সঙ্গে মুক্তমঞ্চে বসে ছিলেন মুহম্মদ জাফর ইকবাল। এক যুবক হঠাৎ পেছন থেকে তাঁর মাথায় ছুরিকাঘাত করেন। এরপর তাঁকে নেওয়া হয় সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। রাতেই তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা সিএমএইচে নিয়ে আসা হয়। রাতে আন্তঃবাহিনী সংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, আজ রোববার ১১টায় জাফর ইকবালের শারীরিক অবস্থা নিয়ে ব্রিফ করা হবে।
ব্রিফিংয়ে মেজর মুজিবুর জানান, ‘উনি (জাফর ইকবাল) রাত ১১টা ৫৮ মিনিটে সিএমএইচে পৌঁছান। এবং তাৎক্ষণিকভাবে আমরা সব ধরনের বিশেষজ্ঞ সিএমএইচে হাজির ছিলাম। আমরা উনার সব ধরনের খবর রাখছিলাম। উনার সঙ্গে দুজন ডাক্তার ছিলেন। সিলেট থেকে উনারা সঙ্গে এসেছিলেন। এয়ারপোর্টের হেলিপেড থেকেই উনাকে আমরা সঙ্গে করে নিয়ে আসি এবং উনাকে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসা প্রদান করা হয়।’
গতকাল শনিবার রাতে হাসপাতালে ২০-২৫ জন বিশেষজ্ঞ ছিলেন। তার মধ্যে পাঁচজন জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকের সমন্বয়ে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়।
ব্রিফিংয়ে আরো জানানো হয়, জাফর ইকবালকে আজ সকাল থেকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। আমরা কাউকে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না।
জাফর ইকবালের ওপর হামলাকারীর নাম ফয়জুর রহমান (২৪)। তিনি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার কালিয়াপন গ্রামের বাসিন্দা। পরিবারের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পাশে কুমারগাঁওয়ের শেখপাড়ায় থাকেন ফয়জুর। তিনি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করেছেন। ফয়জুর মঈন কম্পিউটার নামে একটি দোকানে কাজ করেন।