বাংলার প্রতিদিন ডটকম ঃ-
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুর্ঘটনার শিকার ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজের আহত যাত্রী শাহরিন আহমেদ দুই সপ্তাহের মধ্যেই সেড়ে উঠবেন বলে আশা করছেন চিকিৎসকরা।
শাহরিনের শারীরিক অবস্থা নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিট কর্তৃপক্ষ।
বার্ন ইউনিটের সমন্বয়কারী অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন সাংবাদিকদের জানান, শরীরের ৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে শাহরিনের। পায়েও আঘাত রয়েছে তার। তাকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে। তবে তিনি আশঙ্কামুক্ত। তিনি ট্রমার মধ্যে রয়েছেন, কাউন্সেলিং করা হবে তাকে।
সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে শাহরিনকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেওয়া সম্ভব হবে— এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে ডা. সেন জানান, আগামী রোববার তার চিকিৎসার জন্য মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শাহরিনের বড় ভাই লে. কর্নেল সরফরাজ আহমেদ বলেন, দুর্ঘটনাকবলিত বিমানের সামনের অংশে থাকা যাত্রীরাই প্রাণে বেঁচেছেন বলে শাহরিন তাকে জানিয়েছেন। ওই সময় নেপালের উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে উদ্ধার করেছেন তাদের।
সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব সিরাজুল হক খান, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব ফয়েজ আহম্মেদসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। শাহরিন উত্তরা স্কলাস্টিকা স্কুলের জুনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার। তার মা ফেরদৌসি মোস্তাক এবং মামা ডা. সাইফুদ্দিন সঙ্গে ছিলেন এ সময়।
এর আগে বিমান বিধ্বস্তের ভয়ঙ্কর স্মৃতি নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে দেশে ফেরেন শাহরিন। বিকেল ৩টা ৪৮ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তিনি।
শাহরিন আহমেদকে বিমানবন্দর থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন তিনি।
এছাড়া ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় আহত অপর তিনজনকে শুক্রবার দেশে আনা হবে। কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাশফি বিনতে শামস সাংবাদিকদের বৃহস্পতিবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। শুক্রবার যারা আসবেন তারা হলেন- মেহেদি হাসান মাসুম, তার স্ত্রী সৈয়দা কামরুন নাহার স্বর্ণা এবং নিহত আলোকচিত্রী এফএই প্রিয়কের স্ত্রী আলমুন নাহার অ্যানী।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নেপালি চিকিৎসকরা ১০ বাংলাদেশির মধ্যে ছয়জনকে ছাড়পত্র দিয়েছেন। দুজনকে এখনও আইসিইউতে রাখা হয়েছে, একজনকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বার্ন ইউনিটে। আর একজনের ছাড়পত্র এখনও মেলেনি; তার পরিবার তাকে দিল্লিতে নিয়ে যেতে চাইছে।
এদিকে ওই ঘটনায় আহত ডা. রেজওয়ানুল হক শাওনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়েছে। বুধবার রাতে নেপাল থেকে তাকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়েছে।
গত ১২ মার্চ ঢাকা থেকে যাত্রা শুরু করা ইউএস-বাংলার একটি উড়োজাহাজ কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হয়। এতে ৭১ আরোহীর মধ্যে ৫১ জনের মৃত্যু হয়। তাদের মধ্যে চার ক্রুসহ ২৬ জন ছিলেন বাংলাদেশি।
নেপালের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে বাংলাদেশি ছাড়াও ২২ জন নেপালি এবং একজন চীনের নাগরিক রয়েছেন। নেপালে বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের সংখ্যা দিয়ে এটি তৃতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা।