হাসান মাহমুদ,
লালমনিরহাট প্রতিনিধি ঃ
লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলায় হঠাত ঝড়ো হাওয়া ও
ভারী শীলা বৃষ্টিতে ঘর-বাড়ি, দোকান-পাটের টিনের চালা, ভুট্টা,
সবজিসহ বিভিন্ন আবাদি ফসলী জমির ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি
হয়েছে। শুধু তাই নয় শীলা বৃষ্টির কারণে ঘরের টিন ফুটো হয়ে
নারী-পুরুষ, শিশুসহ প্রায় শতাধিক মানুষের মাথা ফেটে আহত
হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আহতরা উপজেলা স্বাস্থ্য-কমপ্লেক্সে
প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছে।
শুক্রবার (৩০ মার্চ) সকাল দশটা থেকে প্রায় সাড়ে ১০টা
পর্যন্ত এই ঝড়ো হাওয়া ও ভারী শীলা বৃষ্টি।
হাতীবান্ধা হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া আহতরা হলেন,
উপজেলার টংভাঙ্গা গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের স্ত্রী
মাহমুদা(৫০), মৃত আমিনুরের স্ত্রী মোমেনা(৫০) ইনসানের
স্ত্রী জাহানারা বেগম(৪৫) মৃত আজ্জুল হোসেনের পুত্র মাজেদুল
ইসলাম(২৭), পশ্চিম বেজ গ্রামের মৃত আব্দুর রাজ্জাকের স্কুল
পড়–য়া পুত্র মিজানুর(১৪),বাড়াই পাড়া গ্রামের শ্রী সিদেন
চন্দ্রের পুত্র কঙ্কন রায়(১৪), খাইরুলের শিশু পুত্র ইমরান(৭) ও উপজেলার
নিজ শেখ সুন্দর এলাকার মাহবুব আলমের কন্যা রোজিনা(১৭)।
হাতীবান্ধা উপজেলার রেলষ্টেশন এলাকার বাসিন্দা ও উপজেলা
কৃষক লীগের সভাপতি আলাউদ্দিন মিয়া জানান, শুক্রবার সকাল
দশটায় প্রথমে বাসাত শুরু হয় পড়ে তা তীব্র আকার ধারন করে।
এরপরেই শুরু হয় ভারী শীলা বৃষ্টি। এতে করে ওই এলাকাসহ উপজেলার
প্রায় অসংখ্য ঘরবাড়ির টিনের চালা ফুটো হয়ে যায়। এমনকি
আমার নিজের আইসক্রাইম ফ্যাক্টরী ঘরের পুরো টিনের চালা
ফুটো হয়ে গেছে। আমার জীবনের দেখা প্রথম এমন শীলা বৃষ্টি।
যা শরন কালের ভারী শীলা বৃষ্টি।
উপজেলার দক্ষিন গড্ডিমারী গ্রামের বাসিন্দা দিনমজুর
ওসমান গনি(৫৫) জানান, আমার অনেক বয়স হলো। তবে আমি
এর আগে কখনো এমন ভারী শীলা বৃষ্টি দেখিনি। আমার তিনটি
টিনের ঘরের চালা ফুটো হয়ে গেছে। এতে করে সেগুলো ঠিক
করতে আমার প্রায় অনেক টাকা খরচ হয়ে যাবে।
একই গ্রামের ভুট্টা চাষী করিম বক্স বলেন, আমার কোন
আবাদি জমি নাই। আমি মানুষের জমি আদি(বর্গা) আবাদ
করি। এবার দেড় বিগা জমিতে ভুট্টা করেছি। কিন্ত আমার
ভুট্টা গাছ গুলো শীলা বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে গেছে। ঋণ করে ভুট্টা
চাষ করেছিলাম। এখন মনে হয় সেই ঋনের টাকার আর শোধ করা
সম্ভব হবে না।
এ বিষয়ে হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য-কমপ্লেক্সের জরুরী
বিভাগে দ্বায়িত্বর চিকিৎসক ধিমান রায় জানান, শীলা
বৃষ্টিতে অনেকের ফাঁটা ফেটে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে
যারা এখানে এসেছে তেমন গুরুত্বর না হওয়ায় তাদেরকে
প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। দু-
তিনদিন ঔষুধ খেলে ঠিক হয়ে যাবে। আর দুরত্বের কারনে হয়তো
অনেকেই আসতে পারেনি। তারা হয়তো স্থানীয় চিকিৎসকদের
সহায়তা নিয়েছে।
এ বিষয়ে হাতীবান্ধা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার
হোসেন জানান, ঝড়ো হাওয়া ও ভারী শীলা বৃষ্টিতে উপজেলার
বিভিন্ন এলাকার সাড়ে তিনশ হেক্টর জমির ভুট্টা গাছের ক্ষতি
হয়েছে। তবে চাষাবাদের বিভিন্ন সবজি ও ফসলের ক্ষতি পরিমান
সঠিক জানা যায়নি। শীলা বৃষ্টিতে ভুট্টার তেমন ক্ষতি না হলেও
অধিকাংশ জমিতে ঝড়ে হেলে গেছে। যেসব এলাকায় ক্ষতি
হয়েছে সেই এলাকা গুলোতে আমাদের ইউনিয়ন পর্যায়ের
কর্মকর্তা গন খোঁজ খবর নিয়ে তারা কৃষকের সাথে কথা বলে
পরামর্শ প্রদান করবেন।
এ বিষয়ে হাতীবান্ধা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা
বলেন, এখনো ক্ষতির পরিমান জানা যায়নি। তবে স্ব-স্ব ইউনিয়ন
পরিষদ চেয়ারম্যাদের খোঁজ খবর নিতে বলা হয়েছে। তারপর তারা
জানালে আমরা সঠিক হিসেব জানতে পারবো।