হেলাল শেখ, সাভার আশুলিয়া থেকে ঃ
সাভারে এক সময়ের অবহেলিত এবং অন্ধকারাচ্ছন্ন জনপদ বেদে পল্লীর ৩০ নারী কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ সনদপত্র ও আর্থিক অনুদান পয়েছেনে। সাভার উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উদ্যোগে বুধবার বেদে পল্লীর অমরপুর মাঠে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এসময় ৩০ জন নারীকে সনদপত্র ও সেলাই কাজের বিভিন্ন সরঞ্জাম কেনার জন্য এককালীন নগদ ১০ হাজার টাকা করে আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়। এসময় তাদের চোখেমুখে আনন্দের ঝলক দেখা যায়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি (পারসোনাল ম্যানেজমেন্ট) এবং উত্তরন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাভার পৌরমেয়র হাজী মোঃ আব্দুল গণি।
প্রশিক্ষন নেয়া বেদে নারী বর্ষা আক্তার বলেন, আগে আমরা কাজের জন্য বিভিন্ন স্থানে ঘুড়ে বেড়াতাম। মানুষ আমাদেরকে অবহেলা এবং ঘৃনার চোখে দেখতো বলে কোন কাজ করতে পারতামনা। কিন্তু হাবিব স্যার আমাদের জন্য কাজের সুযোগ করে দিয়েছেন।
তার প্রচেষ্টায় আমরা কাজ করে এখন ভাগ্য বদলের চেষ্টা করে যাচ্ছি। সাভার বিশ^বিদ্যালয় কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী দোলন চাপাও এখান থেকে প্রশিক্ষন নিয়ে পড়ালেখার পাশাপাশি নিজেকে গড়ে তুলেছে উদ্যোমী উদ্যোক্তা হিসেবে।
সাভার পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব আব্দুল গণি জানান, পুলিশ কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান এখানে প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়েছেন, মসজিদ, ঈদগাঁ, খেলার মাঠ উন্নয়ন করেছেন। ছিন্নমূল বেদেদের আশ্রয়ণর জন্যে গুচ্ছ গ্রাম প্রতিষ্ঠা করছেন। এভাবেই সাভারকে বদলে দিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা সাভারবাসীর হৃদয়ে স্থায়ীভাবে আসন গেড়েছেন।
পোড়াবাড়ি সমাজ কল্যান সংঘের সাধারন সম্পাদক রমজান আহমেদ বলেন, বেদে পাড়ার প্রায় ২০ হাজার লোকের বসবাস হলেও অধিকাংশেরই নাই নিজস্ব ঘর-বাড়ি। তারা বিভিন্ন সময়ে অনেক কষ্টে জলে-স্থলে বসবাস করে। বেদে সম্প্রদায়ের শিক্ষিত তরুনদের জন্যে উত্তরণ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে কোচিং সেন্টার খোলা হয়।
আর তরুনীদের জন্যে তৈরি করা হয় তৈরি পোশাক কারখানা। গাড়ি চালনার প্রশিক্ষন দিয়ে কর্মসংস্থান ছাড়াও যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করেছেন হাবিব স্যার। তিনি আমাদের কাছে দেবতার মতো।
পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি (পারসোনাল ম্যানেজমেন্ট) মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, একসময় সাভারের বেদে পল্লী মাদকের আখড়া হিসেবে পরিচিত ছিল। আমি তাদেরকে ডেকে তাদের দুঃখ, দুর্দশার কথা শুনি এবং মাদক নির্মূলে তাদেরকে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ এবং সেবা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহন করি।
আইন প্রয়োগের মাধ্যমে মাদক ব্যবসা পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব নয় বুঝতে পেরে অপরাধের শেকড় অনুসন্ধান করি। এসময় সমাজের কুসংস্কার ও বিভিন্ন অনাচারসহ নানা অসামাজিক কার্যাকলাপ সম্পর্কে জানতে পেরে পিছিয়ে পড়া এ জনগোষ্ঠীকে আলোর পথে আনার সিদ্ধান্ত নেই। আজ অনগ্রসর বেদে জনগোষ্ঠির লোকেরা বিভিন্ন পর্যায়ে নিজেদের যোগ্যতার প্রমান রাখছে এটাই আমার প্রাপ্তি।
সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ রাসেল হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) আবিদা সুলতানা, ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ সাইদুর রহমান, সাভার সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খোরশেদ আলম, ঢাকা জলো (উত্তর) ডবিরি ওসি এ এফ এম সায়দে, সাভার পৌরসভার মেডিকেল অফিসার কাজী আয়েশা সিদ্দিকা বর্ণা, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান প্রমুখ।