জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা সংস্কার ইস্যুতে প্রথমবারের মতো সরাসরি কথা বললেন। সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে বলেন, ‘কোটা পদ্ধতিই বাতিল।’
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোটা নিয়ে যখন এতকিছু, তখন কোটাই থাকবে না। কোনও কোটারই দরকার নেই।’
তার ভাষ্য, ‘কোটা থাকলেই সংস্কারের প্রশ্ন আসবে। এখন সংস্কার করলে আগামীতে আরেক দল আবারও সংস্কারের কথা বলবে। কোটা থাকলেই ঝামেলা। সুতরাং কোনও কোটারই দরকার নেই।’
শেখ হাসিনার সাফ কথা, ‘কোটা ব্যবস্থা বাদ, এটাই আমার পরিষ্কার কথা।’
বক্তব্যের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটি দেশ তখন উন্নত হয় যখন একটি শিক্ষিত সমাজ গড়ে ওঠে। শিক্ষিত সমাজের কর্মক্ষেত্র প্রসারিত করতে আমরা সে ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছি।’
‘আমাদের সরকারের আমলে ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়ার সুযোগ পাচ্ছে, বৃত্তি পাচ্ছে, বিনা পয়সায় বই পাচ্ছে। আমাদের ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া করবে, মানুষের মতো মানুষ হবে, তারা দেশ পরিচালনা করবে।’
তিনি বলেন, ‘এখন কোটা সংস্কারের নামে ছাত্ররা রাস্তা বন্ধ করে আন্দোলনে নেমেছে। তারা রাস্তায় বসে আছে, যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে, রোগীরা হাসপাতালে যেতে পারছে না।’
‘ডিজিটাল বাংলাদেশ আমিই তৈরি করে দিয়েছি, এখন সবাই ফেসবুক, ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে। আধুনিক প্রযুক্তির শিক্ষা ব্যবস্থা আমিই চালু করেছি। এখন সেগুলো ব্যবহার করে গুজব ছড়ানো হলো, এক ছেলে মারা গেছে। রাত ১টার সময় হলের গেট ভেঙে রাস্তায় নেমে এলো ছেলে-মেয়েরা। পরে ওই ছেলে যখন মারা যায়নি, ওই ছেলে যখন নিজেই ফেসবুকে জানিয়ে দিল তখন তাদের মুখটা কোথায় গেল?’
‘এরপর শুরু হয় যত অঘটন, ভাঙচুর, লুটপাট; এর দায় কে নেবে’- প্রশ্ন রাখেন প্রধানমন্ত্রী।
‘ভিসির বাড়িতে আক্রমণ হলো, আমরাও তো আন্দোলন করেছি। আমরা তো কখনও এমনটি করিনি। ভিসির বাড়িতে এমন ভাঙচুর, ভিসির বাড়ির ছবি দেখে মনে হয়েছে পাকিস্তানী বাহিনী আমাদের ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে যেভাবে ভাঙচুর চালিয়েছিল, লুটপাট করেছিল… ভিসির ছেলে-মেয়ে ভয় পেয়ে লুকিয়ে ছিল, একতলা-দোতলা ভবন তছনছ করা হলো, পরে সিসি ক্যামেরা নিয়ে চলে গেল… আমি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। যারা ঘটিয়েছে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বলে আমি মনে করি না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ছাত্ররা দাবি করেছে, আমিও বসে থাকিনি। আমাদের মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে পাঠিয়েছি। তিনি ছাত্রদের সঙ্গে বসেছেন। আমি ক্যাবিনেট সেক্রেটারিকে নির্দেশ দিয়েছি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে। মন্ত্রী তাদের সঙ্গে বসল, একটা সমঝোতা হলো।’
‘অনেকে মেনে নিল কিন্তু অনেকে মানল না। টিএসসিতে অনেকে থেকে গেল, কেন? যখন আলোচনা হয়েছে, কথা হয়েছে তাহলে কেন চারুকলায় অবস্থিত মঙ্গল শোভাযাত্রা পুড়িয়ে তছনছ করা হলো। আর মেয়েরাও হল থেকে বেরিয়ে আসল। আমি সারা রাত ঘুমাতে পারিনি। নানককে পাঠালাম, আলোচনা করল, তাদের ফিরে যাওয়ার কথা বলা হলো কিন্তু তারা মানল না, আন্দোলন চালিয়ে গেল।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা একটা নীতি নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করি। যারা আন্দোলনে নেমেছে তারা আমার নাতীর বয়সী, তাদের ভালো কিসের, আমরা তো ভালো জানি।’
তিনি বলেন, ‘১৯৭২ সাল থেকে কোটা ব্যবস্থা চলছে। ৩৩তম বিসিএসে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ হয়েছে ৭৭.৪০ ভাগ শিক্ষার্থীর আর ৩৫তম বিসিএসে মেধার ভিত্তিতে ৬৭.৪৯ ভাগ শিক্ষার্থীকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। মেধাবীরা কিন্তু বাদ যায়নি… যেখানে কোটা পাওয়া যাবে না, মেধা তালিকা থেকে দেয়া হবে। এটা কিন্তু চলছে, জানি না ছাত্ররা এটা জানে কিনা…’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জানি, ছাত্ররা মেধাবী, তাদের লিখিত পরীক্ষায় পাস করে এ পর্যায়ে আসতে হয়। তাদের দাবিতে তো বলা আছে, কোটায় পাওয়া না গেলে মেধা তালিকা থেকে নিয়োগ হবে। আমরা মেধা তালিকা থেকে তো নিয়োগ দিচ্ছি। আর এ নিয়ে ঢাবির কিছু প্রফেসর, শাবির… তারাও তাল মিলিয়েছে।’
‘সকালে ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি আমার কাছে আসে। তারা বলে, আমরা ঘুমাতে পারছি না, ছাত্ররা রোদে বসে আছে, তাদের তো অসুখ-বিসুখ হবে। রাস্তা অবরোধের কারণে কেউ অফিস-আদালতে যেতে পারছে না, রোগীরা হাসপাতালে যেতে পারছে না, এভাবে তো চলতে পারে না…’
‘কোটাই থাকবে না, কোটার দরকার নাই, বিসিএস যে পদ্ধতিতে হয় সেভাবেই হবে। কেউ যাতে বঞ্চিত না হয় সে ব্যবস্থা তো আমাদের আছে।’
‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরা চাকরি পেত না, আগে নারীদের জজ হওয়ার সুযোগ ছিল না। পাকিস্তান আমলে নারীরা জজ হিসেবে তো আদালতে ঢুকতেই পারত না। আমরা এসে নারীদের চাকরিতে ১০ ভাগ কোটার ব্যবস্থা করি, কিন্তু এখন মেয়েরাও রাস্তায়। তার মানে তারাও কোটা চায় না…’
‘আমি তো খুশি, আমি নারীর ক্ষমতায়নে সবচেয়ে বেশি কাজ করেছি, মেয়েরা যখন চাই না তাহলে কোটার দরকার নাই’- যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
‘যথেষ্ট আন্দোলন হয়েছে’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘ঢাবির ভিসির ভব