গাজীপুর প্রতিনিধি:
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী বাজারে সরকারের ১ নং
খতিয়ানের খাস জমিতে অবাধে গড়ে উঠছে বহুতল ভবন।
সরকারী ভূমি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা না মেনে কোন প্রকার
অনুমোদন ছাড়াই পাকা দোকান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বহুতল
বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে। আর স্থানীয়দের অভিযোগ
প্রশাসনের সহযোগীতায় এসব হচ্ছে। তাই এক সময়ের
ঐতিহ্যবাহী বরমী বাজারটি এখন অনেকটাই অস্তিত্ব সংকটের
মুখে দাড়িয়ে আছে।
স্থানীয় লোকজন ও ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়,উপজেলার বরমী
ইউনিয়নের প্রাণকেন্দ্র এই বরমী বাজারের সরকারী খাস জমির
পরিমান প্রায় সাত একর যা পেরিফেরি ভূক্ত। ব্রিটিশ আমল
থেকেই শীতলক্ষ্যা নদীর লাগুয়া বরমী বাজারকে কেন্দ্র আশপাশের
কয়েকটি উপজেলার ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালনা হতো। কালের
পরিক্রমায় বাজারের ঐতিহ্য অনেকটা কমে গেলেও এখন হারাতে
বসছে তাঁর খাস জমি। গত কয়েকবছর ধরে ধীরে ধীরে খাস
জমিতে কয়েকটি বহুতল ভবন গড়ে উঠলেও গত তিন মাস ধরে
অনেকটা অবাধে গড়ে উঠছে বহুতল ভবন। যে যেভাবে পারছে
সেভাবেই নির্মাণ কাজ করছে। আর যেন প্রশাসনের মুখে
কুলুপ লাগানো। সরকারী রাজস্বের অন্যতম উৎস এই বরমী বাজার
আগামী এক বছরের জন্য ৯০ লাখ টাকা দিয়ে ইজারা প্রদান
করেছে উপজেলা প্রশাসন। আর এভাবে দখল হয়ে গেলে সরকার
যেমন রাজস্ব হারাবে তেমন বাজারটি হারাবে তার অস্তিত্ব।
এসব খাস জমিতে গড়ে উঠা বহুতল ভবনের কোন সরকারী
অনুমোদন না থাকায় ভবিষ্যতে ঝুঁকি তৈরী হতে পারে।
বরমী ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ঠিক ৫০ গজ পূর্বে আর এস
রেকর্ডের সরকারী ১ নং খতিয়ানের ৪৪৬ দাগের প্রায় ১৫ শতাংশ
জমিতে ১৫ তলা বহুতল ভবন নির্মাণ কাজ করছেন শাজাহান মড়ল
ও ইদ্রিছ আলী মড়লে ছেলে আমিনুল ইসলাম । ইতিমধ্যে প্রথম
তলার ছাদ নির্মাণ হয়ে গেছে। উভয়ের বাড়ি পাশের বরনল
গ্রামে। তাঁরা জানালেন সবকিছু ম্যানেজ করেই নির্মাণ
কাজ করছেন। এ ছাড়াও এই জমির এস এ রেকর্ডে তাদের নাম
আছে বলে দাবী করেন।
তার পাশেই বরমী ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান
শামসুল হক বাদল সরকার নিজেও পাঁচ তলা ভবন নির্মাণ
করেছেন সরকারী খাস জমিতে।
পাশেই নির্মাণ কাজ করছেন বরমী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক
সদস্য খোকন মেম্বার জানান, বাজারের সিংহভাগ জমিই
সরকারী। তবে আমরা দীর্ঘদিন ধরে ভোগদখল করে আসছি সে
হিসেবে ভবন তৈরী করছি। তবে এসব ভবনের সরকারী ভাবে কোন
অনুমোদন না মিললেও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ আমাদের
অনুমোদন দিয়েছে।
শ্রীপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান ফকির ও তাঁর
ছোট ভাই আশরাফুল ইসলামও সরকারী খাস জমিতে বহুতল ভবন
নির্মাণ করেছেন।
অবৈধভাবে সরকারী জমিতে বহুতল ভবন নির্মাণের বিষয়ে
আব্দুল খালেক নামের একজন বলেন,বহুতল ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে
সরকারী কোন অনুমোদন তাদের নেই। তবে বিগত সময়
অন্যান্যরা যেভাবে অনুমোদন ছাড়াই তুলেছেন আমরাও তাদের
মত করে তুলেছি।’
বরমী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক
বেপারী জানান, বরমী বাজারে সরকারী জমিতে ভবন উঠায় এখন
আর বাজারের জায়গা অবশিষ্ট নেই। এখনই যদি সরকার অবৈধ
দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয় তাহলে অদূর ভবিষ্যতে বাজার
ইজারা দিতে পারবে না। সাথে সাথে সরকার তাঁর রাজস্ব
হারাবে
গত এক বছর আগে বরমী ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মরত
ভূমি সহকারী কর্মকর্তা বর্তমানে কোনাবাড়ি ইউনিয়ন
ভূমি অফিসে কর্মরত আলী হোসেন জানান, শত কোটি
টাকার সরকারী এই সম্পদ হাতছাড়া হতে দেখে আমি কয়েকবার
অবৈধ দখলদারদের কাজে বাধা প্রদান করেছিলাম। এ ছাড়াও
কয়েকবার সরকারী ভূমি উদ্ধার এবং রক্ষায় উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের
নিকট প্রতিবেদন দিয়েছি।কিন্তু কোন কাজ হয়নি।
বরমী ইউনিয়ন ভূমি সহককারী কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম
এসব সরকারী জমিতে ভবন নির্মাণে প্রশাসনের জড়িত থাকার
কথা নাকচ করে জানান, আমি নিজে কয়েকবার ভূমি অফিসের
সাথেই সরকারী জমিতে গড়ে ভবন মালিকদের কাজ বন্ধের বিষয়ে
বলেছি। কিন্তু তারা কর্ণপাত করেনি। এছাড়াও এসব জমি
বিরোধপূর্ণ ,এস এ রেকর্ডে অনেক ব্যক্তিদের নাম আছে।
আর এস রেকর্ড সরকারের নামে হলেও অনেকে আবার রেকর্ড
সংশোধনেরও মামলা করেছে।
এ বিষয়ে বরমী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামসুল হক বাদল
সরকার বরমী বাজারে সরকারী জমিতে ভবন গড়ে উঠার সত্যতা
নিশ্চিত করে জানান,অনেকটা অবাধে গড়ে উঠছে এসব বহুতল
ভবন। আমি ব্যক্তিগত ভাবে কয়েকবার ভূমি কর্মকর্তাকে এ
বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলেছি কিন্তু কোন কাজ হয়নি। আর
নিজের ভবনের বিষয়ে তিনি জানান, তাঁর জমির আর এস
সরকারী হলেও এসএ তে ব্যক্তির নাম আছে।
এ বিষয়ে গাজীপুর জেলা প্রশাসক ড: দেওয়ান মোহাম্মদ
হুমায়ুন কবির জানান, সরকারী জমিতে বহুতল ভবন নির্মাণের
কোন সুযোগ নেই। এমন হয়ে থাকলে তাদের অবৈধ ভবন
মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।