টি.আই সানি,শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধিঃ
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় ৮ইউনিয়নে কয়েক হাজার
ফার্মেসির বিপরীতে প্রকৃত ফার্মাসিস্টের সংখ্যা হাতে গুনা ।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার
বিভিন্ন বাজারের অলিতে-গলিতে ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে
উঠেছে শত শত ওষুধের দোকান। ওষুধ প্রশাসনের নিয়মনীতির
তোয়াক্কা না করে শুধু ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন
বাজারে অনেকেই ফার্মেসী দিয়ে বসে পড়েছেন ওষুধ বিক্রির
ব্যবসায়। উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় গড়ে উঠেছে ক্ষুদ্র ও
মাঝারি আকারের বিপুল সংখ্যক ফার্মেসি।
এসব ফার্মেসি চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই উচ্চমাত্রার
অ্যান্টিবায়োটিক, নিষিদ্ধ, নকল, মেয়াদোত্তীর্ণ ও নি¤œমানের
নানা প্রকার ওষুধ বিক্রি করছে অবাধে। ফার্মেসিগুলোতে নেই
কোনো প্রশিক্ষিত ফার্মাসিস্ট। ফলে রোগ নিরাময়ের পরিবর্তে
আরও জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে রোগীরা।
এতে আর্থিক, শারীরিক ও সেই সঙ্গে মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত
হচ্ছেন রোগী ও তাদের স্বজনেরা। অভিযোগ রয়েছে, শ্রীপুর
উপজেলার পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়নের বাজারে গড়ে উঠেছে
ফার্মাসিস্ট ও ড্রাগ লাইসেন্সবিহীন কয়েহাজার’ ফার্মেসি।
ফলে সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত অপচিকিৎসার স্বীকার হচ্ছেন।
বিশেষ করে ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা
ভালো না থাকায় ও অতিরিক্ত ভিজিটের কারণে প্রত্যন্ত এলাকার শিশু,
বৃদ্ধ, যুবক এবং গর্ভবতী নারীরা বিশাল পথ দিয়ে উপজেলা সদরে
রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের কাছে যায় না। তারা তাদের নিকটবর্তী
বাজারের ফার্মেসির শরণাপন্ন হয়ে রোগের বর্ণনা দিয়ে ওষুধ
নেয়।
উপজেলার মাওনা বাজার, এমসি বাজার, নয়নপুর বাজার, গাজীপুর
বাজার, মেডিকেল মোড়, নিজমাওনা বাজার, বাঁশবাড়ি বাজার,
চকপাড়া মেডিকেল মোড়, জৈনা বাজার, বরমী বাজার, রাজাবাড়ি
বাজার, বড়মা বাজার, কাওরাইদ বাজার, যুগির সিট মোড়,
কাশেমপুর বাজার, বলদীঘাট বাজারসহ ৩০ থেকে ৩৫টি বাজারের
ভিবিন্ন মোড়ে মোড়ে কয়েহাজার’ ফার্মেসির ড্রাগ লাইসেন্স
ও ফার্মাসিস্টের প্রশিক্ষণ নেই।
ড্রাগ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ, ১৯৮২-এর ৪ নম্বরের ১৩ নম্বর ধারার
‘ফার্মাসিস্টদের নিয়োগ’ শিরোনামের ২ নম্বর ধারায় উল্লেখ্য
আছে- ‘কোনো খুচরা বিক্রেতা বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিলের
কোনো রেজিস্ট্রারের রেজিস্ট্রিভুক্ত ফার্মাসিস্টদের তত্ত্বাবধান
ব্যতিরেকে কোনো ড্রাগ বিক্রি করতে পারবে না’। কিন্তু এসকল
বিধি-বিধানকে তোয়াক্কা না করে উপজেলার অধিকাংশ ফার্মেসি
চলছে প্রশিক্ষিত ফার্মাসিস্ট ছাড়াই। অল্প পারিশ্রমিকে অদক্ষ লোক
বসিয়ে বিক্রি করছে জটিল সব রোগের ওষুধ। ফলে মানহীন ভুল ওষুধ
যেমন বিক্রি হচ্ছে, তেমনি এসব ওষুধ কিনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন
ক্রেতারা।
সাধারণত এ, বি, সি- এই তিন ক্যাটাগরির ফার্মাসিস্ট রয়েছে
দেশে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফার্মেসি বিভাগে অনার্স
ও মাস্টার্স ডিগ্রিধারীরা হলেন- ‘এ’ ক্যাটাগরির। চার বছর
মেয়াদী ডিপ্লোমা কোর্সধারীরা ‘বি’ ক্যাটাগরির। আর তিন
মাসের কোর্সধারীরা ‘সি’ ক্যাটাগরির ফার্মাসিস্ট। উপজেলার
যে সকল ফার্মেসিতে ফার্মাসিস্ট রয়েছে তাদের ৯৯ শতাংশই
‘সি’ ক্যাটাগরির ফার্মাসিস্ট। এমনও রয়েছে যারা কোনো
ক্যাটাগরিতেই পড়ে না। যাদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা
মাধ্যমিক পাস। ফার্মেসিগুলো কোনো চিন্তাভাবনা না করেই
ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ব্যতীত সিপ্রোফ্লোক্সাসিলিন,
এজিথ্রোমাইসনসহ অনেক হাই অ্যান্টিবায়োটিক, ঘুমের
ট্যাবলেট, ব্যথানাশক ও যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট অবলীলায় বিক্রি
করছে।
জানা গেছে, ভেজাল ও নি¤œমানের ওষুধ বিক্রির ক্ষেত্রে ভালো মানের
ওষুধের চেয়ে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বেশি কমিশন দেওয়া হচ্ছে। এতে
করে বেশি লাভের আশায় ভেজাল ও নি¤œমানের ওষুধ বিক্রিতে বেশি
আগ্রহী হচ্ছে ওষুধ ব্যবসায়ীরা। সাধারণ মানুষও কোন্ধসঢ়; ওষুধটি
আসল কোনিট নকল তা চিহ্নিত করতে অপারগ। এর ফলে ভেজাল ও
নি¤œমানের ওষুধের বাণিজ্য দিন দিন সম্প্রসারিত হচ্ছে। আর
স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে সাধারণ মানুষ। অনুমোদনহীন নকল,
মেয়াদোত্তীর্ণ ও নিম্নমানের ওষুধ বিক্রি বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের
অভিযান জরুরি বলে মনে করছেন এলাকার সচেতন মহল।