টি.আই সানি গাজীপুরঃ
গাজীপুরের শ্রীপুরের শৈলাট গ্রামে রাহিম (১০) নামের এক শিশুকে দীর্ঘদিন যাবৎ পায়ে
শিকল পড়িয়ে বেধে রাখা হয়েছে। শিশুটির একমাত্র অপরাধ সে প্রতিবন্ধি। তবে পরিবারের
লোকজনের কথা তাঁর নিরাপত্তার কথা ভেবেই জন্মের দু”বছর পর হতেই তাকে শিকলে বেধে
রাখা হচ্ছে।
শিশুটি শৈলাট গ্রামের হতদরিদ্র ভ্যানগাড়ি চালক আব্দুস সামাদের ছেলে। বর্তমানে
শিকল বন্ধি জীবনে তাঁর শারিরীক বৃদ্ধি ঘটলেও মানসিক বিকাশ না হওয়ার আশংকা তৈরী
হয়েছে।
শিশুটির বাবা আব্দুস সামাদ জানান,তাঁর সহায় সম্পদ বলতে আছে শুধু বাড়ি ভিটা আর
দুটি ঘর। নিজে ভ্যানগাড়ী চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। তিন ছেলে দু মেয়ে ও
স্ত্রীকে নিয়েই তাঁর সংসার। সংসারের সবার ছোট রাহিমের ২০০৮ সালে প্রতিবন্ধি
হিসেবে জন্ম হয়। জন্মের পর বিভিন্ন কবিরাজ দেখিয়ে চিকিৎসা করিয়েও ফল পাওয়া
যায়নি, যখন সে হাটতে শিখল তখন দেখা গেল সে বাড়ির বাহিরে চলে যায়। পরে তাঁর
বয়স যখন আড়াই বছর তখন থেকেই তাঁর নিরাপত্তার কথা ভেবে পায়ে লোহার শিকল দিয়ে
বেধে রাখা হচ্ছে।
শিশুটির মায়ের মতে.তাঁর ছেলেটি কারো কোন ক্ষতি করে না। সব সময় খেলাধুলা করতে
পছন্দ করে, তবে খেলতে খেলতে অনেক দুরে গিয়ে হারিয়ে যাওয়ার আশংকায় বেধে রাখা
হচ্ছে। শিকলে বেধে রাখলে রাহিমের মন খুব খারাপ হয়, একাকী ভীষন্ন ভাবে বসে থাকে।
তবে ছিলেটিকে সুস্থ করে তোলারও ইচ্ছা থাকলেও দারিদ্র প্রতিবন্ধকতার জন্য বারবার
তাঁরা হেরে যাচ্ছেন।
গাজীপুর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ড সদস্য মিজানুর রহমান জানান,শিশুটির পিতা খুবই
হতদরিদ্র, তবে তাঁর পরিবারের এই প্রতিবন্ধি শিশুটির কথা বিবেচনা করে ইতিমধ্যেই
তাকে সরকারী সহায়তা কার্ড দেয়া হয়েছে।
প্রতিবন্ধি শিশুকে লোহার শিকল দিয়ে বেধে রাখার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড: অশোক
কুমার সাহা জানান, প্রতিবন্ধি একটি শিশুকে শিকলে বেধে রাখা ভয়ানক একটি দিক।
এতে শিশুটির মানসিক বৃদ্ধির পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরী করবে। তবে শিশুটিকে স্বাভাবিক
ভাবে বেড়ে উঠার পরিবেশ তৈরী করার জন্য তাঁর পরিবারকেই মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে।
এ ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম কাজ হচ্ছে তাঁর পায়ের শিকল খুলে দেয়া।