মোঃ আব্দুর রহিম, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলায় বোরো ধানে ব্যাপক আকারে ছত্রাকজনিত খোলপঁচা বা সিট ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। জমির ধান নষ্ট হওয়ায় উপজেলার কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়ছেন।
এলাকার কৃষকদের কাছে অপরিচিত এই নতুন রোগে আক্রান্ত ধান ক্ষেত দূর থেকে পাকা মনে হলেও কাছে গেলে দেখা যাচ্ছে শিষ গুলো শুধুই চিটা বা শস্য বিহীন।আর ক’দিন পরেই ধানের মৌ মৌ গন্ধে কৃষকের ঘর আর আঙ্গিনা ভরে যাওয়ার কথা থাকলেও সেখানে বিরাজ করছে হতাশা আর বিষাদের ছায়া। আগামী দিনগুলো কীভাবে কাটবে এই দু:চিন্তায় কৃষকের কপালে আজ বলি রেখার ছাপ।
চলতি বোরো মৌসুমে অন্য বছরের থেকে ধানের ফলন তুলনামূলক ভাল। তবে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলায় বোরো ধানক্ষেতে ছত্রাক ব্লাস্ট আক্রমণ দেখা দিয়েছে। এর ফলে ধান ক্ষেতের ভাল ধান শীষ সব চিটে ও সাদা হয়ে যাচ্ছে। প্রথম দিকে ব্লাস্টের আক্রমণ অল্প সংখ্যাক পরিলক্ষিত হলেও দিনের ব্যবধানে সমস্ত ক্ষেত জুড়ে ছড়িয়ে যাচ্ছে। অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহারেও কোন ভাল ফল পাচ্ছেন না ধান চাষি কৃষকরা। এতে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়ছেন।
ফলন ভাল থাকায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব হলেও ব্লাস্টের আক্রমণে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব নয় বলে জানান কৃষকরা। শ্রীমঙ্গল কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায় চলতি মৌসুমে শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ৩৮ হাজার ৩৮৪ মেট্রিকটন ফসলের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ।
ফসলের ক্ষেতে ভাইরাস জাতীয় ব্লাষ্ট রোগ আক্রমনের ফলে মোট উৎপাদনের এক তৃতীয়াংশ ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন প্রান্তিক কৃষকরা। এদিকে উপজেলার সদর ইউনিয়নের কৃষকরা সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন বলে স্থানীয় কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে।
সম্প্রতী শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভূনবীর, মির্জাপুর, আশিদ্রোণ, কালাপুর ও সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ও হাওর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ক্ষেতগুলোতে আধাপাকা ধানের গোড়া পচে গিয়ে শীষ শুকিয়ে ভেতরে চিটা হয়ে যাচ্ছে। ফলে ফসল রক্ষা করতে আধাপাকা ধান ঘরে তুলতে কৃষকরা মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছেন।
কৃষকরা জানান, প্রথমে দু’একটি ধানের গোড়ায় পচন দেখা দেয়। পরে একর পর এক জমির অন্যান্য ধানের গোড়ায়র ভাইরাসের মতো এই রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ঔষধ প্রয়োগ করে বোরো ধানে ব্লাষ্ট রোগ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসলেও তা পুরোপুরি ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না বলে আগে থেকেই ধান কাটা শুরু করে দিয়েছেন তারা।
ভূনবীর ইউনিয়নের কৃষক প্রমথ দাশ বলেন, এবছর ৮ কেয়ার জমিতে বোরো আবাদ করেছেন। ব্লাষ্ট রোগের কারণে তার আবাদি জমির অর্ধেক ধান নষ্ট হয়ে গেছে।
মির্জাপুর ইউনিয়নের কৃষক মজিদ মিয় ও ইসমাইল মিয়া বলেন, বোরো ক্ষেতে ব্লাষ্ট রোগের আক্রমন এবারই প্রথম দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার কাছ থেকে পরামর্শ নেয়ার পরও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি।
কালাপুর ইউনিয়নের কৃষক হাজী জসিম মিয়া, উসমান মিয়া বলেন, বোরো চাষের জন্য তারা ধার-দেনা করে ৫ থেকে ৬ কেয়ার জমিতে চাষাবাদ করেন। এর মধ্যে সেচ, সার, বালাইনাশকসহ অন্যান্য কীটনাশক প্রয়োগ করতে কেয়ার প্রতি ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
আশিদ্রোণ ইউনিয়নের কৃষক কৃপেশ বৈদ্য ও গোবিন্দ দেবনাথ বলেন, প্রথম দিকে ভালো আশা থাকলেও হঠাৎ করে ক্ষেতের ধানের গোড়ায় পচন ধরে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই পুরো ফসলের ক্ষেতে এ রোগ ছড়িয়ে পড়েছে।
বোরো ক্ষেতে ব্লাস্ট রোগ দেখা দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তা নীলুফার ইয়াছমিন মুনালিসা সুইটি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মুলত বোরো ধানে ব্লাস্ট রোগ দেখা দিচ্ছে। দিনে গরম রাতে ঠান্ডা পড়ায় এই রোগের প্রাদুর্ভাব ছড়াচ্ছে বোরো ধানে। তিনি বলেন, কৃষি অধিদপ্তর কর্তৃক চলতি ২০১৭-১৮ সনের বোরো মৌসুমে শ্রীমঙ্গল উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ৯ হাজার ৯৬৭ হেক্টর আবাদি জমিতে ব্রি-২৮, ২৯, ৪৮,৫০ ও ৫৮ জাতের বোরো ধান চাষ করা হয়েছে। এতে চলতি বছরে ফসলের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৮ হাজার ৩৮৪ মেট্রিকটন। তবে ব্লাষ্ট রোগের কারণে এর থেকে ৩০ শতাংশ নষ্ট হতে পারে বলে উল্লেখ করেন তিনি। এছাড়া ব্লাষ্ট রোগের কারণে ব্রি-২৮ জাতের ধান বেশী নষ্ট হয়েছে শ্রীমঙ্গল সদর ইউনিয়নের কৃষকরা সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন বলেও জানান তিনি। তিনি জানান, বোরো ক্ষেতে ব্লাস্ট রোগ দেখা দেয়ার সাথে সাথে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে গিয়ে কৃষকদেরকে ব্লাষ্ট রোগ প্রতিকারের পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি।