টি.আই সানি গাজীপুরঃ
তিন মাসের ব্যবধানে পিচ ঢালাই রাস্তা কাদা মাটিতে পরিণত
হয়েছে। গত দশ বছরে সংস্কারের ছোয়া পায়নি এমন কয়েকটি
সড়কে অবর্ণনীয় কষ্ট করছে মানুষ। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার
১০টি সড়কের এমন বেহাল দশা। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে সড়কে
চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে মানুষ। গাড়ি উল্টে দুর্ঘটনা ঘটছে
প্রতিনিয়ত।
গত মঙ্গল উপজেলার কয়েকটি সড়ক পরিদর্শন করে দেখা যায়, ঢাকা-
ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে শ্রীপুরের দিকে ৫কিলোমিটার
দৈর্ঘ্যরে আনসার রোডের(পূর্ব অংশ) শুরু। সড়কের শুরু থেকেই
কাদাযুক্ত পানি ছড়ানো। এমন দশা সড়কটির ২কিলোমিটার
পর্যন্ত। বাকি ৩কিলোমিটারের বেশিরভাগ অংশ ভাঙা। গত বছর
থেকেই এই সড়কটির করুন দশা শুরু। স্থানীয় মেঘনা নামক
কারখানার পানির পাইপ নেওয়ার জন্য সড়কটি কাটা হয়। এর
২কিলোমিটার জুড়েই পাইপ বাসনোর জন্য খনন করা হয়। ফলে বৃষ্টি
না পড়লে ধুলায় অন্ধকার আর বৃষ্টিতে কাদায় পরিনত হয় এটি।
সড়কটির মাস্টারবাড়ি-শ্রীপুর রোডের গাড়পাড়া মোড় থেকে
মাধখলা দুখলা নামক খাল পর্যন্ত আধা কিলোমিটার নতুন করে গত
অক্টোবরে খনন করা হয়। গত ২০১৭ সালের আগষ্ট মাসে খনন শুরু হয়
আনসার রোড থেকে গাড়পাড়া মোড় পর্যন্ত ১.৫কিলোমিটার
পিচ ঢাকা সড়কে। একই অবস্থা আনসার রোড পশ্চিমাংশেরও। পশ্চিম
দিকে ধনাইবেপারী স্কুল পর্যন্ত সড়কটি অবস্থা নাজুক। ঢাকা-
ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে উৎপত্তির শুরুতেই জলাবদ্ধতা। একটু
বৃষ্টি হলেই সেখানে পানি জমে থাকে। সড়কটির শুরু থেকে অন্তত
২কিলোমিটার পর্যন্ত প্রায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
দুটি সড়কেই যানবাহনসহ মানুষের চলাচলে এক অবর্ণনীয় কষ্ট
সহ্য করতে দেখা গেছে।
গত মঙ্গলবার উপজেলার অন্যান্য সড়কগুলোও পরিদর্শন করা হয়। জৈনাবার-
শৈলাট সড়কটি পরিদর্শন করেও সড়কে বেহাল দশা পরিলক্ষিত হয়।
বিচ্ছিন্ন বৃষ্টিতে সড়কটিতে পানি জমে দুর্ভোগ সৃষ্টি
হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ সড়কটিতে প্রতিদিন অসংখ্য গাড়ি
যাতায়াত করে। পানি জমে থাকায় প্রায়ই এখানে গাড়ি নষ্ট হয়ে
রাস্তা বন্ধ থাকে। পানি জমে থাকার কারণে ছোট ছোট
যানবাহনগুলো রাস্তার ভাঙা অংশ দেখতে না পেয়ে খাদে পড়ে উল্টে
যায়।
পৌর এলাকার ২নং সিএন্ডবি-কেওয়া রাস্তাটির বেহাল দশা। মাওনা
পল্লীবিদ্যুৎ থেকে সাতখামাইর রাস্তাটি বিভিন্ন অংশ ভেঙে
যাওয়ায় একটু বৃষ্টি হলেই তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
মাওনা চৌরাস্তা-ফুলবাড়িয়া সড়কের অধিকাংশই কাদায় মাখানো।
শ্রীপুর-বরমী সড়কটি গত কয়েক বছর ধরে চলাচলে স¤পূর্ণরূপে
অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে। সাতখামাইর-কাওরাইদ সড়কটির
বিভিন্ন অংশে বড় বড় খাদের সৃষ্টি হওয়ায় একটু বৃষ্টিতেই তা
তলিয়ে গিয়ে যান চলাচলে বিঘœ ঘটায়। মাস্টারবাড়ি-শ্রীপুর
সড়কটির বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দে ভরা। বৃষ্টি হলে এই সড়কে যান
চলাচল প্রায় বন্ধ থাকে।
মাস্টারবাড়ি এলাকার লিটন মিয়া বলেন, গত দশ বছরে মাস্টারবাড়ি-
শ্রীপুর সড়কে কোন কাজ করা হয়নি। সড়কটি শ্রীপুর যাওয়ার
একটি গুরুত্বপুর্ন বিকল্প সড়ক। অতি দ্রুত মানুষের দুর্ভোগ
বিবেচনা করে তা সংস্কার করা প্রয়োজন।
আনসার রোড এলাকার কারখানা কর্মীরা জানান, এই সড়কে
প্রতিদিন অসংখ্য শ্রমিক চলাফেরা করে। একটু বৃষ্টি পড়লেই এটি
আর চলাচলের উপযোগী থাকে না। বৃষ্টি না পড়লে এই সড়কটি
ধুলায় অন্ধকার হয়ে থাকে।
মেঘনা গ্রুপের ডিজিএম ফারুক আহমেদ প্রথম আলোকে
বলেন, আমি জানি রাস্তাগুলোতে মানুষের অবর্ণনীয় কষ্ট হচ্ছে।
পানির পাইপ স্থাপনের বিষয়টি পৌরসভা থেকে বৈধ অনুমতি
সাপেক্ষেই করা হয়েছে। সম্প্রতি জেনেছি সড়কটি সংস্কারের
জন্য পৌর কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ নিয়েছে। আশা করি খুব দ্রুতই তা
সংস্কার করা হবে। তা ছাড়া আমরা নিজেরাও কিছু ইটা দিয়ে
সংস্কার করতে উদ্যোগ নিয়েছি।
শ্রীপুর উপজেলা প্রকৌশলী সুজায়েত হোসেন জানান, সড়কগুলোর
সংস্কার কাজ প্রক্রিয়াধীন। খুব শিগির দুর্ভোগ শেষ হবে। বৃষ্টি
হওয়ায় জনদুর্ভোগ বেড়েছে। আমরা চেষ্টা করছি দুর্ভোগ
কমিয়ে আনার জন্য।
শ্রীপুর পৌরসভার মেয়র আনিছুর রহমান বলেন, আনসাররোড
সড়কটি সংস্কারের জন্য পৌরসভার উদ্যোগ প্রায় চুড়ান্ত। শীঘ্রই
কাজ শুরু করা হবে। মানুষের দূর্ভোগ বিবেচনায় তা আরও দ্রুত
করার জন্য চেষ্টা করা হবে। বর্তমানে সড়কটি মানুষের চলাচলের
উপযোগী করতে স্থানে স্থানে ইটা ফেলে সংস্কার কাজ করা হচ্ছে।