হেলাল শেখঃ
১ মে জাতীয় শ্রমিক দিবস পালিত হবে বিভিন্ন আয়োজনের মধ্যদিয়ে, সকল শ্রেণির শ্রমজীবি
মেহনতি মানুষদের নিয়ে নানারকম ভাবে বিভিন্ন অনুষ্ঠান পালিত হবে বলে শ্রমিক নেতাকর্মীরা
জানান। মহান মে দিবস উপলক্ষে জাতীয় শ্রমিক লীগসহ বিভাগ-জেলা ও থানা পর্যায়ে শ্রমিক সংগঠনের
আয়োজনে শ্রমিকদের র্যালি বের করা হয়।
মহান মে দিবস এর বিষয়ে শ্রমিক নেতা মোঃ নাজমুল হোসেন বলেন, শিল্পকারখানায় এখনও অনেক মা
বোন নির্যাতনের শিকার হন। সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অনেক কারখানায় অনিয়ম,
দুর্নীতি করছে। কিছু কারখানার মালিক-প্রতি মাসে শ্রমিকদের মুজুরি বা বেতন ১০ তারিখের মধ্যে
দেয়ার কথা থাকলেও মাসের পর মাস অনিয়ম করে বেতন দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে কাকলী, কিসমু ও
আখি আকতার বলেন, পোশাক কারখানার কিছু মালিক, স্টাফ ও জিএম, পিএম- অনেক সময় নারী
শ্রমিকদের গায়েও হাত দেয় এবং বেতন সময়মত না দিয়ে বিভিন্ন হুমকি দিয়ে থাকেন, এমন কি
কয়েকজন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ঢাকার সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুরসহ বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে ড্রেনেজ
ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে, সামান্য বৃষ্টি হলে রাস্তায় হাটু পানি হয়! বাসার চুলায় গ্যাস থাকেনা,
নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি, বাসা ভাড়া বৃদ্ধিসহ নানা সমস্যায় পড়েছে লাখ লাখ মেহনতি দিনমুজর মানুষ
শ্রমিক, কেউ রাখে না তাদের খবর।
বিশেষ করে ১৮৮৬ সালে আমেরিকার শিকাগো শহরে হে মার্কেটের ম্যাসাকার শহীদদের আত্মত্যাগকে
স্মরণ করে পালিত হয় মে দিবস। সেইদিন দৈনিক আট ঘন্টা কাজের দাবীতে শ্রমিকরা হে মার্কেটে
জমায়েত হয়েছিল। তাদেরকে ঘিরে থাকা পুলিশের প্রতি এক বোমা নিক্ষেপের পর পুলিশ শ্রমিকদের ওপর
গুলিবর্ষণ শুরু করে। ফলে প্রায় ১০-১২ জন শ্রমিক ও পুলিশ নিহত হন।(১)(২)(৩)(৪) ১৮৮৯ সালে ফরাসী
বিপ্লবের শতবার্ষিকীতে প্যারিসে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক-এর প্রথম কংগ্রেস অনুফড়ং হয়। সেখানে
১৮৯০ সাল থেকে শিকাগো প্রতিবাদ এর বার্ষিকী আন্তর্জাতিক ভাবে বিভিন্ন দেশে পালনের প্রস্তাব
করেন রেমন্ড লাভিনে। (৫) ১৮৯১ সালের আন্তর্জাতিকের দ্বিতীয় কংগ্রেসে এই প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে
গৃহিত হয়। এরপরপরই ১৮৯৪ সালের মে দিবসের দাঙ্গার ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে একের পর এক পহেলো মে
তারিখে মিছিল ও শোভাযাত্রা আয়োজনের সকল সমাজবাদী গণতান্ত্রিক দল এবং শ্রমিক সংগঠন (ট্রড
ইউনিয়ন) এর প্রতি আহব্বান জানানো হয় এ বিষয়ে। সেই সম্মেলনে “শ্রমিকদের হতাহতের সম্ভাবনা
না থাকলেও বিশ্বজুড়ে সকল শ্রমিক সংগঠন মে’র ১ তারিখে “বাধ্যতামূলকভাবে কাজ না করার জন্য বলা
হয়” এবং এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এর পর বিশ্বের অনেক দেশে সরকারীভাবে মহান মে দিবস পালন করা
হয়। এ বিষয়ে আরও অনেক তথ্য রয়েছে, অন্য দেশের মত বাংলাদেশেও এখন পহেলা মে দিবস কে জাতীয়
শ্রমিক দিবস হিসেবে পালন করা হয়। শ্রমিক দিবস এলে বিভিন্ন সংগঠন নেমে পড়েন টাকা
কালেকশনে, এটা একরকম নিরব চাঁদাবাজি বলা চলে এটা কি ঠিক হয়? শ্রমিকরা তাদের মাথার গাম
পায়ে ফেলে কাজ করেন কিন্তু যারা শ্রমিকদের বেতন না দিয়ে তাদের ওপর হামলা মামলা চালায় এটাতো
দুঃখজনক বিষয় তাই নয় কি?
৩০/০৪/২০১৮ইং সোমবার বিকালে দেশের বিভিন্ন বিভাগ, জেলা ও থানা পর্যায়ে শ্রমিক সংগঠনের
নেতাকর্মীরা র্যালি বের করেন এবং কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতেৃত্বে এসব র্যালি
হাইওয়ে রোড ও বাসষ্ট্যান্ড থেকে শুরু করে বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ শেষে যথাস্থানে এসে মহান মে
দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন আলোচনা করেন শ্রমিক নেতাকর্মীরা। এ র্যালিতে যার যার এলাকাভিত্তিক ভাবে
শতাধিক নেতাকর্মী নিয়ে র্যালিতে অংশগ্রহণ করেন, শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা মহান মে দিবস
পালন উপলক্ষে আলোচনা সভা করছেন। এ বছরের মে দিবসটি একটু আলাদা ভাবে ছুটির দিনগুলো কাটবে
শ্রমিকদের।