হেলাল শেখঃ ঢাকার সাভার জোনাল অফিস তিতাস গ্যাস টি এন্ড ডি কোম্পানী লিমিটেড এর বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ প্রায় ১০০ কিলোমিটার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছেন তিতাস কর্মকর্তারা। সেই সাথে অবৈধ সংযোগ ব্যবহারকারী দোষীদের বিরুদ্ধে ৮টি মামলা রুজু করা হলেও অনেক গ্রাহকের বকেয়া বিল বাকী থাকায় সরকারের লাখ লাখ টাকা লোকসান হচ্ছে। জানা গেছে, সাভার ও আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার অবৈধ সংযোগের কারণে সরকারের কোটি কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। একদিকে কোম্পানির কর্মকর্তারা সংযোগ বিচ্ছিন্ন করছেন, অন্যদিকে আবার অবৈধভাবে সংযোগ দিয়ে অতিষ্ট করে তুলছে তিতাস কোম্পানীর কর্মকর্তাদের। এরই প্রেক্ষিতে কোম্পানীর বিশেষ অভিযান চলছে। তিতাস এর এক কর্মকর্তা বলেন, প্রায় প্রতিদিনই ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার রেকর্ড রয়েছে এবং অবৈধ সংযোগ ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে থানায় ৮টি মামলা রুজু করা হয়েছে। এর মধ্যে আশুলিয়া থানায় একটি মামলায়ই ৪৭জনকে আসামী করা হয়েছে। সুত্র জানায়, এই এলাকায় প্রায় এক লাখেরও বেশি তিতাস গ্যাসের সংযোগ রয়েছে। বিশেষ করে, গ্যাসের সংযোগ ব্যবহারকারী অনেকেই বলেন, আমরা এক একটি সংযোগ পেতে ৫০ থেকে ৬০ হাজার করে টাকা দিয়েছি। আমাদেরকে বলা হয়েছে দ্রুতই এই গ্যাসের সংযোগ বৈধ করে দেওয়া হবে। এক একটা সংযোগের ব্যাপারে একাধিকবার টাকা নেওয়া হয়েছে বলে তাদের অনেকেরই দাবি। তাহলে প্রশ্ন কারা এই টাকা গ্রহণ করেছেন? এবং একাধিকবার টাকা নেওয়ার পরেও সেই সংযোগ আবার বিচ্ছিন্ন করা হয় কেন,ভূক্তভোগীদের দাবী-শুধু আমাদের বিরুদ্ধে মামলা কেন? শুধুমাত্র আমাদের বিচার কেন করা হবে? সংশ্লিষ্ট যারা এর সাথে জড়িত তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হোক। ২১/০৫/২০১৮ইং সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, এখনও অনেক অবৈধ সংযোগ রয়েছে সাভার ও আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায়। অনেকের ৮ থেকে ৯ মাস বৈধ গ্রাহকের গ্যাস বিল বকেয়া রয়েছে। গত ২ মাসে বিশেষ অভিযানে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় বর্তমানে বৈধ গ্রাহকদের তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না। চুলার গ্যাসের কোনো নেই বলে তারা অনেকেই জানান। যা গত ২ মাস আগেও অবৈধ সংযোগের কারণে ঠিকমতো গ্যাস পাইতেন না তারা। আগে রাত ১২ টার পরে গ্যাস আসতো আবার ভোর ৪ টা বাজার আগেই গ্যাস চলে যেতো, এখন আর এমন সমস্যা হচ্ছে না বলে অনেকেই জানিয়েছেন। আমাদের প্রতিনিধি গত ২০১৭ইং সালের শুরু থেকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সাভারের বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে যে তথ্য পেযেছেন এর মধ্যে কিছু এলাকা ছাড়া বেশিরভাগ এলাকায় এখনও অনেক অবৈধ সংযোগ রয়েছে। তথ্যমতে এখনও অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে অভিযান চলছে বলে তিতাস কর্মকর্তারা জানান। জানা গেছে, ঢাকার শিল্পাঞ্চল সাভার, আশুলিয়ায় প্রায় ১ কোটি মানুষের বসবাস। সেখানে শিল্প কারাখানার শ্রমিক কর্মচারী ও নিম্ন আয়ের মানুষের সংখ্যাই বেশী। এ বিষয়ে গার্মেন্টস কর্মী শাহানাজ (৩৪) ইসরাত জাহান (২৭), সাইফুল (৩৮) নাজমুল হোসেন (৩২) বলেন, সারাদিন অফিসে কাজ করে রাত ১০ টার পরে বাসায় ফিরে দেখা যায় যেতো চুলার গ্যাস নেই, তবে এখন চুলার গ্যাস নেই এমন সমস্যা আর বর্তমান নেই কিন্তু যারা বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করছেন, তাদের সমস্যা একটু বেশি, সংযোগ বৈধ না অবৈধ তা তারা জানেন না, এখন অনেক বাসায় গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন তবুও বাসা ভাড়া কমানো হয়নি, সাবেক ভাড়া গুনতে হচ্ছে ভাড়াটিয়াদেরকে এ যেন দেখার কেউ নেই। জানা গেছে, ঢাকার সাভার উপজেলার আশুলিয়ার ঘোষবাঘ, জামগড়া, ভাদাইল, চিত্রশাইল, বেরুণ ছয়তালা ও বাংলা বাজার গুমাইলসহ বিভিন্ন এলাকায় তিতাস গ্যাস কোম্পানির ব্যাবস্থাপক মোঃ সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্বে বিশেষ অভিযানে প্রায় প্রতিদিনই ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে আসছেন বলে তিনি জানান। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সাভার আশুলিয়ায় প্রায় ১০০ কিলোমিটার অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে বলে সুত্র জানায়। উল্লেখ্য গত ০৯/০৪/২০১৮ইং তারিখ সোমবার সকাল ১০টা থেকে আশুলিয়ার বাংলা বাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন তিতাস গ্যাস কোম্পানি। আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ড এর বাংলা বাজার এলাকার (বাঁশ বাজার) সংলগ্নে অভিযান চালানো হলে, সেখানে ২টি সোর্স লাইনের সন্ধান পাওয়া যায়। এ এলাকায় ঐ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। তথ্যমতে ০৩/০৫/২০১৮ইং আশুলিয়ার জামগড়া, কাঠালতলা, বটতলা, ভাদাইল, চিত্রশাইলসহ বেশকিছু এলাকায় গ্যাসের অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয় প্রায় ৮ কিলোমিটার পাইপ লাইন। এ অভিযানে উপস্থিত ছিলেন, সাভার তিতাস গ্যাস কোম্পানির ব্যাবস্থাপক মোঃ সিদ্দিকুর রহমান, উপ: ব্যাবস্থাপক হাজী আব্দুর রহিম, মোঃ হাসান, মোঃ আনিছুজ্জামান, মোঃ মান্নান, টেকনিশিয়ান মোঃ হাবিবুর রহমান, মোঃ গিয়াস উদ্দিন এবং আশুলিয়া থানা পুলিশের একটি টিম। এসব অভিযানের দিন তিতাস কোম্পানীর কর্মকর্তাদের নিরাপত্তার স্বার্থে কাজ করছেন পুলিশ প্রশাসন। এ বিষয়ে সাভার জোন তিতাস কোম্পানির ব্যাবস্থাপক মোঃ সিদ্দিকুর রহমান জানান, তিতাস কোম্পানির গ্যাস সরকারি সম্পদ, অবৈধভাবে যারা সংযোগ ব্যবহার করছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে, ইতিপূর্বে অবৈধ সংযোগ ব্যবহারকারী দোষীদের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে আশুলিয়া থানার একটি মামলা নং-৪৭, তারিখ ১২/০৪/২০১৮ ইং। এই মামলায় ৪৭জনকে আসামী করা হয়েছে। এ বিষয়ে তিতাস কোম্পানির টেকনিশিয়ান মোঃ হাবিবুর রহমান এ প্রতিনিধিকে জানান, গত ২ মাসের অভিযানে প্রায় ১০০ কিলোমিটার অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে থানায় ৮টি মামলা করা হয়েছে। দোষী ব্যক্তি যেই হোক না কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।