গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি : গোপালগঞ্জে মিথ্যা অপবাদ দেওয়ার পর
ইফতারিতে বিষ মিশিয়ে খাদিজা (২৩) নামে এক কলেজ ছাত্রীকে হত্যা
করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
জেলার টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পূর্ব গিমাডাঙ্গা গ্রামে বুধবার সন্ধ্যায়
এ ঘটনা ঘটে। পরে বৃহস্পতিবার গোপালগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও
টুঙ্গিপাড়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। নিহত খাদিজা ওই
গ্রামের মো: হোসেন সিকদারের মেয়ে ও টুঙ্গিপাড়া শেখ মুজিবুর
রহমান বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের বিএ শেষ বর্ষের ছাত্রী।
টুঙ্গিপাড়া থানার ওসি এ কে এম এনামুল কবীর জানান, খাদিজা
প্রতিবেশী শেখ নাসির ওরফে ঝন্টুর ছেলে ও মেয়েকে প্রাইভেট পড়াতেন।
এ কারণে খাদিজার ওই বাড়িতে যাতায়াত ছিলো। নাসিরের স্ত্রী মিতু
বেগমের সাথে তার শ্বাশুড়ি বেবী বেগম ও ননদ নাজমা বেগমের ভাল
সম্পর্ক ছিলো না। তাই খাদিজার নাসিরের বাড়িতে যাতায়াত পছন্দ
করতো না বেবী ও নাজমা।
তিনি আরো জানান, বুধবার বিকেলে খাদিজা ওই বাড়িতে যায়। এ সময়
নাজমা তার স্বামী মিন্টুর সঙ্গে খাদিজার অবৈধ সম্পর্ক আছে বলে
অভিযোগ তোলে। পরে খাদিজা বিষয়টি অস্বীকার করলেও তাকে অকথ্য
ভাষায় গালিগালাচ ও অপমান করেন নাজমা। এ সময় বাড়ি ফিরে যান
খাদিজা। পরে সন্ধ্যায় মিতু বেগম খাদিজাকে বাড়িতে ডেকে ইফতার
খাওয়ান। ইফতার খেয়ে খাদিজা বাড়িতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তারপর
তাকে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। ভর্তির ৪
ঘন্টা পর খাদিজা সেখানে মারা যান।
ওই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, খাদিজার মা মাবিয়া বেগম
বৃহস্পতিবার অভিযোগ করেন ঝগড়াকে কেন্দ্র করে মিতু বেগম
ইফতারির মধ্যে বিষ মিশিয়ে খাদিজাকে হত্যা করেছেন। অভিযোগ
পাওয়ার পর গোপালগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে
ঘটনার তদন্ত করি। তবে প্রাথমিক তদন্তে মনে হয়েছে অপবাদ সইতে না
পেরে ক্ষোভে ও অপমানে বিকেলে সামান্য বিষপান করে ছিলেন খাদিজা।
তারপর তিনি মিতু বেগমের ঘরে ইফতার করেন। তবে মিতু বেগম ইফতারে
বিষ মিশিয়েছেন কিনা সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে জানিয়ে ওসি আরও
বলেন, এ ব্যাপারে একটি ইউডি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে
ময়নাতদন্ত শেষে খাদিজার মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
খাদিজার মা মাবিয়া বেগম অভিযোগ করে বলেন, মিতুর শ্বাশুড়ি বেবী ও
ননদ নাজমার সঙ্গে কথা বলেছে খাদিজা। এটি সহ্য করতে পারেননি মিতু
বেগম। তাই প্রতিশোধ নিতেই মিতু ইফতারের মধ্যে বিষ দিয়ে আমার
মেয়েকে হত্যা করেছে। ঘটনার পর নাসির শেখ, তার স্ত্রী, মা ও বোন
বাড়িতে তালা লাগিয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন।
নাসির শেখ ওরফে ঝন্টু বলেন, মেয়েটি অত্যন্ত ভালো ছিলো। আমার ছেলে-
মেয়েকে পড়াতো। ঝগড়াঝাটি কে কেন্দ্র করে খাদিজাকে আমার মা ও
বোন অপবাদ দিয়ে অপমান করে। এটি সইতে না পেরে খাদিজা বিষপানে
আত্মহত্যা করেছে। এখন এলাকার একটি কুচক্রী মহল বিষয়টি
ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। সেই মহলের প্ররোচণায়
খাদিজার মা আমার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছেন। আমার স্ত্রী
তাকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করেনি।