ঝালকাঠি সংবাদদাতাঃ-এক পা দিয়ে ক্রাচে ভর করে টুক টুক করে হেঁেট আসতে দেখা যায় ছোট্ট বালকটিকে। তাঁর পড়নের জামা প্যান্ট ও কাঁেধ স্কুল ব্যাগ দেখে খুব সহজেই বুঝা যায় সে কোন না কোন বিদ্যালয়ের ছাত্র। পথে তাঁর সম্পর্কে জানতে চাইলে সে বলে আমি এখন সময় দিতে পারবো না আমার স্কুলের সময় হয়ে যা”েছ। তখন তাঁকে মটরসাইকেলের পিছনে বসিয়ে বিদ্যালয়ে এগিয়ে দিতে দিতে জানাগেল তাঁর জীবনের কিছু কথা। সে ঝালকাঠির কাঠালিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের আনইলবুনিয়া গ্রামের মোঃ আবু ছালেহ মোল্লার পুত্র মোঃ রেজাউল মোল্লা। তাঁরা দুই ভাই। রেজাউলই সংসারের বড়। জন্মগত ভাবে এক পা হারানো বিকালঙ্গ একজন প্রতিবন্ধী। বাবা গাছের ব্যবসা করে কোন মতে সংসার পরিচালনা করেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়টি বাড়ির নিকটে হওয়ায় মা ছোট বেলায় কোলে করে বিদ্যালয়ে দিয়ে আসতেন এবং ক্লাশ শেষে বাড়ি নিয়ে যেতেন। যখন একটু বড় হলেন তখন বাবা দুটি ক্রাচ বানিয়ে দেন। ক্রাচে ভর করে ৪র্থ ও ২০১৩ সনের শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে ৫ম শ্রেণিতে সন্তোনজনক ফলাফল করে কাঠালিয়া পাইলট মডেল উ”চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। কাঠালিয়া পাইলট মডেল উ”চ বিদ্যালয়টি রেজাউলের বাড়ি থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরত্বে অব¯ি’ত। কিভাবে স্কুলে যাতায়াত করে জানাতে চাইলে রেজাউল জানায়, বাড়ির সামনে দিয়েই বড় পাকা রাস্তা। রাস্তায় বাস চলাচল না করলেও কিছুক্ষণ পর পর অটো গাড়ী চলাচল করে। আমি বিদ্যালয়ে আসার জন্য দাড়িয়ে হাত নাড়ালেও কোন গাড়ী আমাকে নেয় না। কারণ গাড়ীওয়ালারা জানেন যে, আমার বাবা গরীব মানুষ আমাকে ভাড়া টাকা দিতে পারে না। তাই কষ্ট করে প্রতিদিনই ক্রাচে ভর করে বিদ্যালয় যাই। বিদ্যালয়ে যেতে ক্রাচই আমার গাড়ী ক্রাচই আমার একমাত্র ভরসা। প্রতিদিন বিদ্যালয়টি চারটার সময় ছুটি হলে একই ভাবে ক্রাচে ভরে দিয়ে বাড়ি ফিরে আসি। যাওয়া আসা করতে প্রায় ৪ চার ঘন্টা লেগে যায়। তাই বাড়িতে এসে ক্লান্ত হয়ে পড়ি। দুপুরে খুব ক্ষিদে পায় কিন্তু টাকার অভাবে রীতিমত নাস্তাও করা হয় না। তাঁর পরেও মনে মনে আনন্দ পাই যে আমি সবার সাথে পড়ালেখা করি। রেজাউল এবার ২০১৬ সনের জে.এস.সি পরীক্ষার্থী। তাঁর স্বপ্ন পড়ালেখা শেষ করে মা বাবার মুখ উজ্জ্বল করবে। সংসারে বোঝা হয়ে বেচেঁ থাকতে চায় না। তবে ভয় হয় যে কোন সময় আর্থিক কারণে যদি লেখাপড়া বন্ধন হয় যায়। মেধাবী রেজাউল সমাজের বিত্তবানদের একটু সুনজর ও সবার কাছে দোয়া চান।