।।। জাহিদ হাসান সরিষাবাড়ী (জামালপুর) থেকে: বানের জলে ভেসে আসা বন বিশেষজ্ঞদের হাতে ধৃত ভারতীয় বুনোহাতি ‘বঙ্গবাহাদুর’ শিকল ছিড়ে পলায়নের চেষ্টা করেছে গতকাল ভোরে। ফলে ‘ট্যাঙ্কুলাইজার গান’ দিয়ে ‘বঙ্গবাহাদুর’কে ফের পর পর চারটি ‘মেটাল ডার্ট’ (চেতনানাশক ইনজেকশন) নিক্ষেপ করে পুনরায় বাগে আনতে সক্ষম হন উদ্ধারকর্মীরা। এদিকে আলোচিত ‘বঙ্গবাহাদুর’ দর্শন নিয়ে দুই গ্রামবাসির মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে।
উদ্ধারদলের সাথে থাকা বন্যপ্রাণি ও প্রকৃতি সংরক্ষন জামালপুর অ লের ফরেস্টার খলিলুর রহমান ও শেরপুর অ লের ফরেস্টার মামুনুর রশিদ জানান, রোববার ভোর ৪টার দিকে আমগাছের সাথে বাঁধা হাতিটি দুই পায়ের শিকল ছিড়ে ফেলে। সকাল ৭টার দিকে হাতিটি হেটে হেটে প্রায় আধা কিলোমিটার পশ্চিমে কয়ড়া বাইদ্যা বিলের মাঝামাঝি এলাকায় যায়। পরে হাতি উদ্ধারকারী দলের সদস্য বন বিভাগের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মোস্তাফিজুর রহমান পর পর চারটি ‘মেটাল ডার্ট’ (চেতনানাশক ইনজেকশন) নিক্ষেপ করে পুনরায় হাতিটি নিয়ন্ত্রনে আনেন। জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলায় বৃহষ্পতিবার দুপুরে হাতিটি উদ্ধারের পর কামরাবাদ ইউনিয়নের কয়ড়া গ্রামের শাহ আলমের বাড়ির পার্শ্বে একটি আমগাছের সাথে পেছনের দুই পায়ে শিকল পরানো অবস্থায় বাঁধা ছিল। শনিবার সকালেও হাতিটি সামনের দুই পায়ের রশি ছিড়ে পালাতে চেষ্টা করে বলেও তারা জানান।
ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ‘বঙ্গবাহাদুর’ পুনরায় পালাতে চেষ্টা করলে অত্যাধুনিক ‘ট্যাঙ্কুলাইজার গান’ দিয়ে পর পর চারটি ‘মেটাল ডার্ট’ নিক্ষেপ করা হয়। সকাল ১০টায় একটি, ১০.৩০টায় একটি, ১১টায় একটি ও দুপুর ১২টায় একটি ‘মেটাল ডার্ট’ প্রয়োগ করা হয়। বর্তমানে হাতিটির চার পায়ে চারটি লোহার শিকল ও পিঠে নাইলনের মোটা রশি দিয়ে খুটির সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে। হাতিটি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রনে আসায় আর পালানোর সম্ভাবনা নেই বলেও তিনি জানান। তিনি আরো বলেন, ‘বঙ্গবাহাদুর’ বর্তমানে সুস্থ্য রয়েছে। তাকে কলাগাছ, কলা, আখ, গুড়, বাঁশপাতাসহ সবুজ খাবার দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া স্যালাইন ও উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ভিটামিনসহ টানা চিকিৎসাসেবা চলছে।
এদিকে ‘বঙ্গবাহাদুর’কে বশে এনে স্থানান্তর করতে গাজিপুর বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক থেকে চারটি পোষাহাতি আনার কথা থাকলেও দু’টি হাতি আনা হচ্ছে বলে জানা গেছে। উচ্চ প্রশিক্ষিত পোষাহাতি সঙ্কটে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলেও উদ্ধারকর্মীরা জানান। এ ব্যাপারে বন্যপ্রাণি ও প্রকৃতি সংরক্ষন অ ল ঢাকার সাবেক উপ-প্রধান বন সংরক্ষক ড. তপন কুমার দে বলেন, ‘বঙ্গবাহাদুর’ যেখানে রয়েছে সেখানে ট্রাক বা ক্রেন যাওয়ার রাস্তা নেই। তাই পোষাহাতি ও মাহুতের সাহায্যে ‘বঙ্গবাহাদুর’কে প্রায় এক কিলোমিটার হাটিয়ে ডাঙায় নিয়ে ট্রাক বা ক্রেনে ওঠানো হবে। এজন্য তারাকান্দি যমুনা সার কারখানা থেকে ট্রাক ও ক্রেন আনা হচ্ছে। এছাড়া পোষাহাতি এলে আগামিকালের (সোমবার) মধ্যেই ‘বঙ্গবাহাদুর’কে স্থানান্তর করা হতে পারে। তবে ‘বঙ্গবাহাদুর’কে স্থানান্তর করে কোথায় রাখা হবে তা প্রধান বন সংরক্ষকের সাথে বৈঠক করে বন বিভাগের বিশেষজ্ঞরা সিদ্ধান্ত নেবেন বলেও তিনি জানান।
এদিকে আলোচিত ‘বঙ্গবাহাদুর’ দর্শনকে কেন্দ্র করে রোববার সকাল ১১টার দিকে কামরাবাদ ইউনিয়নের কয়ড়া বাইদ্যা বিলে সোনাকান্দর ও শুয়াকৈর গ্রামবাসির মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে উভয়পক্ষে অন্তত ১০ আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহতদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়। ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে বলে থানার উপ-পরিদর্শক আবু সাঈদ জানান