রাকিবুল ইসলাম,গুরুদাসপুরপ্রতিনিধিঃ
সমাজের অসহায় মানুষের মুখে হাঁসি ফোটাতে অর্ধযুগ ধরে কাজ করে যাচ্ছে কল্লোল ফাউন্ডশন নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম প্রথমে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার ৬টি ইউনিয়নব্যাপি থাকলেও বর্তমানে তা বড়াইগ্রাম উপজেলাসহ মোট ১২টি ইউনিয়নে ছড়িয়েছে। ভবিষ্যতে এর কার্যক্রম নাটোর জেলাব্যাপী সম্প্রসারণ করা হবে বলে কর্তৃপক্ষ আশা পোষণ করছেন।
মূলত দুঃস্থ অসহায় মানুষের সেবা, সমাজের পিছিয়ে পড়া লোকদের সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে আসা তথা বেকার যুবসমাজের কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা সমাধানের কথা মাথায় রেখেই ঘরোয়া পরিবেশে যাত্রা শুরু করে এই প্রতিষ্ঠানটি। ২০১২ সালে প্রথমে গুরুদাসপুর পরে বড়াইগ্রামসহ দুই থানায় শুরু হয় এর কার্যক্রম। প্রতিষ্ঠানের মূল নেতা অ্যাডভোকেট কোহেলি কুদ্দুস মুক্তি। তিনি বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগের সহ-সভাপতি। রাজনীতির পাশাপাশি মানবসেবাই তার কর্ম। তিনি সমাজের কিছু সচেতন মানুষকে নিয়ে শুরু করেন কল্লোল ফাউন্ডেশন। যার মাধ্যমে সমাজের বেকার যুবক-যুবতিসহ সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের সেবা করেন।
এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা এ্যাডভোকেট কোহেলী কুদ্দুস মুক্তি জানান, এই সংগঠনের ভবিষ্যত কার্যক্রম পরিচালনার যে ইচ্ছা রয়েছে তা হলো বেওয়ারিশ লাশের সৎকার করা, সামাজিক প্রতিবন্ধীদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন করা। আইপিএম নীতির মাধ্যমে অত্র এলাকার কৃষকদের সুদক্ষ করা, কম খরচে অধিক ফসল ফলানোর উদ্দেশ্যে কৃষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা।
তিনি আরো জানান, বিভিন্ন সমাজ কল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার সাথে সমন্বয় সাধন করার কাজও চলছে। বনায়ন কর্মসূচি, মৎস্য চাষ ও হাস মুরগী পালণের প্রকল্প গ্রহণ, বয়স্ক শিক্ষা কর্মসূচিতে সহায়তা করা ও দরিদ্র মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের আর্থিকভাবে সহায়তা করা, প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বেকার যুবক যুবতীদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, যৌতুক, নারী নির্যাতন ও বাল্য বিবাহ বন্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার কাজও শুরু করা হবে।
এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা দাতা সদস্য আসিফ আবদুল্লাহ্ বিন কুদ্দুস শোভন জানান, মূলত সমাজের পিছিয়ে পড়া অসহায় মানুষগুলোর জন্যই আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। স্বীকৃতি জন্য আমরা কাজ করি না। তবে এটা আমাদের কাজের অনুপ্রেরণা যোগাবে।
গুরুদাসপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান জানান, আমার জানা মতে প্রতি বছর এসএসসি, এইচএসসি ও সমমানের সকল শিক্ষার্থী যারা জিপিএ-৫ পেয়ে থাকেন তাদের সকলকে এই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে একটি করে ক্রেষ্ট, সার্টিফিকেট প্রদানসহ অতি দরিদ্র শিক্ষার্থীদের আর্থিক সাহায্যও করা হয়। এছাড়া, বিভিন্ন সমাজ সেবামূলক কার্যক্রম ও করে থাকে এই প্রতিষ্ঠানটি।
এই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি অধ্যক্ষ মো. মোক্তাদিরুল ইসলাম মিন্টু এবং সাধারণ সম্পাদক মো. মিল্টন উদ্দিন বলেন, এই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিনিয়ত দুঃস্থ রোগীদের সাহায্য ও সহযোগিতা প্রদানসহ ডিজিটাল বাংলাদেশে গড়ার লক্ষ্যে স্কুল-কলেজের ছাত্র/ছাত্রীদের তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর জ্ঞানদান ও কম্পিউটার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। ক্ষুদ্র নৃ-তাত্বিক জনগোষ্ঠিদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তা প্রদানসহ বিভিন্ন প্রকার বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, মাদকদ্রব্যের ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে থাকেন এই প্রতিষ্ঠানের সচেতন একঝাক নবীন প্রবীন স্বেচ্ছাসেবী সদস্য।
এছাড়া, দুঃস্থদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ, বৃক্ষরোপন, ঈদ পূজাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ঈদ সামগ্রী বিতরণ এবং প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে এতিমদের মাঝে খাবার বিতরণসহ নানাবিধ কার্যক্রম পরিচালনা করে চলছে প্রতিষ্ঠানটি।
নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার চাপিলা ইউনিয়নের ক্ষুদ্র নৃ-তাত্বিক গোষ্ঠির নেতা শ্রী ধোনান জয় সরকার (৭৪) ও চাপিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আলাউদ্দিন ভুট্টু বলেন, “স্বপ্ন” মানুষকে বেঁচে থাকার প্রেরণা যোগায়। স্বপ্ন কম-বেশি সকলেই দেখে। কিন্তু এমন কিছু মানুষ আছে যাদের জীবনে স্বপ্নের দুয়ার যেন বন্ধই থেকে যায়। সেই সব অবহেলিত মানুষদের স্বপ্নের দ্বার উন্মোচন করতেই কল্লোল ফাউন্ডেশনের ‘স্বপ্নদার’ নামের একটি স্কুলের যাত্রা শুরু হয়েছে সেই অবহেলিত অন্ধকার এলাকাতে। মূলত চলনবিলের পিছিয়ে পড়া ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠির বয়স্ক ও শিশুদের দোরগোড়ায় শিক্ষা পৌঁছে দিতেই কল্লোল ফাউন্ডেশনের ব্যাতিক্রমি ওই উদ্যোগ। এখানে শিশুদের পাশাপাশি বয়ষ্কদেরও শিক্ষা দেয়া হয়। প্রায় শতাধিক ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির লোকেরা লেখাপড়া করছেন এই বিদ্যালয়ে।
এসব সামাজিক কার্যক্রম চালাতে বেশ কিছু বাঁধা বিপত্তির মধ্যে পড়তে হয়েছে প্রতিষ্ঠানটিকে। তবে সকল বাধা অতিক্রম করে প্রতিষ্ঠানটি আজকের এই অবস্থানে পৌঁছেছে। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলার সেরা ১০টি সামাজিক সংগঠনসহ সর্বমোট ৩০টি সামাজিক সংগঠনের মধ্যে জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ডের-২০১৭ ‘সেরা ৩০’ এর সম্মাননা অর্জন করেছে কল্লোল ফাউন্ডেশন।
সামাজিক উন্নয়ন ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পায় নাটোরের অরাজনৈতিক সংগঠন “কল্লোল ফাউন্ডেশন’। এসময় অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করেন সংগঠনটির সদস্য সাগর হোসেন।
দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সামাজিক কর্মকাণ্ডে অবদান রাখায় এ সংগঠনগুলো নির্বাচিত হয়। সাভারে শেখ হাসিনা জাতীয় যুব কেন্দ্রে এ অ্যাওয়ার্ড বিতরণী অনুষ্ঠিত হয়। এসময় প্রতিনিধিদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।
মুলতঃ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে নির্মমভাবে শহীদ হওয়া ২ বছরের এক শিশুর নাম অনুসারে এই ফাউন্ডেশনের নামকরণ করা হয় “কল্লোল ফাউন্ডেশন”। কল্লোল নাটোর-৪ আসনের সাংসদ এবং নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুসের জ্যেষ্ঠ পুত্র ছিলেন। আব্দুল কুদ্দুস মুক্তিযুদ্ধেরও অন্যতম সংগঠক ছিলেন।
তার স্মৃতি এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধরে রাখতেই ০৯ এপ্রিল ২০১২ তারিখে এলাকার কিছু শিক্ষিত যুবক, বিদ্বোৎসাহী ও সমাজসেবী নবীন-প্রবীন ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত হয় এই কল্লোল ফাউন্ডেশন। এটি নাটোর জেলার গুরুদাসপুর পৌরসভাস্থ ২নং ওয়ার্ডে অবস্থিত। এর মোট সদস্য সংখ্যা ৩৯ জন। মূলত সদস্যদের চাঁদা এবং দাতা ও প্রতিষ্ঠা সদস্যদের চাঁদার মাধ্যমেই চলে এর সকল কার্যক্রম।