জাকির হোসেন, পীরগঞ্জ (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি ঃ কেউ এসেছেন ব্যবসায়
উন্নতি লাভের আশায়,কেউ রোগের মুক্তি লাভের আশায়, কেউবা সন্তান পাওয়ার আশায়।
আবার অনেকে এসেছেন চাকুরী পাবার আশায়। কার কাছে এসেছেন? ধামের পূজায়
তেত্রিশ কোটি দেবতার কাছে এইসব লাভের আশায় তারা পূজা দিতে এসেছিলেন।
মঙ্গলবার সকাল থেকে চলছে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার বাঁশগাড়া গ্রামে হিন্দু
সম্প্রদায়ের মানুষের অংশগ্রহণে ধাম বা বারোলিয়া ধাম পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পূজা
দিতে আসা প্রত্যেকেই কোনো না কোনো লাভের আশায় এখানে এসেছিলেন। আবার
অনেকে বিগত বছরে পূজা দিয়ে লাভবান হওয়ায় দেবতার কাছে সন্তুষ্টি প্রকাশ করতে
সাথে নিয়ে এসেছিলেন কবুতর,মুরগি,দুধ,কলা। দেবতার জন্য সাথে নিয়ে আসা এই
জিনিসগুলো তারা পুরোহিতের কাছে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে কথা হয় পূজা দিতে আসা
বেশ কয়েকজন মানুষ ও পূজা উদ্ধসঢ়;যাপন সংশ্লিষ্টদের সাথে।
‘চার বছর আগে আমি এখানে এসে সন্তান পাওয়ার জন্য পূজা দিতে এসেছিলাম।
পূজা দেওয়ার পরের বছরেই আমার স্ত্রী গভবর্তী হয় এবং আমি মেয়ের বাবা হই। এখন
আমার দুই মেয়ে। বড় মেয়ের বয়স আড়াই বছর, ছোটটার বয়স ৭ মাস। এরপর থেকে
প্রত্যেক বছরেই আমি,আমার স্ত্রী-সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে এখানে পূজা করতে আসি’
এই কথাগুলো বলছিলেন উপজেলার শান্তিবাগ এলাকা থেকে আসা নয়ন চন্দ্র বিশ্বাস নামে
এক ব্যক্তি। তিনি আরও বলেন, ‘আমার স্ত্রীর গর্ভে সন্তান আসছিল না। কিন্তু এখানে
পূজা দেওয়ার পর পরই আমার স্ত্রী গর্ভবতী হয়। এখানে পূজা দিয়ে কাজ হয়েছে বলেই তো
প্রতি বছরে এখানে দেবতাকে পূজা দিতে আসি।’
কবুতর নিয়ে পূজা দিতে আসা সুফলা রাণী নামে এক নারী বললেন,‘আমার স্বামী খুবই
অসুস্থ হয়ে গেছিল। এরপর আমি মনে মনে দেবতার কাছে প্রার্থনা করি যে ‘‘যদি
আমার স্বামী সুস্থ হয়ে যায়। তাহলে আমি এখানে এসে পূজা দিব।’’ এখন আমার
স্বামী সুস্থ হয়ে গেছে। তাই এবার এক জোড়া কবুতর নিয়ে পূজা দিতে এসেছি।’
নয়ন চন্দ্র ও সুফলা রাণীর মতো আরও অনেকেই লাভবান হওয়ার পর ধামের পূজা দিতে
এসেছিলেন। তবে অনেকে আবার লাভের আশায়ও প্রথমবারের মতো পূজা দিতে
এসেছিলেন।
পাশ্ববর্তী রাণীশংকৈল উপজেলার রাতোর ইউনিয়ন থেকে চাকুরী লাভের আশায় পূজা
দিতে এসেছিলেন সুজন চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন মানুষের মুখে শুনেছি
এখানে পূজা দিয়ে দেবতার কাছে কিছু চাইলে তিনি সে আশা পূরণ করে দেন। তাই
আমিও এবার চাকুরী পাবার আশায় পূজা দিতে এসেছি। চাকুরী যদি পাই তাহলে
প্রতি বছর এখানে পূজা দিতে আসবো।’ পূজা দিতে আসা আরও বেশ কয়েকজনের
সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাদের প্রত্যেকেই দেবতার কাছে পূজা দিতে
এসেছিলেন লাভের আশায়।
চন্দন চক্রবতী নামে এক পুরোহিত জানালেন, এই পূজাকে ধাম বা বারোলিয়া ধামের
পূজা বলা হয়। আষাঢ় মাসের প্রথম মঙ্গলবার এই পূজা একদিন দিনব্যাপী করা হয়ে থাকে।
তিনি বলেন,‘তেত্রিশ কোটি দেবতার পূজা এটি। সব দেবতারই পূজা করা হয় এখানে।’
এই পূজা উদ্ধসঢ়;যাপন কমিটির সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় বলেন, ‘৫ হাজারেও বেশি মানুষ
এখানে পূজা দিতে আসে। ব্রিটিশ আমলের পর থেকেই এই পূজা হয়ে আসছে এখানে।
যুগ যুগ ধরে এই পূজা হয়ে আসছে। মানুষজন এখানে লাভের আশায় দেবতাকে পূজা
দিতে আসে। অনেকেই পূজা দিয়ে লাভবান হয়,অনেকের অনেক আশা পূরণ হয়। এই ধাম
পূজাকে কেন্দ্র করে বাঁশগাড়া স্কুল মাঠে বসেছিল মেলার আসর। ছোট থেকে বড়রা
এসেছিল মেলায় ঘুরতে। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে বাহারি পণ্যের পসরা বসিয়েছিলেন
দোকানিরা। সেই সাথে বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলা। শিশুদের আকৃষ্ট করতে রঙ-
বেরঙের বেলুনও দেখা যায়। বাবা-মায়ের সাথে শিশুদের ঘুরতেও দেখা যায়।