টি.আই সানি, শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি:
গাজীপুরের শ্রীপুরের পৌরসভার কেওয়া পশ্চিম খন্ড (মাওনায়)
জেএমবির আস্তানা সন্দেহে একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে
পুলিশ। দোতলা বিশিষ্ট ওই বাড়ী থেকে আব্দুর রহমান (৩৭) নামে এক
ব্যাক্তিকে আটক করেছে। আটক রহমানের বাড়ি দিনাজপুরের
দেবীগঞ্জ উপজেলার কালীগঞ্জ গ্রামে। এসময় তার ঘর থেকে ৩টি
পিস্তল ও ৪টি বোমা উদ্ধার করা হয়।
রবিবার ভোরে শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়া পশ্চিম খন্ড (মাওনা আলহেরা
হাসপাতাল) সংলগ্ন বাড়ী থেকে তাকে আটক করা হয়। প্রায় ১৩-
১৫ সদস্যর এক দল পুলিশ ওই বাড়িটি বিকেল ৩টা পর্যন্ত নজরদারীতে
রেখেছিল।
কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট সূত্রে জানা যায়, গোপন তথ্যের
ভিত্তিতে পুলিশ সদর দপ্তরের এলআইসি শাখা, কাউন্টার টেরোরিজম
ইউনিট ও বগুড়া জেলা পুলিশ যৌথভাবে এই অভিযান পচিালনা করে।
কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কাছে তথ্য ছিল ওই বাড়িতে
জেএমবির চার-পাঁচজন সদস্য রয়েছে। ঢাকা থেকে আসা বোম্ব
ডিসপোজাল ইউনিট মাওনায় ওই বাড়িতেই বোমাগুলো
নিষ্ক্রিয় করে। বেলা ৩টার দিকে অভিযান শেষ হয় বলে জানান
গাজীপুর কালিয়াকৈর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার
(এএসপি) শাহীদুল ইসলাম। তবে এ ছাড়া আর বেশিকিছু তিনি
সাংবাদিকদের জানাতে পারেননি।
শাহীদুল ইসলাম আরো জানান, আমরা শ্রীপুর থানা পুলিশ
অভিযানিক দলকে সহযোগীতা করেছি মাত্র। চারবার বোমা
নিষ্ক্রিয়ের শব্দ শুনে বুঝতে পারি ওই বাড়ি থেকে পাওয়া চারটি
বোমা নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। অভিযানের বিষয়ে আর কিছু
তিনি জানেনি বলে জানান।
রবিবার বেলা সাড়ে ১১টার থেকে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট
ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার রহমতুল্লাহ চৌধুরী ও কাউন্টার
টেরোরিজেমের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এডিশনাল এসপি)
আহসান হাবিব ও বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের পরিদর্শক
মুমিন খানের নেতৃত্বে একটি টিম দোতলা বাড়িতে প্রবেশ
করে। এ সময় ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি মাওনা জোনাল
অফিসের লাইনম্যান রুবেল মিয়া ওই বাড়ির বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ করে
দেন। মাওনা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার আল আমিনের
নেতৃত্বে ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম আবদুর রহমান
যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে ঘরে পানি ছিটিয়ে দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তারা কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে
পেয়েছেন। তারা ধারণা করছেন, এগুলো বোমা নিষ্ক্রিয় করার শব্দ।
বাড়ীর মালিক রফিকুল ইসলাম জানান, রবিবার ভোর আনুমানিক
৪টায় ঢাকা পুলিশ সদর দপ্তরের এক দল পুলিশ তার বাসার নিচে
আসে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এডিশনাল এসপি) পরিচয়ে তার
মুঠোফোনে ফোন দিয়ে বাসার নিচে নামতে বলে। নিচে আসলে
বাসার
নিচ তলার ঘর তল্লাশী করার কথা বলে তাকে বাসায় (উপরে দোতলায়)
চলে যেতে বলে। এক ঘন্টা তল্লাশী শেষে সকাল ৫টায় আবার তাকে
বাসা থেকে ডেকে নিয়ে আসে পুলিশ। এসময় তার নিচ তলার
ভাড়াটিয়া আব্দুর রহমানকে আটক করে এবং তার ঘর থেকে ৩টি
পিস্তল ও ৪টি বোমা পাওয়ার কথা জানায় পুলিশ। তবে পুলিশ তাকে
একটি পিস্তল দেখিয়েছে এবং বোমাগুলো ভাড়াটিয়ার ঘরের
টেবিলের ড্রয়ারে রেখে গেছেন বলে জানান। ঢাকা থেকে একদল
পুলিশ এসে বোমা নিষ্ক্রিয় করবেন বলেও পুলিশের ওই কর্মকর্তা
তাকে বলে যায়।
তিনি আরো জানান, আব্দুর রহমান স্ত্রী শামসুন্নাহারকে নিয়ে
দুই মাস আগে সাড়ে তিন হাজার টাকায় তার নিচ তলার একটি
ঘর ভাড়া নিয়ে বসবাস করে আসছে। সে পেশায় প্রাইভেটকর চালক
(ড্রাইভার) বলে বাড়ির মালিকের কাছে জানায়। তবে স্থানীয় কোন
রেন্ট-এ কার থেকে এবং কার প্রাইভেটকার ভাড়া নিয়ে চালাতো তা
তিনি জানাতে পারেননি। আপানরা এখানে কতক্ষন থাকবেন
প্রশ্নে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশের এক
কনস্টেবল জানান, ঢাকা থেকে বোমা নিষ্ক্রিয় টিম আসারা পর
আমাদের অভিযান (ডিউটি) শেষ হবে।
বাড়ির মালিকের ছোট ভাই বাচ্চু মিয়া বলেন, বড় ভাই রফিক
মিয়ার বাসায় দুই মাস যাবৎ আব্দুর রহমান স্ত্রীকে নিয়ে ভাড়ায়
ওঠে। তাদের কোন সন্তান ছিলনা। তার স্ত্রী আশেপাশের বাসাবাড়ির
মহিলা বা কোনো পুরুষদের সাথে কথা বলত না। মাঝে মাঝে
বিকেলের দিকে ঘর থেকে বের হতে দেখলেও মুখ ওড়না দিয়ে ঢেকে
রাখতো। তার ঘরে একটি শিশু ছিল। ওই শিশু প্রায়ই কান্না করতো।
গত কয়েকদিন আগে ২মাস বয়সী একটি শিশু নিউমোনিয়ায়
আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে শুনতে পারি সে ওই শিশুকে পালিত কন্যা
হিসেবে এনেছিল। আশপাশের বাড়ির মহিলাদের কাছে শুনা যায়
আব্দুর রহমান নি:সন্তান থাকাই ওই শিশুকে প্রায় ৫লাখ টাকায়
কিনে আনে।
তিনি আরো জানান, আজ রবিবার সকাল সাড়ে ৫টার সময় হঠাৎ
করেই আমার বাড়ীসহ আশে পাশের সকল বাড়ীর গেটের সামনে
পুলিশ দেখতে পায়। এসময় পুলিশ কাউকে বাসা থেকে বের হতে
দেয়নি। আমি সকাল ৬টার সময় বাসার জানালা দিয়ে দেখতে পায়
কয়েকজন পুলিশ সদস্য আব্দুর রহমানকে বাসা থেকে বের করে নিয়ে
যাচ্ছে।
পাশের বাসার ভাড়াটিয়া মরিয়ম আক্তার বলেন, আব্দুর রহমানের স্ত্রী
সবসময় পর্দা অবস্থায় থাকতো। কিছুদিন হলো তাদের একটি
পালিত শিশু অসুস্থ হয়ে মারা গেছে। আমরা শুনেছি অনেক টাকা
দিয়ে সে শিশুটিকে কিনে এনেছিল।