অনলাইন ডেস্কঃ-
রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে আদালতে (চার্জশিট) জমা দেওয়া হবে। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া আজ বৃহস্পতিবার ডিএমপি সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেছেন।
আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘ভয়াবহ ওই জঙ্গি হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) প্রস্তুত। শিগগিরই তা আদালতে দাখিল করবে তদন্তকারী সংস্থা পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)। এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ, অস্ত্র-বোমা সংগ্রহ ও সমন্বয়সহ বিভিন্ন পর্যায়ে জড়িত ২২ জনের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত সংস্থা।’
ডিএমপির কমিশনার আরো জানান, এদের মধ্যে হামলায় অংশগ্রহণকারী পাঁচ জঙ্গিসহ ১৩ জন নিহত হয়েছে। বাকি নয়জনের মধ্যে সাতজন কারাগারে ও দুজন পলাতক রয়েছে। তবে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক হাসনাত করিমকে মামলার চার্জশিটে আসামি করা হবে কি না- সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। হাসনাত রেজা করিম এখনো কারাগারে আছেন।
তদন্ত সূত্র জানায়, হামলায় অংশ নেওয়া পাঁচ জঙ্গি নিহত হয়েছে। তারা হলেন ঢাকার রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, মীর সামেহ মোবাশ্বের, নিবরাস ইসলাম, বগুড়ার শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল। তারা ২০১৬ সালের ২ জুলাই সকালে সেনা কমান্ডোদের অভিযানে নিহত হয়।
এ ছাড়া পরবর্তী সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন অভিযানে আরো আটজন নিহত হয়। তাঁরা হলেন তামিম আহমেদ চৌধুরী, নুরুল ইসলাম মারজান, তানভীর কাদেরী, মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলাম ওরফে মুরাদ, রায়হান কবির তারেক, সারোয়ার জাহান মানিক, বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট ও মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান।
বাকি নয় আসামির মধ্যে কারাগারে থাকা সাত আসামি হলেন রাজীব গান্ধী, মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, হাতকাটা সোহেল মাহফুজ, হাদিসুর রহমান সাগর, রাশেদ ইসলাম ওরফে আবু জাররা ওরফে র্যাশ ও আবদুস সামাদ ওরফে মামু। এ ছাড়া অপর দুই আসামি শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ও মামুনুর রশীদ ওরফে রিপন পলাতক আছে।
সিটিটিসি সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ১ জুলাই হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার ঘটনায় ‘মাস্টারমাইন্ড’সহ চিহ্নিত ২২ জনের সবাই নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির নব্য ধারার (নব্য জেএমবি) সঙ্গে যুক্ত। জীবিত অবস্থায় গ্রেপ্তার সাত আসামির মধ্যে তিনজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। হামলার পরিকল্পনা হয়েছিল গাইবান্ধার একটি দুর্গম চরে। হামলায় সরাসরি যুক্ত পাঁচ জঙ্গিকে সামরিক প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছিল সেখানে।
মামলায় গ্রেপ্তার চারজনের মধ্যে আছে রাজীব ওরফে রাজীব গান্ধী ওরফে জাহাঙ্গীর। এরইমধ্যে তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাঁর জবানবন্দিতে হামলায় জড়িতদের নাম এসেছে। এ ছাড়া হামলার অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহকারী মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান ও রাকিবুল হাসান রিগ্যান আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
সূত্র আরো জানায়, গুলশান হামলার মাস্টারমাইন্ড এবং সমন্বয়কারী ছিল বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তামিম আহমেদ চৌধুরী। তাঁর সঙ্গে পরিকল্পনা এবং হামলার অপারেশনাল কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেছে নুরুল ইসলাম মারজান। ঘটনার দুই মাস পর ২৭ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় পুলিশের অভিযানে তামিম নিহত হন।
মারজান গত বছরের ৫ জানুয়ারি রাজধানীর মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। গুলশানে হামলাকারীদের গাইবান্ধার চরে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলাম ওরফে মুরাদ। জাহিদ গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর রূপনগরে এবং রায়হান ২৬ জুলাই কল্যাণপুরে পুলিশের অভিযানে নিহত হন।
গুলশানে হামলাকারী জঙ্গিদের থাকার জন্য ঢাকায় বাসা ভাড়া করেছিলেন ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের কর্মকর্তা তানভির কাদেরী। হামলাকারী পাঁচ জঙ্গি হামলার মিশন বাস্তবায়ন করেছে তানভির কাদেরীর ভাটারার বাসা থেকে।
তানভির কাদেরী ২০১৬ সালের ১০ সেপ্টেম্বর আজিমপুরে পুলিশের অভিযানে নিহত হন। হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী সারোয়ার জাহান ২০১৬ সালের ৮ অক্টোবর আশুলিয়ায় র্যাবের অভিযানে নিহত হন।
২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালিয়ে দুই পুলিশসহ দেশি-বিদেশি ২২ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ অভিযান ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ডে’ পাঁচ জঙ্গি নিহত হয়।
অভিযানে জাপানের একজন ও শ্রীলঙ্কার দুজনসহ ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় ৪ জুলাই গুলশান থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করে পুলিশ।
সুত্র,এনটিভি