স্পোর্টস ডেস্কঃ
গ্রুপ পর্বের হিসাব-নিকাশ শেষ হওয়ার পরই ক্ষণ গণনা শুরু। উত্তেজনার মাত্রাটাও বাড়তে শুরু করে দিয়েছে তখন থেকে। দ্বিতীয় রাউন্ডেই মুখোমুখি হয়ে যাচ্ছে এবারের বিশ্বকাপের অন্যতম দুই ফেবারিট আর্জেন্টিনা এবং ফ্রান্স। অথ্যাৎ, কোয়ার্টারে ওঠার আগেই সাঙ্গ হয়ে যাচ্ছে এই দুই দেশের মধ্যে যে কোনো একটির বিশ্বকাপ যাত্রা।
দ্বিতীয় রাউন্ডের প্রথম ম্যাচ থেকেই সেই উত্তেজনার মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে রাশিয়া বিশ্বকাপ। প্রথম ম্যাচেই যে বারুদ ছড়িয়ে দিচ্ছে! মুখোমুখি হচ্ছে আর্জেন্টিনা আর ফ্রান্স। আর কিছুক্ষণ পরই রাশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম শহর কাজানের কাজান এরেনায় বাজবে রেফারির কিক-অফের বাঁশি। ম্যাচটা বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৫ হাজার কিলোমিটার দুরে। কিন্তু; কী আশ্চর্য! কাজান এরেনায় আর্জেন্টিনা-ফ্রান্স ম্যাচের ঢেউ সুনামির মত প্রবল বেড়ে আছড়ে পড়েছে বাংলাদেশে।
সারা বিশ্বের অন্যসব দেশের মত বাংলাদেশের কোটি কোটি আর্জেন্টাইন ভক্ত এখন অধীর আগ্রহে বসে টিভির সামনে। প্রিয় দল আর্জেন্টিনা, প্রিয় ফুটবলার লিওনেল মেসির পায়ের জাদু দেখার অপেক্ষায় তারা। রাত ৮টায় ম্যাচ। কিন্তু সাধারণ মানুষ হাতের কাজ শেষ করে ফেলেছে সন্ধ্যার আগেই। সব ঝঞ্জাটমুক্ত হয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রিয় দলের ম্যাচটি দেখার অপেক্ষায় সবাই।
ফ্রান্সের সমর্থনও কম নেই। মূলতঃ আর্জেন্টিনাছাড়া যে যে দলেরই সমর্থক হোন না কেন, আজ আর্জেন্টিনার বিরোধী শিবির ফ্রান্সের সমর্থক সবাই। কে জিতবে, কে হারবে? এমন একটা দোলাচলে দুলছে এখন পুরো বাংলাদেশের ফুটবল ভক্ত মানুষ।
কী জুটবে আর্জেন্টিনার কপালে? ২০১৪ সালের মত আরো একবার কি খালি হাতেই বিদায় নিতে যাচ্ছেন মেসি? ৩২ বছরের শিরোপাখরা আর্জেন্টিনাকে প্রতিনিয়ত পীড়া দিয়েই যাচ্ছে। দিয়েগো ম্যারাডোনার ১৯৮৬ বিশ্বকাপের পর বিশ্বকাপে দু’বার ফাইনালে উঠেও ব্যর্থ হতে হয় তাদের। ২০০৬ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত টানা দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠে যাচ্ছে আর্জেন্টিনা। কিন্তু এবারের পরিস্থিতিটা একটু জটিলই বটে।
হোর্হে সাম্পাওলির দলের প্রতি আস্থা রাখতে পারছেন খুব কম মানুষই। মূলতঃ তার খেলার ধরণ কিছু খেলোয়াড়দের নিয়মিত না খেলানোর, ফরমেশন নিয়ে কাটাছেঁড়া করা ইত্যাদি কৌশলগত কারণে সাম্পাওলির দল নিয়ে বাজি ধরার লোকের সংখ্যা নেহাত হাতে গোণা কয়েকজন; কিন্তু যে দলে বিশ্বের দুই সেরা খেলোয়াড়ের একজন রয়েছেন তাদের কী আর হিসেবের বাইরে রাখা যায়!
ফ্রান্সের বিপক্ষে আর্জেন্টিনার ম্যাচকে ঘিরে হাজার মাইল দূরের বাংলাদেশের উত্তেজনা বেশ চরমে উঠেছে। শেষ ম্যাচে নাইজেরিয়াকে দারুণভাবে হারানোর পর দেশের আর্জেন্টাইন সমর্থকদের মেসি বন্দনা। ম্যাচ শেষ হওয়ার পর মিছিল, র্যালিতে মাতিয়ে রেখেছিল তারা। এ ম্যাচকে ঘিরেও অনেকটা সেরকম পরিবেশই বিরাজ করছে সর্বত্র।
রাজধানীর রবীন্দ্র সরোবরে ইতোমধ্যে বড় পর্দায় খেলা দেখানোর ব্যবস্থা করে হয়েছে। হাজার হাজার মানুষের ভিড় জমে সেখানে। আর্জেন্টিনার ম্যাচকে কেন্দ্র করে তো তিল ধারণের ঠাঁই থাকবে না রবীন্দ্র সরোবর এলাকায়। এছাড়া শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি প্রাঙ্গনসহ বিভাগীয় শহর, জেলা শহর কিংবা প্রত্যন্ত অঞ্চলেও আর্জেন্টিনার ম্যাচ দেখার জন্য জায়ান্ট স্ক্রিনের সামনে ভিড় জমাচ্ছে সমর্থকরা। মেসিদের ম্যাচ নিয়ে সমর্থকদের এমন চাপা উল্লাসে ইতোমধ্যে ঢাকার জ্যামযুক্ত রাস্তা ফাঁকা হতে শুরু করেছে। ম্যাচ চলাকালীন সময়ে রাস্তায়, বাসে কিংবা অন্যত্র বাইরে থাকা লোকজনও যে ম্যাচ নিয়ে একে অন্যকে জিজ্ঞাস করবেন সেটা বলাই বাহুল্য।
কালের বিবর্তনে ফুটবল নিয়ে তর্কগুলো এখন চলে এসেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। সেখানে আর্জেন্টাইন সমর্থকরা আগে থেকেই তাদের দলকে নিয়ে গলাবাজি শুরু করে দিয়েছেন। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সেই গলাবাজি আরও বাড়ছে। যে দলটা নাইজেরিয়ার বিপক্ষে পূর্ণ উদ্যমে খেলে ম্যাচ জিততে পেরেছে তারা ফ্রান্সের বিপক্ষেও জেতার যোগ্যতা রাখে বলে মনে করেন অনেকে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাফিউল সাব্বির নামে একজন লিখেছেন, ‘আর্জেন্টিনা দলটা নিয়ে এবার ভয় হচ্ছে। শেষ ম্যাচে তারা জিতলেও অনেক ভুল পাস দিয়েছে। তবে মেসি থাকায় আমরা জয়ের আশা করতেও পারি। তবে ম্যাচটি যে বেশ উপভোগ্য হবে সেটা আমি নিশ্চিত।’
মশিউর রহমান নামে একজন লিখেছেন, ‘আর্জেন্টিনা আন্ডারডগ হিসেবে মাঠে নামছে। প্রত্যাশার চাপ কম থাকবে। আর এ ব্যাপারটাই আর্জেন্টিনার জন্য সবচেয়ে বড় পজিটিভ দিক। মেসি, ডি মারিয়া, আগুয়েরো, মাচেরানো বড় ম্যাচের খেলোয়াড়। অতএব, আমার বাজি আর্জেন্টিনার পক্ষেই।’
রায়হান নিবিড় লিখেছেন, ‘আর্জেন্টিনার উচিৎ তাদের সেরাটা খেলা বিশেষ করে মাঝ মাঠের দখল নিয়ে খেলা। নাহলে ফ্রান্সের সাথে জেতা সুবিধা কঠিন হবে আর ডিফেন্স টা ঠিক রাখতে হবে।’
আর্জেন্টিনার সমর্থকদের মত চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলিয়ান সমর্থকদের মাঝেও। লা আলবিসেলেস্তেদের হার কামনা করলেও মেসিদের কাছ থেকে আক্রমণাত্মক খেলা দেখতে চান সেটাও তারা মানেন। নেইমার-কৌতিনহোদের মত এখনো অনুজ্জ্বল আর্জেন্টিনার আক্রমণভাগ। এক মেসি ছাড়া এখনো কেউ আলো ছড়াতে পারেননি; কিন্তু পুরো পৃথিবীর আর্জেন্টাইন ভক্তদের প্রত্যাশা ফ্রান্সের বিপক্ষে পুরো আর্জেন্টিনা দল বুক উঁচিয়ে, আবেগ মিশিয়ে, ক্ষুরধার মস্তিষ্কের কৌশলের মাধ্যমে দেশকে জেতাতে ঠিকই খেলবেন তারা।