বাংলার প্রতিদিন অনলাইন ,
প্রায় সাত বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে মানসিক প্রতিবন্ধী হন বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার দীঘি সাজাপুর গ্রামের রিকশাচালক হাসান ফকির (২৬)। দরিদ্র বাবা অনেক চিকিৎসা করেও তাকে সুস্থ করে তুলতে পারেননি। মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় পরিবারের সদস্যরা তার পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখতেন।
সোমবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এসএম জাকির হোসেন তাকে বাড়িতে গিয়ে শিকলমুক্ত করেন। চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানোর উদ্যোগ নেন। উপজেলা পরিষদ থেকে তার চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়া হয়েছে বলে জানান ইউএনও।
বগুড়ার দুপচাঁচিয়ার দীঘি সাজাপুর গ্রামের বাসিন্দা ও হাসানের বাবা আবদুল আজিজ ফকির জানান, নিজের টিনের ছাউনি দেয়া মাটির দুটি ঘর ছাড়া তার আর কিছু নেই। ছাগল ও ভেড়া লালন-পালন করে সংসার চালান তিনি। তার ছেলে হাসান চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। অভাবের সংসারে হাল ধরতে বগুড়া শহরে রিকশা চালাতো তার ছেলে। ৯ বছর আগে তাকে বিয়ে করানো হয়। ঘরে ৮ বছর বয়সী মেয়ে আছে। স্থানীয় স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে।
তিনি আরও জানান, হাসান প্রায় সাত বছর আগে গ্রামের ছেলেদের সঙ্গে পিকনিকে যায়। ফেরার পথে বাসের ছাদ থেকে পড়ে সে আহত হয়। এরপর থেকে সে অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে। তাকে বগুড়ার বিভিন্ন ডাক্তার ও পাবনার মানসিক হাসপাতালেও চিকিৎসা করানো হলেও ভালো হয়নি। বাড়ি থেকে বের হলে প্রতিবেশীরা তাকে ঢিল ছুঁড়তো, নানাভাবে বিরক্ত করতো। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পায়ে শিকল দিয়ে রাখা হয়েছিল। তবে যখন ভালো থাকতো তখন শিকল খুলে দেয়া হতো। তার এ রকম আচরণের কারণে পাঁচ বছর আগে স্ত্রী তার বাবার বাড়ি চলে গেছে। সংসারের অভাবের কারণে হাসানের ভালো চিকিৎসা করানো সম্ভব হচ্ছিল না।
দুপচাঁচিয়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আবু সালেহ মোহাম্মদ নূহ জানান, হাসানের চিকিৎসার জন্য নবাগত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে তিনি জানিয়েছিলেন।
দুপচাঁচিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এসএম জাকির হোসেন জানান, তিনি সমাজসেবা কর্মকর্তার মাধ্যমে হাসানকে বিনা চিকিৎসায় বাড়িতে পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখার খবর পান। বিষয়টি খুবই অমানবিক হওয়ায় তিনি সোমবার দীঘি সাজাপুর গ্রামের বাড়িতে গিয়ে হাসানকে শিকলমুক্ত করেন। তাকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। উপজেলা পরিষদ থেকে তার চিকিৎসার ব্যয় বহন করা হবে।