শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি:
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নগর হাওলা তরমুজ পাড়া গ্রামের এক কৃষকের
জমি কয়েক ব্যক্তি দখল করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায়
শ্রীপুর থানা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই প্রবাসী কৃষক।
লিখিত অভিযোগে ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলার বড়কাশর গ্রামের মৃত
আব্দুল বারেকের পুত্র তাইজ উদ্দিন। তিনি উল্লেখ করেন, ০২/১০/২০০৩ ইং সালে
শ্রীপুর উপজেলার ধনুয়া মৌজায় ৮৫৫৬নং সাব কবলা দলিল মূলে ৪৫.৫ শতাংশ
জমি ক্রয় করে ভোগ-দখল করে আসছেন। ক্রয় কৃত জমিতে তাইজ উদ্দিন ছাপড়া ঘর
নির্মাণ করেন,এবং ৬শত আকাশমনি গাছের চারা রোপন করে ও জমির চতুর
পাশে কাটা তারের বেড়া দিয়া বিগত ১৫ থেকে ২০ বছর যাবৎ ভোগ দখল করে
আছেন।
তাইজ উদ্দিন আরো বলেন,আমি এক জন প্রবাসী শ্রমিক বিদেশে থেকে অনেক
কষ্ট করে টাকা কামিয়ে অল্প একটু জমি কিনেছি। আমার পরিশ্রমের টাকা
দিয়ে নগর হাওলা তরমুজ পাড়া গ্রামের মৃত হজরত আলীর দুই ছেলে আলম মিয়া ও
আমজত আলীর কাছ থেকে ২০০৩ সালে জেলা-গাজীপুর থানা ও সাব রেজিঃঅফিস
শ্রীপুর অধীন ৪নং ধনুয়া মৌজাস্থিত এস.এ ১৯৫ আর. এস ৪২৩ এস.এ ২৮৬ ও
আর.এস ২৭১নং খতিয়ানে এস.এ ১৯৫ এবং আর.এস ৪২৩ নং খতিয়ানে দাগ-
সি.এস ও এস. এ ২০৬,যাহার আর.এস ৩০৭৮,৩০৭৯,সি.এস ও এস.এ ২০৫ যাহার
আর.এস ৩৭২৬ নং দাগে মোট জমির পরিমান ২ একর ২৩ শতাংশ ইহার কাতে ৪৫.৫
শতাংশ জমি আমি আমার নিজ নামে খাজনা খারিজ সকল কাগজ সঠিক ভাবে
করার পর বিগত ১৫ থেকে ২০ বছর আগে ক্রয় করেছি। হঠাৎ করে উপজেলার
নগরহাওলা গ্রামের বাসিন্দা মৃত কাজিম উদ্দিনের পুত্র আব্দুল মালেক উল্লেখিত
জমি জবর দখল করিয়া নিবে বলে ষড়যন্ত্রসহ ভয়-ভীতি ও হুমকি প্রদান করে আসছে।
পরে তার কিছু দিন পূর্বে আমি জমিতে ঘর নির্মণ করার জন্য তিন গাড়ী
ইটা,২গাড়ী বালি,২শত কেজি রড,৫০বস্তা সিমেন্ট সহ ঘর নির্মাণে
সরমঞ্জামাদি আনিয়া ছাপড়া ঘরে রাখি। কিন্তু ১৬/০৫/২০১৮ ইং তারিখে বেলা
অনুমান ১১টার দিকে আব্দুল মালেক স্থানীয় সাবেক চেয়ারম্যান আবুল
হাসেমের পরস্পর যোগসাজেসে বেআইনী ভাবে জনতাবব্ধে একযোগে দা,লাঠি
লোহার রড ইত্যাদি মারাত্বক অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আমার ঘর নির্মাণের
যন্ত্রপাতি নিয়া উল্লেখিত জমিতে অনধিকার প্রবেশ করে সকল মালামাল নিয়ে
যায়।
এবং আব্দুল মালেক ও সাবেক চেয়ারম্যান আবুল হাসেম কয়েকজনকে নিয়ে জাল
জালিয়াতি দলিল তৈরি করে আমার ক্রয় কৃত জমিতে সীমানাপ্রাচীর দিয়ে ওই
জমি দখল করছেন। জালিয়াতি দলিল তৈরি করে জমি দখল করার বিয়ষে বিজ্ঞ অতিরিক্ত
চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্টেট আদালত,গাজীপুর ২/৭/২০১৮ ইং পনের জনের নাম
উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেছে। মৃত আহাম্মদ আলীর তিন ছেলে হাছেন
আলী,ছামাদ,জামাল উদ্দিন,মৃত ছাবু শেখের ছেলে হালিম উদ্দিন,মৃত কাজিম
উদ্দিনের দুই চেলে আব্দুল মালেক ও শারফুর ইসলাম,ইদ্রিছ আলী,আছমত
আলী,রোসমত আলী,ইসমত আলী,সুরুজ মিয়া,ফিরুজ
মিয়া,সিরাজ,মোমতাজ উদ্দিন এবং সাবেক চেয়ারম্যান আবুল হাসেম এর নাম
নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন তাইজ উদ্দিন।
ভুক্তভোগী কৃষকের ভাষ্য মতে,ইতিমধ্যে ওই জমিতে আমি যেতে পারছিনা,
তাঁদের সন্ত্রাস বাহিনী দিয়ে দখল করে রেখেছে। বার বার থানায় অভিযোগ করেও
কোনো প্রকার ফল পাচ্ছিনা। আমার বিদেশে যাওয়ার ভিসা বাতিল হয়ে যাওয়ার
পথে। পুলিশকে টাকা দিয়ে মেনেজ করে রেখেছে তারা ,যাতে আমার কোনো
অভিযোগ বা মামলা শ্রীপুর থানায় না নেয়। আমি এখন নিরোপাই হয়ে ধারে
ধারে ঘুরছি,কোথাও কোনো সঠিক বিচার পাচ্ছিনা।
দেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সহ বিশিষ্টজনের কাছে আমার আকুল আবেদন
আমি এক জন প্রবাসী শ্রমিক,আমার এই জমি টুকুই সম্বল,বিদেশের
মাটিতে অনেক পরিশ্রম করে জমি টুকু কিনেছি সঠিক বিচারের মাধ্যমে
যেন আমার ক্রয় কৃত জমি ফেরত পাই।
মৃত আলী নেওয়াজের ছেলে হাজ্বী সরাফত আলী বলেন,আমার বাপ চাচারা ছিলো
৬ভাই অনেক আগে আমার বাকী চাচাদের সাথে আমাদের সকল জমি জমা দলিল
বন্টন নামা করে ১৬০ শতাংশ যার যার পজিশনে জমি বুঝিয়া নিয়ে ভোগ দখল
করে নেয়া হয়েছে। রেকর্ড মূলে সি.এস ও এস.এ ২০৫ যাহার আর.এস ৩৭২৬ নং
দাগে মোট জমির পরিমান ২ একর ২৩ শতাংশ।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আলম বলেন, ‘এই জমির প্রকৃত মালিক
আমি,জমির সঠিক কাগজপত্র মূলে তাইজ উদ্দিনের কাছে আমরা দুই ভাই বিক্রি
করেছি। কিন্তু আমার চাচা আব্দুল মালেক জোর করে ক্ষমতার বলে তাইজ উদ্দিনের
জমি দখল করে নিয়েছে। এখন এ জমি নিয়ে বর্তমানে আদালতে মামলা চলছে।’
জমি সংক্রান্ত বিষয়ে আব্দুল মালেকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,আলম
আার আমজত আমার ভাতিজা,তাদের সাথে আমাদের জমি সংক্রান্ত ঝামেলা
রয়েছে,কিন্তু তাইজ উদ্দিনের জমি দখল করিনাই,এটা মিথ্যা বানোয়াট
কথা,কারন তাইজ উদ্দিন জমি ক্রয় করেছে আলম ও আমজতের কাছ থেকে, আমার
কাছ থেকে নয়। অতএব আমি শুধু শুধু তাইজ উদ্দিনের জমি দখল করবো কেন! যদি
কেউ বলে থাকে মিথ্যা বানোয়াট কথা বলেছে। কারন তাইজ উদ্দিন জমি ক্রয়
করেছে আলম ও আমজতের কাছ থেকে আমার কাছ থেকে নয়। তবে তাইজ উদ্দিন
একটা ভুল কাজ করেছে,সেটা হলো আমারেসহ ১৫ জনের নামে অহেতু মিথ্যা
মামলা দায়েরে করেছে,মামলা করলে আলম ও আমজতের নামে করুক,কারন জমি
কিনেছে তাদের কাছ থেকে। আমার বাপ দাদার জমি কোনো বন্টন হয়নি,জানা
অজানা অনেক সম্পদ রয়েছে আমাদের, তাই জমি সংক্রান্ত বিষয়ে ঝামেলা আলমের
সাথে,তাইজু উদ্দিনের সাথে না। আলমদের সাথে জমি সংক্রান্ত বিষয়ে আদালতে
মামলা চলমান রয়েছে। কোর্টেরে রায়ে যদি আমি আলমের কাছে জমি না পাই
তাহলে চলে আসবো। আর যদি পাই তাহলে আলম ছেড়ে দিবে, এখন কোর্ট যে
রায় দিবে সেটাই মেনে নিতে হবে সবার।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান বলেন, জমি দখল নিয়ে
প্রবাসী কৃষক তাইজ উদ্দিনের দেয়া লিখিত অভিযোগ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে
গিয়েছেন। ঘটনার সঠিক তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ হবে।