সেলিম হায়দার,তালা
স্বাভাবিকভাবে হাঁটার সক্ষমতা তার নেই। অন্যের সাহায্য ছাড়া চলতেও পারেন না, এমনকি দাঁড়াতে গেলেও অন্যের সহযোগিতা নিতে হয় তাকে। তবু শারীরিক প্রতিবন্ধকতা দমাতে পারেনি সাতক্ষীরার তালা মহিলা ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী সীমা আক্তারকে। দরিদ্র বাবার একার উপার্জনের সংসারে থেকেও এবার এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ- ৪.০৮ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন সীমা।
তালা উপজেলার খলিলনগর ইউনিয়নের প্রসাদপুর গ্রামের আব্দুল আজিজ গোলদারের মেয়ে সীমা আক্তার। তিন বোনের মধ্যে সীমা ও রেহানা প্রতিবন্ধী। বড় বোন রোমেছার বিয়ে হয়েছে পাশের পাইকগাছা উপজেলার রহিমপুর গ্রামে।
সীমার বাবা আব্দুল আজিজ গোলদার নসিমন (ইঞ্জিনভ্যান) চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। আগে মোটামুটি আয় হলেও এখন আয়-উপার্জনে ভাটা তার। মাত্র সাড়ে ছয় শতক জমির ওপর বসতবাড়িটাই তার সম্বল।
সীমা জানান, অনেকে কষ্টে পড়াশোনা করছেন তিনি। বাবা একা উপার্জনশীল হওয়ায় সবসময় টানাটানি লেগেই থাকা। তার ওপর পড়াশোর খরচ। অনেকটা খেয়ে না খেয়েই দিন পার করছেন, তবে পড়োশানা থামিয়ে দেননি। সীমা জানান, তার কলেজের শিক্ষকরাও তার জন্য শ্রম দিয়েছেন, সবরকম সহায়তা করেছেন।
শারীরিক প্রতিবন্ধকতা জয় করা সীমা বলেন, ‘আমি আর পড়তে পারবো কিনা জানিনা। আমার বাবার পক্ষে খরচ যোগানো সম্ভব নয়। পেটে ভাত জুটছে না আবার লেখাপড়া।
সীমার বাবা আব্দুল আজিজ গোলদার বলেন, মেয়েটার কষ্ট দেখলে চোখের পানি আর ধরে রাখতে পারিনা। ও কত কষ্ট করে কলেজ করেছে। সবার ভ্যানে তালায় (শহরে) যেতে লাগে ৫ টাকা। আর আমার মেয়ের লাগে ১০ টাকা। মেয়ে সামনে ছাড়া বসতে পারে না। এজন্য টাকাও বেশি দিতে হয়।
তিনি জানান, মেয়ে প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে অনেক ভ্যান তাকে নিতে চায় না। কারণ মেয়ে সামনে ছাড়া বসতে পারে না।
তালা মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রহমান জানান, সীমা খুব কষ্ট করে লেখাপড়া করেছে। সীমা ভালো একজন ছাত্রী।
তিনি বলেন, কলেজের পাশাপাশি আমরা ব্যক্তিগতভাবে সীমাকে সহযোগিতা করেছি। সীমার চেষ্টা আছে, সে অনেক বড় হবে।