রুবেল মাদবর,মুন্সীগঞ্জ :
মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে ব্লগার, মুক্তমনা লেখক, প্রকাশক ও সাংবাদিক শাহজাহান বাচ্চু হত্যার মূল পরিকল্পনাকারীসহ দুই জেএমবি সদস্য পুলিশের সাথে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়েছে। এসময় ৩ পুলিশও আহত হয়। আজ শুক্রবার ভোর ২ টায় শ্রীনগরের ষোলঘর ইউনিয়নের সাতগাঁও কে সি রোডে এ বন্দুক যুদ্ধের ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলো- মো: শামীম @ কাকা@ বোমা শামীম (৪০), পিতা মৃত আব্দুল রশিদ সাং লৌক্ষা, থানা-পাকুন্দিয়া, জেলা- কিশোরগঞ্জ ও এখলাছুর রহমান @ এখলাছ (৩২), পিতা: মো: গিয়াস উদ্দিন, সাং খামার পাড়া, থানা ও জেলা-জামালপুর। আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন- এএসআই মাসুদুর রহমান, এএসআই ইলিয়াস ও কনস্টেবল তানিম। তিনজনই মুন্সীগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।
পুলিশ জানায়, গোপন সংবাদের এবং তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে জানতে পারে- কয়েকজন জঙ্গী সদস্য শ্রীনগর থানা এলাকা দিয়ে মুন্সীগঞ্জ জেলায় নাশকতামূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করবে। উক্ত সংবাদ পেয়ে শ্রীনগর থাকা পুলিশ দুষ্কৃতিকারীদের ধরার জন্য শ্রীনগর থানাধীন কেসি রোড, ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক হইতে অনুমান ৫০০ গজ পূর্বে পাকা রাস্তায় এবং কালী কিশোর স্কুল রোড, ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক সংলগ্ন এলাকায় চেক পোষ্ট বসায়।
শুক্রবার ভোর রাত ২টার সময় দুইটি মটর সাইকেল যোগে চারজন মটর সাইকেল আরোহীকে কেসিরোডস্থ চেক পোষ্টের দিকে আসতে দেখে থামানোর সংকেত দেওয়া হয়। প্রথম মটর সাইকেল আরোহীরা পুলিশের চেকপোষ্টের উপর ককটেল ছুড়ে এবং গুলিবর্ষণ করে। পুলিশ আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালায়। গুলি বিনিময় শেষে পুলিশ ঘটনাস্থলে দুইজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। তাৎক্ষনিক আহতদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত বলে ঘোষণা করে। এ ঘটনায় পুলিশের এএসআই (নি:) মাসুদ, এএসআই (নি:) ইলিয়াস ও কং/৪০৪ তানিম আহত হয়। আহত পুলিশ সদস্যদেরকে শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মুন্সীগঞ্জ সদর হাসপাতালে রেফার্ড করে। অপর মটর সাইকেলসহ আরোহীরা পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হয় একটি বিদেশী ৭.৬৫ পিস্তল, ১টি ম্যাগজিন, ৩ রাউন্ড গুলি, ১১টি তাজা ককটেল, ২টি ছোড়া, ১টি রেজি: বিহীন কালো পালসার (রেঞ্জার) মটর সাইকেল। গোলাগুলির সময় পুলিশ ৫রাউন্ড চাইনিজ গুলি, পিস্তলের ১৬ রাউন্ড গুলি, শর্টগানের ৩৭ রাউন্ড গুলি করেছে বলে প্রেস ব্রিফিং এর মাধ্যমে জানানো হয়েছে।
পরবর্তীতে শুক্রবার সকাল ১১ টায় মুন্সীগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সভাকক্ষে এ বিষয়ে এক প্রেস ব্রিফিং দেয়া হয়েছে। প্রেস ব্রিফিং এ পুলিশ মোহাম্মদ জায়েদুল আলম পিপিএম সাংবাদিকদের সামনে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন। প্রেস ব্রিফিং এ সাংবাদিকরা বিভিন্ন প্রশ্ন করলে তারও উত্তর দেন তিনি। জঙ্গীদের কাছ উদ্ধারকৃত অস্ত্রগুলো এসময় প্রদর্শন করা হয়েছে। প্রেস ব্রিফিং এ পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তার মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম ও প্রশাসন) মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, শ্রীনগর-লৌহজং সার্কেল কাজী মাকসুদা লিমা, গজারিয়া-সদর সার্কেল খন্দকার আশফাকুজ্জামান, ডিআই ওয়ান নজরুল ইসলাম, শ্রীনগর থানার ওসি মো.ইউনুচ আলী প্রমুখ।
প্রেস ব্রিফিং জানানো হয়, সিরাজদিখান থানায় পুলিশের সাথে গুলি বিনিময়ে নিহত জঙ্গী মো: আব্দুর রহমানের দেয়া বর্ণনা এবং ক্রাইম রেকর্ড পর্যালোচনা করে নিশ্চিত হওয়া যায় নিহতদের মধ্যে একজন মুক্তমনা লেখক ও প্রকাশক শাহজাহান বাচ্চু হত্যা মামলার আসামী মো: শামীম @ কাকা@ বোমা শামীম (৪০), পিতা মৃত আব্দুল রশিদ সাং লৌক্ষা থানা-পাকুন্দিয়া, জেলা কিশোরগঞ্জ। তিনি মুক্তমনা ব্লোগার শাহজাহান বাচ্চুর হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী এবং ঘটনারস্থলে উপস্থিত থেকে পুরো হত্যাকান্ডটি পরিচালনা করে। তার বিরুদ্ধে মুক্তমনা লেখক ও প্রকাশক শাহজাহান বাচ্চুর হত্যা মামলাসহ ৫টি ডাকাতি মামলা রয়েছে। নিহত অপরজনের নাম এখলাছুর রহমান @ এখলাছ (৩২), পিতা: মো: গিয়াস উদ্দিন, সাং খামার পাড়া, থানা ও জেলা-জামালপুর। সে মুক্তমনা লেখক ও প্রকাশক শাহজাহান বাচ্চু হত্যা মামলায় জড়িত ছিল। সে বালুর চরে নিজেই বাসা ভাড়া নিয়ে অবস্থান করেছে এবং সকল আগ্নেয়াস্ত্র বিভিন্ন সস্থান থেকে ভাড়া বাসায় নিয়ে আসে। হত্যাকান্ডের পরে সে নিজেই অস্ত্রগুলো গাজীপুরে নিহত রহমানের নিকট নিরাপদে পৌঁছে দেয়।
উল্লেখ্য, গত ১১ জুন সন্ধ্যায় মুন্সীগঞ্জ সিরাজদিখানের পূর্ব কাকালদী গ্রামে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন শাহজাহান বাচ্চু (৬০)। দু’টি মোটরসাইকেলে এসে তাকে গুলি করার পর দ্রুত পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। তিনি বিশাখা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী ও জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মুক্তচিন্তার লেখক বাচ্চু লেখালেখি করতেন বিভিন্ন ব্লগ্ল ও সামাজিক যাগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে।