অনলাইন ডেস্কঃ
সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কম মূল্যেসিগারেট বিক্রির ফলে যুব ও দরিদ্র শ্রেণীর জনস্বাস্থ্যহুমকির মুখে। সরকার জনস্বাস্থ্য রক্ষায় যে উদ্দেশ্যেতামাক নিয়ন্ত্রণ আইনসহ নানা পলিসি তৈরি করেছেনবিশেষ করে সিগারেটের মূল্য বৃদ্ধি এবং প্যাকেটেরগায়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রদান করেও অসাধুতামাক কোম্পানীর কারণে সরকারের সে উদ্দেশ্যসম্পূর্ণ বিফলে যাচ্ছে। ফলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাঅর্জনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে বলে বক্তারা মতবিনিময় সভায় তুলে ধরেন।
আজ বিকেলে অনলাইন মিডিয়া ফোরামসম্মেলন কক্ষে, অনলাইন মিডিয়া ফোরাম, এলায়েন্সফর এফসিটিসি ইমপ্লিমেন্টেশন বাংলাদেশ, এবংবাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট এর সম্মিলিতউদ্যোগে “এসডিজি’রলক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তামাকেরঅবৈধ বানিজ্যও একটি বড় চ্যালেঞ্জ”শীর্ষকমতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। অনলাইনমিডিয়া ফোরামের প্রধান সমন্বয়কারী শরীফ মোহাম্মাদমাসুম এর সভাপতিত্বে উক্ত সভায় প্রধান অতিথিহিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণএশীয় অঞ্চলের সাবেক উপদেষ্টা ও এলায়েন্স ফরএফসিটিসি ইমপ্লিমেন্টেশন বাংলাদেশ এর সমন্বয়কারীঅধ্যাপক ডাঃ মোজাহেরুল হক, বিশেষ অতিথি হিসেবেউপস্থিত ছিলেন অনলাইন মিডিয়া ফোরামের , বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের বোর্ড অব ট্রাস্টিএম রফিকুল ইসলাম মিলন, বাংলাদেশ তামাক বিরোধীজোটভুক্ত সংগঠন নিরাপদ ডেভেলপমেন্টফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইবনুল সাইদ রানা, এলআরবি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সুলতানারাজিয়া শিলা, জনস্বার্থ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যানডিএম সাকলায়েন প্রমুখ। এছাড়াও অনলাইন মিডিয়াফোরামের সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথি অধ্যাপক ডাঃ মোজাহেরুলহক বলেন , মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার এক বক্তব্যে ২০৪০সালের মধ্যে তামাক মুক্ত দেশ গড়ার প্রতিশ্রুতিদিয়েছেন। সরকার প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনা বাস্তবায়নেধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে। ধূমপানের ব্যবহারনিরুৎসাহিত করণে এবং জনস্বাস্থ্য রক্ষায় প্রতি বছরইসিগারেটের মূল্য বৃদ্ধি করছে। চলতি বছরের বাজেটেপ্রতি ১০ শলাকা সিগারেট প্যাকেটের সর্বনি¤œ খুচরামূল্য নির্ধারণ করেছে ৩৫ টাকা। যার মধ্যে ভ্যাট এবংট্যাক্স প্রদান করতে হয় প্রায় ২৫ টাকা অর্থাৎ সরকার৩৫ টাকা মূল্যের প্যাকেট থেকে রাজস্ব পাবে ২৫ টাকা।অথচ দেশের কতিপয় অসাধু তামাক কোম্পানী রাজস্বনা দিয়ে ৩৫ টাকা মূল্যের সিগারেট বিক্রি করছে মাত্র১২ থেকে ২০ টাকা যা জনস্বাস্থ্যের জন্য যেমনক্ষতিকর তেমনি রাজস্ব আইনে দন্ডনীয় অপরাধ। এরফলে জনস্বাস্থ্য যেমন হুমকির মুখে পড়ছে তেমনিসরকার রাজস্ব থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে।
বিশেষ অতিথি জনাব ইবনুল সাইদ রানাক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ অবস্থা থেকে উত্তরনেরএকমাত্র উপায় এ সকল কোম্পানীকে আইনগত ভাবেসীলগালা করে বন্ধ করে দেয়া। তিনি আরও বলেনজাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী শুধুমাত্র রংপুরের৫টি সিগারেট ফ্যাক্টোরী থেকে প্রতিবছর রাজস্ব আসারকথা ২২৬ কোটি টাকা যেখানে আসছে মাত্র ১৬ কোটি৮৮ লক্ষ টাকা। রংপুর সহ দেশের বিভিন্ন স্থানেরতামাক কোম্পানীগুলো সরকারের ট্যাক্স ফাঁকি দিয়েএবং তরুন, যুব ও নি¤œ আয়ের মানুষের জনস্বাস্থ্যকেহুমকির মুখে ফেলে ব্যাপক মুনাফা অর্জন করছে।বিশেষ করে অতি সস্তায় অবৈধ পন্থায় সিগারেট বিক্রিকরে জনসাধারণকে বিড়ি-সিগারেটে আসক্ত করারপ্রতিযোগীতায় নেমেছে। অবিলম্বে এ সকল কোম্পানীরঅশুভ প্রতিযোগীতা বন্ধ করার কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণকরতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে জনাব শরীফ মোহাম্মাদমাসুম বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে এ বৈশ্বিক সমস্যাসমাধানকল্পে বিশ্বব্যাপী তামাকের চোরাচালাননিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ২০১২ সালের নভেম্বরে Protocol to Eliminate Illicit Trade in Tobacco Products নেগোশিয়েশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এ চুক্তিচুড়ান্ত করা হয়। উল্লেখ্য, এই প্রটোকল বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার FCTC-র অধীন প্রণীত প্রথম প্রটোকল।এফসিটিসির প্রথম স্বাক্ষরকারী দেশ হয়েও প্রটোকলপ্রনয়নের প্রায় ৬ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরেওবাংলাদেশ এখন পর্যন্ত এ প্রটোকল স্বাক্ষর না করায়সভায় বক্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বাংলাদেশ এ চুক্তিস্বাক্ষর করলে নকল সিগারেট, ব্যান্ডরোল বিহীনসিগারেট ও তামাকের চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ হওয়ারপাশাপাশি সরকারের রাজস্ব যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনিতামাকের ব্যবহার হ্রাস পাবে ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নঘটবে বলে বক্তারা উল্লেখ করেন।
বক্তারা আরও বলেন প্রতিবছর তামাকেরকারণে বাংলাদেশে ১ লক্ষ লোক মৃত্যুবরণ করে এবংপ্রায় ৪ লক্ষ লোক পঙ্গুত্ব বরণ করে। এ কারণেজনস্বাস্থ্য রক্ষায় সরকার প্রতিবছর সিগারেটের ব্যবহারহ্রাসকল্পে এর মূল্য বৃদ্ধি করছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনপ্রয়োগে টাস্কফোর্সের মাধ্যমে মোবাইল কোর্ট অব্যাহতরাখাসহ তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম টেকসই করতেসারচার্জ ব্যবস্থাপনা নীতি প্রণয়নসহ নানা পদক্ষেপগ্রহণ করছে। অথচ অবৈধ ও নকল সিগারেট ওসরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়েও কম মূল্যে বিক্রয়নিয়ন্ত্রণ কার্যকর ব্যবস্থা না থাকায় সরকারের তামাকনিয়ন্ত্রণ পলিসি কোন কাজে আসছে না। মাননীয়প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকেতামাকমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ার প্রতিশ্রুতি প্রদানকরেছেন। এ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে হলে অবৈধসিগারেট সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করার কোন বিকল্প নেই।
উক্ত অনুষ্ঠানে বক্তারা অবিলম্বে অবৈধসিগারেট বন্ধে তামাকের ফ্যাক্টরী গেইটে ব্যান্ডরোলমনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা, নকল সিগারেটউৎপাদনকারী অবৈধ কারখানাগুলোকে চিহ্নিত করেসকল মেশিনারিজ ধ্বংস ও কঠোর শাস্তি প্রদানেরমাধ্যমে এগুলি সীলগালা করে বন্ধ করা, নকলসিগারেট বন্ধে সিগারেট কোম্পানীকে ভ্যাট দেয়ার পূর্বেতার সকল ট্রেড মার্ক আইন রক্ষা করে কিনা তা যাচাইকরে দেখা, প্রতিটি সিগারেট প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানসিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেস হতে ট্যাক্স স্ট্যাম্প সংগ্রহকরছে কিনা তার তালিকা সংগ্রহ ও কঠোর নজরদারিকরা এবং সরকারের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ যেমন- কাষ্টমস্, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও প্রশাসনের সমন্বয়ের মাধ্যমেনকল এবং ব্যান্ডরোল বিহীন সিগারেট বন্ধে কঠোরব্যবস্থা গ্রহণের আহবান জানান।