অনলাইন ডেস্কঃ
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে কি না তা জানা যাবে কাল রোববার। ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে তাঁদের সিদ্ধান্ত জানাবেন।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই তথ্য জানিয়েছেন।
এর আগে আজ শনিবার রাত সাড়ে ৮টায় রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠক শুরু হয়। সেই বৈঠক চলে দুই ঘণ্টাব্যাপী। বৈঠক শেষে ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে যাবে কিনা নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার কাছে জানতে চাইলে তিনি কিছু না বলে মুখে আঙুল চেপে ধরে গাড়িতে উঠে যান। শুধু বলে যান কাল ব্রিফিংয়ে জানতে পারবেন।
বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব ছাড়াও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মোশাররফ হোসেন ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মনসুর আহমেদ, জেএসডির সহসভাপতি তানিয়া রব, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আজ শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠকে বসেন ২৩ দলীয় জোটের নেতারা। ছবি : নুরুদ্দিন আহমেদ
বৈঠক শেষে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘আপনারা সবাই জানেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ব্যাপারে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়েছে। তারপরে ২০ দলের বৈঠক হয়েছে। সবশেষে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠক হয়েছে। দীর্ঘ আলোচনার মধ্য দিয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে আগামীকাল (রোববার) প্রেসক্লাবে দুপুর ১টায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেন প্রেস কনফারেন্সের মধ্য দিয়ে আমাদের সিদ্ধান্তের কথা আপনাদের জানাবেন, জাতিকে জানাবেন।’
এর আগে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে বিকেল ৫টার দিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বৈঠকে বসেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে বৈঠকে ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, রফিকুল ইসলাম মিয়াসহ প্রায় সব সদস্য।
স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পরে একই কার্যালয়ে ২৩ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসে বিএনপি। বৈঠকে ২৩ দলীয় জোটের নেতাদের মধ্যে জোটের সমন্বয়ক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, জামায়াতে ইসলামীর আবদুল হালিম, এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ, বিজেপির সভাপতি আন্দালিব রহমান পার্থ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জাগপার তাসমিয়া প্রধান, খেলাফত মজলিসের মাওলানা ইসহাক, লেবার পার্টির ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, সাম্যবাদী দলের কমরেড সাঈদ আহমেদ, ডিএলের সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নূর হোসেন কাসেমী, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা আব্দুর রকিব প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এরপর রাত সাড়ে ৮টার দিকে সেখানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন বিএনপি নেতারা। সেই বৈঠক চলে দুই ঘণ্টাব্যাপী।
এদিকে জোটের বৈঠক শেষে এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘২০ দলের সিদ্ধান্ত জানানো সম্ভব না। আমরা নির্বাচনে যাব কি না, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি, নেতাকর্মীদের ওপর যে নির্যাতন, মিথ্যা মামলা হচ্ছে, এই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। সরকার কথাগুলো দিয়েছিল সকলের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করবে। এখনো আমরা মনে করি না, সকলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হয়েছে। আমরা দেখছি প্রতিনিয়ত। বিশেষ করে বিএনপির নেতাকর্মীদের আটক করা হচ্ছে। রাস্তাঘাটে তাদেরকে নির্যাতন করা হচ্ছে। এগুলো বন্ধ না করা পর্যন্ত সুস্পষ্টভাবে আমাদের সিদ্ধান্ত আমরা জানাতে পারব না।’
এলডিপির সভাপতি বলেন, ‘অনেকে আমাকে প্রশ্ন করেছেন, জোটগতভাবে নির্বাচনের আগামীকাল নির্বাচন কমিশনে চিঠি দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেক্ষেত্রে আমরা বলব, যদি আমরা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি সেক্ষেত্রে অনেকে আমরা নিজস্ব দলীয় প্রতীকে অংশগ্রহণ করব, অনেকে ২০ দলীয় ঐক্যজোটের শীর্ষ দল বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব।’
এদিকে ২৩ দলীয় জোটের বৈঠক শেষে কয়েকজন নেতা এনটিভি অনলাইনকে জানিয়েছেন, আজকের বৈঠকে আগামী নির্বাচনে যাওয়া বা না যাওয়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সব দল নিজেদের মতামত দিয়েছে। চূড়ান্তভাবে সিদ্ধান্ত নিতে আরো এক-দুইদিন সময় লাগবে।
কয়েকটি শরিক দল জানিয়েছে, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে তারাও অংশ নেবে। এছাড়াও নির্বাচনে অংশ নিলে পরবর্তী অবস্থা কেমন হবে আর না নিলে কেমন হবে এসব বিষয়ে সবাই নিজেদের মতামত তুলে ধরেছেন।
এছাড়া ২৩ দলীয় জোট যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তাহলে নিজ নিজ দলীয় প্রতীকে অংশ নেবেন জোটের শরিকরা। তবে যাদের দলের নিবন্ধন নেই তাঁরা জোটগতভাবে ধানের শীষ প্রতীকে অংশ নেবে।