সাইফুর রহমান শামীম,কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি ।। কুড়িগ্রামের
নাগেশ^রী উপজেলার ভিতরবন্দ ইউনিয়নে গড়ে উঠেছে শিশুদের বিনোদন
উদ্যান। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র প্রাঙ্গনে এই পার্ক গড়ে
তুলেছেন ভিতরবন্দ ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল হক খন্দকার বাচ্চু। এমন
পার্ক বা শিশুদের বিনোদন কেন্দ্র কুড়িগ্রামের ৭২টি ইউনিয়ন এবং
৩টি পৌরসভার কোথাও গড়ে ওঠেনি। ফলে এই পার্কটিকে ঘিরে শিশু ও
অভিভাবকরা বেশ আগ্রহী হয়ে উঠছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে এটি
উদ্বোধন না হলেও প্রতিদিন এই পার্কে ঘুরতে আসছেন শতশত শিশু ও
তাদের অভিভাবক।
পার্কটি ঘুরে দেখা গেছে, পার্কটিতে শিশুদের চিত্তবিনোদনের জন্য
বিভিন্ন খেলনার পাশাপশি রয়েছে বাঘ, ডাইনোসার, জিরাফ, ময়ুর,
হাতিসহ বিভিন্ন জীব-জন্তু, পাখি ও মাছের ভাস্কর্য। সেই সাথে
ভাস্কার্যের পাশে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা। এছাড়াও পার্ক জুরে রয়েছে
নানাবিধ উদ্ভিদ ও বৃক্ষ এবং তার সাধারণ ও বৈজ্ঞানিক বর্ণনা। এতে
করে শিশু ও দর্শনার্থীরা শুধু পার্কে ঘোরাই নয় শিক্ষাও গ্রহণ করতে
পারছেন। এছাড়াও কুড়িগ্রামের ১৬নদ-নদীকে চিহিৃত করে একটি
ছোট্ট নদী এবং নদীর উৎস পাহাড় ও তার ঝর্ণার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কৃত্রিম এই পাহাড় ও ঝর্ণা থেকে যে নদ-নদীর সৃষ্টি তা সেখানে
ব্যাখ্যা করা হয়েছে। অপরদিকে পার্কের দেয়াল জুরে বাঙালির দীর্ঘ
সংগ্রামের ইতিহাস চিত্রিত করা হয়েছে। আছে স্বাধীনতার পর থেকে
বাংলাদেশের সকল রাষ্ট্রপতিদের বর্ণনা। গোটা পার্কটাই যেন একটা
শিক্ষালয়। মুগ্ধ হওয়ার মতন।
স্থানীয় অভিভাবক নারায়ন চন্দ্র গদাই জানান, শহর থেকে অনেক দূরের এই
এলাকার আমাদের শিশুরা কোথাও যেতে পারে না। আর এখানকার
অভিভাবকদের সামর্থও নেই যে শহরে নিয়ে গিয়ে শিশুদের বিভিন্ন
স্থানে নিয়ে যাবে। গ্রামের মধ্যে এমন পার্ক সত্যিই ভালো উদ্যোগ।
শিশুদের সাথে আমরাও খুব আনন্দিত।
পার্কে ঘুরতে আসা স্থানীয় ওয়াজুদ্দিন, রূপম দেব, রুহুল আমিন,
গৌরাঙ্গ মোহন্ত জানান, কুড়িগ্রাম জেলায় দুই বারের শ্রেষ্ট
চেয়ারম্যান আমাদের ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুল হক খন্দকার বাচ্চু।
তার কার্মকান্ডেই আসলে তাকে শ্রেষ্টতর করে তুলেছে। শিশুদের জন্য তার
যে ভাবনা তা সত্যিই মহান। আমরা বিশ^াস করি এই পার্কে ঘুরতে
আসা শিশু-কিশোর-যুবকরা কখনও আর মাদক গ্রহণ করবে না। তারা এর
সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েই থাকবে।
পার্কে আশা কলেজ পড়–য়া বাদশা, কল্লোল, মিজান, মাইশা জানান, এই
পার্ক দেখে মনে হচ্ছে আমাদের সাধারণ জ্ঞানের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর
এখানেই আছে। সহজেই তা মনে থাকবে আমাদের।
বিভিন্ন স্থান থেকে শিশুদের নিয়ে পার্কে ঘুরতে আসা রহিম বকস,
আতাউর রহমান, লিটন চৌধুরী, লুৎফা বেগম, বিজলী আক্তারসহ অনেকেই
জানান, তাদের ইউনিয়নে এবং পৌরসভাতেও এমন পার্ক নেই। এটির
কথা শুনে শিশুদের নিয়ে বেড়াতে এসেছেন। তাদের দাবি প্রত্যেক
ইউনিয়নে এবং পৌরসভার মধ্যেও যদি এমন করে ছোট পরিসরের
বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলা যায় তবে শিশুদের মানসিক বিকাশ আরও
বাড়বে। সেই সাথে বড়দেরও চিত্ত বিনোদন হবে।
উদ্যোগতা ভিতরবন্দ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুল হক খন্দকার বাচ্চু
বলেন, শিশুদের জ্ঞান বিকাশের কথা বিবেচনা করে পড়া লেখার পাশাপাশি
আনন্দ-বিনোদনের মধ্যদিয়ে যেন তারা শিখতে পারে। সেই চিন্তা
থেকেই এই পার্ক গড়ে তোলার চেষ্টা। শিশুদের সাথে চিত্তবিনোদনের
জন্য অভিভাবকরা এখানে আসতে পারবেন। ব্যক্তিগত উদ্যোগে শুরু করলেও
প্রত্যাশা করছি শিশুদের জন্য আমার সাথে সকলেই সহগিতায় এগিয়ে
আসবেন।
নাগেশ^রী উপজেলা নির্বাহী অফিসার শংকর কুমার বিশ^াস বলেন,
ভিতরবন্দ ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের এমন উদ্যোগ অন্য ইউনিয়নের
চেয়ারম্যানদেরও উৎসাহিত করবে বলেই আমার বিশ^াস।
উদ্যোগতারা জানান, পার্কের পাশাপাশি গড়ে তোলা হাচ্ছে মিনি
পিকনিক স্পটও। পার্কটি খুব শিঘ্রই সবার জন্য বিনামুল্যে প্রবেশের
জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। এবং সেই অনুষ্ঠানে রংপুর বিভাগীয়
কমিশনার মহাদয় উপস্থিত থাকবেন বলে সম্মতি দিয়েছেন।