অনলাইন ডেস্ক ঃ
নোয়াখালী-১ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ১৫ ডিসেম্বরের গুলির ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন।
আজ বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সিইসির কার্যালয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করে সেদিনের ঘটনার বিষয়ে সিইসিকে অবহিত করেছেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য পুলিশ প্রশাসন এবং বিচার বিভাগ একাকার হয়ে গেছে। যেটা সম্পূর্ণ সংবিধান পরিপন্থী বলে আমি মনে করি এবং এটা করা উচিত না। যেসব পুলিশ কর্মকর্তা এসব করছে তাদেরকে পরিবর্তন করার জন্য আমি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে বলেছি।
বিএনপির প্রার্থী খোকন বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকার (নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী ও চাটখিল) কথাও বলেছি। সেখানে (১৫ ডিসেম্বর সোনাইমুড়ী কলেজ মাঠে) কোনো আওয়ামী লীগ ছিল না। আওয়ামী লীগের কোনো মিছিল ছিল না, কিছুই ছিল না। আমার গণসংযোগের পেছনে পুলিশ ছিল, সামনেও ছিল। পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের আমার গণসংযোগের বিষয়ে অবহিত করা ছিল। একপর্যায়ে সোনাইমুড়ী থানার ওসির (আবদুল মজিদ) নেতৃত্বে পুলিশ মানুষের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি করা শুরু করল। আমি নিষেধ করে বললাম, গুলি করছেন কেন? গুলি স্টপ করেন প্লিজ। তারপরও ওসি সাহেব, গুলি স্টপ করছেন না। সম্ভবত শটগান ছিল, স্প্লিন্টারের আঘাতে পড়ে যাচ্ছিল। আমি বললাম, মানুষকে গুলি কইরেন না। গুলি করলে আমাকে করেন। তখন আমাকে সে গুলি করে দিল! আমার কণ্ঠনালীর ওখানে গুলি লেগে রক্ত ঝরছিল। আমি বললাম, আপনি আমাকে গুলি করে দিলেন! তারপর সে আমাকে বলল, আপনি ওদিকে যান। তার দেখানো দিকে যাওয়ার সময় পেছন দিক দিয়ে আবার গুলি করে দিল। আমার মোট সাতটা গুলি লাগছে। পেছনে ছয়টা, সামনে একটা।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার খোকন বলেন, ‘আমি সিইসিকে বললাম যে পুলিশ কি বলল না বলল এটা কোনো ম্যাটার না। আমি একজন আইনজীবী হিসেবে, ব্যারিস্টার হিসেবে আন্ডারওয়েট হিসেবে বলতেছি, এই হলো ঘটনা। সেখানে কোনো আওয়ামী লীগের লোক ছিল না। পরবর্তী সময়ে আমি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার দেড়-দুই ঘণ্টা পরে পুলিশের প্রহরায় আওয়ামী লীগের কর্মীরা বিএনপির যত দোকানপাট, হাসপাতাল সব ভাঙচুর করেছে। ভাঙচুর করার পর তারা ভিন্ন স্টোরি বানিয়েছে।’
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, চাটখিল থানার ওসি সামসুদ্দিন, সে বিএনপির লোক ধরে নিয়ে ঘুষ নেয়। প্রতিদিন ১৫-২০ জন ধরবে। কোনো মামলা নাই, কিছু নাই। সেখান থেকে হয়তো পাঁচজনকে রিকোস্টে ছাড়ছে। আর পাঁচজনের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে। পাঁচজনকে চালান করে দিচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা আছে, যাদের বিরুদ্ধে মামলা নেই তাদের গ্রেপ্তার করা যাবে না। তা সে মানছে না।
মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘আমার এলাকায় অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার হচ্ছে না। চাটখিল ও সোনাইমুড়ীতে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের কাছে যে অস্ত্র আছে, দুই-তিন থানায়ও এত অস্ত্র নাই। অস্ত্র উদ্ধার করেন। উনারা (নির্বাচন কমিশন) বলেছে, ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
খোকন অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগের সমর্থক অবৈধ অস্ত্রধারীরা এবং পুলিশ একসঙ্গে কাজ করছে। নিরীহ মানুষের ওপর নির্যাতন করছে। আমার নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগ ভোট চাচ্ছে না। তাদের প্রার্থী-কর্মীরা ভোট চাচ্ছে না। মানুষকে হয়রানি করছে, সন্ত্রাস করছে এবং পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করছে, মানুষকে আহত করছে। শুধু আমার এলাকায় না, এটা সারা বাংলাদেশে একই কাজ করছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের কর্মীরা কোথাও ভোট চাচ্ছে না। তারা মিছিলে হামলা করতেছে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভয় দেখাচ্ছে। এসব বিষয়ে জানানোর পর সিইসি বলেছেন, তারা সুষ্ঠু ভোট গ্রহণে বদ্ধপরিকর।
নোয়াখালী-১ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী খোকন বলেন, আমি প্রার্থীদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার জন্যও সিইসিকে বলেছি। নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণা করেছে। কমিশনের দায়িত্ব প্রার্থীদের নিরাপত্তা দেওয়া, সব ভোটার যাতে তাদের ইচ্ছে মতো ভোট দিতে পারেন সেজন্য ভোটারদের নিরাপত্তা দেওয়া। আমি সোনাইমুড়ী থানার ওসির প্রত্যাহার চেয়েছি। চাটখিল থানার ওসির বিষয়েও তদন্ত করে তার প্রত্যাহার চেয়েছি। এগুলো উনি শুনেছেন। উনি আমাকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, তারা নিরপেক্ষ নির্বাচন করার চেষ্টা করছেন।