ব্রাজিলের রিও অলিম্পিকে রিদমিক জিমন্যাস্টিকে স্বর্ণজয়ী মার্গারিটা মামুন রিতার বাবা আবদুল্লাহ আল মামুন মারা গেছেন।
রাশিয়ায় শুক্রবার তার মৃত্যু হয় বলে শুক্রবার সন্ধ্যায় মামুনের মামা আশরাফুল কবির বুলু নিউজওয়ার্ল্ডবিডি ডট কমকে জানান।
আবদুল্লাহ আল-মামুনের বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার কাশিপুর গ্রামে। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে এই মৃত্যুর খবর পান রাজশাহীতে তাঁর বাড়িতে থাকা স্বজনেরা। সন্ধ্যায় মৃত্যুর খবর আসার পর শোকের ছায়া নেমে আসে। আশেপাশের মানুষজন বাড়িতে ছুটে আসেন শোক ও সমবেদনা জানাতে।
মামুন গুরুতর অসুস্থ ছিলেন। তিনি কয়েক বছর ধরে দুরারোগ্য ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন। বিছানায় শয্যাশায়ী অবস্থায় ক্রমশই খারাপ অবস্থার দিকে যাচ্ছিলেন তিনি।
রাজশাহীর দুর্গাপুর থেকে মামুনের মামা আশরাফুল কবির বুলু নিউজওয়ার্ল্ডবিডি ডট কমকে জানান, দীর্ঘদিন ধরেই ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন মামুন। বিছানায় শুয়ে শুয়েই দেখেছেন মেয়ের বিজয়-দৃশ্য দেখেছিলেন বাংলাদেশকে অলিম্পিক স্বর্ণপদকের গর্ব অনুভব করানো মার্গারিটা মামুনের বাবা আবদুল্লাহ আল-মামুন। বাংলাদেশ সময় আজ শুক্রবার বিকেল ৫টায় মারা যান তিনি।
আশরাফুল কবির বুলু আরো জানান, মামুনের মরদেহ দেশে আনার ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সম্ভবত রাশিয়ায় মামুনকে দাফন করা হবে।
বুলু জানান, মামুন এসএসসি পাস করেন দুর্গাপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। এইচএসসি করেন দিনাজপুর সরকারি কলেজ থেকে। এরপর ভর্তি হন রাজশাহী মেডিকেল কলেজে। ১৯৮৩ সালের শেষ দিকে মেরিন প্রকৌশল বিষয়ে বৃত্তি নিয়ে রাশিয়া চলে যান। সেখানে আন্না মারাদিকা নামে এক জিমন্যাস্টকে বিয়ে করেন তিনি।
আবদুল্লাহ আল মামুনের ভাগ্নে জাহিদুল হাসান জানান, মাগরিবের পর গ্রামের বাড়িতে সবাই জানতে পারেন বাংলাদেশি সময় বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে তিনি মারা যান। দুপুরেও টিভিতে মার্গারিটার সংবর্ধনার খবর দেখেছে সবাই। বাড়িতে ছিল উৎসবের মতো। কিন্তু
জাহিদুল হাসান জানান, রাশিয়াতেই আবদুল্লাহ আল মামুনের দাফন সম্পন্ন হবে। তিনি জানান, বেশ আগে পেটে টিউমার হয়েছিল। সেই টিউমার অপারেশন করার পর ক্যানসার ধরা পড়ে।
রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার কাশিপুর গ্রামে আবদুল্লাহ আল মামুনের পৈতৃক বাড়িতে থাকেন তাঁর বোন দিনা জহুরা। ভাইয়ের মৃত্যুর খবর শুনেই অচেতন হয়ে পড়েন তিনি।
পরে জ্ঞান ফিরলে দিনা জহুরা বলেন, গ্রামে তাকে সবাই চেনে সিপার নামে। আশির দশকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু মেডিকেলে মানুষের কাটাছেঁড়া সহ্য করতে পারতেন না। সেখানে কয়েক মাস পড়ার পরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। এর মধ্যে খবর আসে স্কলারশিপের। চলে যান তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নে। সেখানেই আন্না নামের এক নারীকে বিয়ে করে স্থায়ী হন। মার্গারিটার জন্ম রাশিয়াতেই। মাঝে-মধ্যেই দেশে আসতেন মামুন।
মস্কোতে জন্ম নেওয়া ২০ বছর বয়সী মার্গারিটা গেমসের পঞ্চদশ দিনে ২০ আগস্ট ব্যক্তিগত ‘অল-অ্যারাউন্ড’ ইভেন্টে সোনা জেতেন। মা সাবেক রিদমিক জিমন্যাস্ট আন্নার কাছ থেকেই দীক্ষা পেয়েছিলেন তিনি।
গত মঙ্গলবার প্রবাসী এই প্রকৌশলীর জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়াও চেয়েছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
প্রতিমন্ত্রী তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে সেদিন বলেন, মন খারাপ করা একটা খবর। অলিম্পিকে স্বর্ণজয়ী মার্গারিটা মামুনের পিতা, মামুন ভাই গুরুতর অসুস্থ। সবাই তার জন্য দোয়া করবেন। বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবেন না দয়া করে। পশ্চিমা দেশগুলোতে ব্যক্তির অসুস্থতার বিষয়গুলো গোপন রাখার বিধান আছে। তার প্রতি সম্মান জানিয়ে আমরা সেটা থেকে বিরত থাকি এবং আল্লাহতালার কাছে তার জন্য দোয়া করি।’
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর এই আহ্বানের পর বাংলাদেশ ও প্রবাসী ধর্মপ্রাণ মুসলিম নাগরিকরা মামুনের জন্য মোনাজাত করেছেন। তবে সবাইকে কাঁদিয়ে তিনি চলে গেলেন পরপারে। যদিও তার মেয়ে ব্রাজিলের রিও অলিম্পিকে স্বর্ণ জয় করে তার দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন পূরণ করলেন কয়েকদিন আগেই।