ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’-এর প্রভাবে গাছচাপায় খুলনার দীঘলিয়া ও দাকোপ উপজেলায় দুজন এবং পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলায় একজন নিহত হয়েছেন।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে আঘাত হানার পর গতকাল শনিবার গভীর রাতে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ কম শক্তি নিয়ে বাংলাদেশের সুন্দরবন উপকূলবর্তী অঞ্চলে আঘাত হানে। এটি প্রথমে আঘাত হানে খুলনার সুন্দরবন সংলগ্ন অঞ্চলে। ঝড়টি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। দুপুরে ঝড়টি বরিশাল-পটুয়াখালী-বাগেরহাট অঞ্চলের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
খুলনা থেকে প্রতিনিধি মুহাম্মদ আবু তৈয়ব জানিয়েছেন, খুলনার পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম শফিউল্লাহ জানান, দাকোপ উপজেলায় প্রমিলা মণ্ডল নামে এক গৃহবধূ আজ রোববার সকালে আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাসার অবস্থা জানতে গিয়েছিলেন। এ সময় গাছচাপায় মৃত্যু হয় তাঁর।
এ ছাড়া আজ সকালে দীঘলিয়া উপজেলার সেনহাটিতে আলমগীর হোসেন নামে আরো এক ব্যক্তি গাছচাপায় নিহত হয়েছেন।
এদিকে খুলনার ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির সুপারিনটেনডেন্ট প্রকৌশলী আবুল হাসান বলেন, আজ ভোর ৪টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৬৯টি ফিডারে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকে। ১২টার পর তিনটি ফিডার আংশিক বিদ্যুৎ নিতে সক্ষম হয়।
খুলনার উপকূলীয় উপজেলা কয়রার কন্ট্রোল রুম সূত্রে বলা হয়েছে, উপজেলার উত্তর বেদকাশী ও দক্ষিণ বেদকাশী পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বহু চিংড়ি ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সড়কে গাছপালা পড়ে যাওয়ার কারণে কয়রার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে খুলনা মহানগরের প্রধান প্রধান সড়ক আজ সকালে পানিতে তলিয়ে গেছে। খুলনার নিম্নাঞ্চল এখনো পানির নিচে রয়েছে। এ ছাড়া সড়কে যানবাহন চলাচল খুবই কম। সরকারি ছুটির দিন থাকায় প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছে না।
পটুয়াখালী থেকে প্রতিনিধি কাজল বরণ দাস জানিয়েছেন, পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলায় গাছচাপায় হামেদ ফকির (৬৫) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। আজ ভোররাতে উপজেলার উত্তর রামপুরা গ্রামে প্রচণ্ড ঝড়ো বাতাসের তোড়ে ঘরের উপর গাছ পড়লে চাপা পড়ে নিহত হন তিনি।
পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মতিউল ইসলাম চৌধুরী জানিয়েছেন, এখনো আতঙ্ক রয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থানরত মানুষদের বের না হওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
কুয়াকাটা পৌরসভার কাউন্সিলর শাহ আলম হাওলাদার জানান, সাগর ও নদী ঘেঁষা বাঁধের বাইরের বাসিন্দাদের বেশকিছু কাঁচা ঘর ভেঙে পানিতে তলিয়ে গেছে।
কুয়াকাটায় সাগর প্রচণ্ড উত্তাল রয়েছে। রাঙ্গাবালীর চর আন্ডায় বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ থেকে পানি ঢুকে তলিয়ে গেছে পুরো চর। সেখানে একটি মাত্র শেল্টার হোম থাকায় চরবাসীকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এদিকে জোয়ারের প্রভাবে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় উপকূলের ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। কলাপাড়ার লালুয়া চাড়িপাড়ার ভাঙা বাঁধ দিয়ে রাবনাবাদ নদীর পানি প্রবেশ করার ফলে ১০টি গ্রামের মানুষ ভোগান্তিতে রয়েছে। এদিকে পটুয়াখালী-কুয়াকাটা সড়কের কয়েকটি স্থানে বাতাসের তোড়ে গাছ উপড়ে পড়েছে। জেলার বিভিন্ন স্থানে আমন ফসলি ক্ষেতের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে পাকা ও আধপাকা ধানের গাছ পানিতে ডুবে আছে।