‘শুভ কাজে সবার পাশে’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বছরব্যাপী বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে শুভসংঘ ঠাকুরগাঁও জেলা কমিটি। এরই ধারাবাহিকতায় জেলার পিছিয়ে পড়া ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল ও মানবিক মনুষ করে গড়ে তোলার লক্ষ নিয়ে সদর উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে শুভসংঘ।
মঙ্গলবার জেলা শহর থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার দূরে চিলারং ইউনিয়নের মথুরাপুর পাবলিক হাই স্কুল ও বৃহস্পতিবার পার্শ্ববর্তী মথুরাপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সহযোগিতায় বিভিন্ন শ্রেণির পঞ্চাশজন শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রস্তুত করা হয় এবং ওই শিক্ষার্থীদের সাথে শুভসংঘের লক্ষ ও বিভিন্ন কাজ নিয়ে অলোচনা করা হয়।
পরে শিক্ষার্থীদের মাঝে পাঠ্যপুস্তকের বাইরে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, বিভিন্ন লেখকদের উপন্যাস, গল্প ও কবিতার বই বিতরণ করা হয়। বিতরণ অনুষ্ঠানে মথুরাপুর পাবলিক হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হামিদ, সহকারী শিক্ষক রোজিনা পারভিন, আবুল কালাম আজাদ এবং মথুরাপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল হক, সহকারী শিক্ষক নজরুল ইসলাম, মোতাহার হোসেন, রতন চন্দ্র রায়, বাবুল হোসেন, মজিব উদ্দীন আহমেদসহ শুভসংঘ ঠাকুরগাঁও জেলা কমিটির সভাপতি ও বোদা পাথরাজ কলেজের প্রভাষক মো. সফিকুল ইসলাম সফি, শুভসংঘের সদস্য ও ঠাকুরগাঁও জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার সৈয়দ জাকির হোসেন, মো. মুসা রাখাল, রাশেদুল আলম লিটন, আমিনুল ইসলাম, ফারহানা ইসলাম কলি, পার্থ সারথী দাসসহ শুভসংঘের অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
শুভসংঘের এমন কার্যক্রমকে স্বাগত জানিয়েছে দুই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। মুথুরাপুর পাবলিক হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হামিদ জানান, এই ধরনের উদ্বোগ তিনি এই প্রথম শুভসংঘকে করতে দেখলেন। এর আগে এধরনের কার্যক্রম এই জেলায় কেউ করেছে বলে তার জানা নেই। শুভসংঘের এই কার্যক্রম যেন সফল হয় এজন্য তিনি ও তার বিদ্যালয় সবসময় শুভ সংঘের পাশে থাকবে বলে আশ্বাস দেনে তিনি।
শুভসংঘ ঠাকুরগাঁও জেলা কমিটির সভাপতি মো. সফিকুল ইসলাম সফি জানান, একজন মানবিক মানুষের জন্য বই পড়া ও বাইরের জগৎ সম্পর্কে জ্ঞান থাকা খুবই জরুরি। কিন্তু অনেকের এধরণের বই পড়ার ইচ্ছে থাকলেও সামর্থ না থাকার কারণে তা সম্ভব হয়ে ওঠে না। এর ফলে আমাদের জেলা শহরের বাইরে সাধারণত ইউনিয়ন পর্যায়ের বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীরা পাঠ্যপুস্তকের বাইরে গল্প, উপন্যাস, কবিতাসহ অন্যান্য বই পড়ার সুযোগ পায় না। শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় ও প্রাইভেট কোচিংয়ের পড়ালেখা করেই সময় পার করে দেয়। এতে করে দেশের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের চিত্রসহ বাইরের জগৎ সম্পর্কে তাদের তেমন কোনো ধারণা নেই বললেই চলে। তাই শুভসংঘ সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিটির সদস্যদের নিজ অর্থায়নে পর্যায়ক্রমে জেলার প্রতিটি বিদ্যালয়ের পিছিয়ে পড়া ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে বই প্রদান করবে। এই কার্যক্রম চলবে সারা বছর জুড়ে। এর ফলে ধীরে ধীরে এই গ্রামাঞ্চলেও মানবিক মূল্যবোধের মানুষ তৈরি হবে।