সকালে বিরাট কোহলিকে শূন্য রানে আউট করার পরই আবু জায়েদের আদ্যোপান্ত জানতে আগ্রহী হয়ে উঠলেন ভারতীয় সাংবাদিকেরা। কোথায় বেড়ে উঠেছেন, তাঁর ক্রিকেটার হয়ে ওঠার গল্পটা কী, কীভাবে টেস্ট দলে এল, ওঁর কোচ কে ইত্যাদি। ইন্দোর টেস্টের আরেকটি হতাশার দিনে বাংলাদেশ দলের উজ্জ্বল মুখ এই ২৬ বছর বয়সী পেসার।
শুধুই ইন্দোর টেস্ট নয়, গত বছর জুনে টেস্ট অভিষেকের পর থেকে আবু জায়েদ দলের একমাত্র পেসার, উইকেটশিকারে যিনি কিছুটা সফল। গত দেড় বছরে ৬ টেস্টে উইকেট পেয়েছেন ১৫টি। এ সময়ে বাকি পেসারদের সম্মিলিত উইকেট ৭টি। কাল রোহিত শর্মাকে ৬ রানে ফিরিয়েছেন। আজ কোহলিকে রানই করতে দেননি। ৫৩ রান করা চেতেশ্বর পূজারাকেও আউট করেছেন। সেঞ্চুরির দিকে এগোতে থাকা অজিঙ্কা রাহানেও শিকার হয়েছেন আবু জায়েদের। কাল ইমরুল কায়েস স্লিপে দাঁড়িয়ে ক্যাচটা না ছাড়লে ডাবল সেঞ্চুরির দিকে এগোতে থাকা মায়াঙ্ক আগারওয়ালকে ফেরাতে পারতেন ৩২ রানেই।
বারবার সুযোগ পেয়ে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা বেশি দূর এগোতে না পারলেও ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা যে এ ভুল করেন না, তরুণ আগারওয়াল দুর্দান্ত ব্যাটিং করে সেটিই বোঝাচ্ছেন। ভারতীয় ওপেনার যতক্ষণ উইকেটে থাকবেন, ইমরুলের শুধু মনে হতেই থাকবে—কী করেছি কাল! আগারওয়াল যখন ডাবল সেঞ্চুরি করলেন ইমরুলের ক্যাচ হাতছাড়া নিয়ে বেশ রসিকতা করলেন হার্শা ভোগলে আর সুনীল গাভাস্কার। গাভাস্কারের মনে পড়ল ১৯৮৩ সালের লাহোর টেস্ট, যেটিতে তিনি ছিলেন ভারতের অধিনায়ক। পাকিস্তান ওপেনার মুদাসসর নজর ইনিংসের শুরুতে সুযোগ পেয়ে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ১৫২ রানের ‘ক্যারিং দ্য ব্যাট থ্রু দ্য ইনিংস’ খেলেছিলেন।
ইমরুলের মতো আবু জায়েদের আফসোস নিয়ে পড়ে থাকলে চলবে না। আবারও সুযোগ তৈরি করতে তাঁকে ভালো জায়গায় বোলিং করে যেতে হবে। সেটি তিনি করছেনও। ইন্দোরে পেসাররা বেশির ভাগ সফল হচ্ছেন ফুল লেংথে বল ফেলে। যদিও তাঁদের ৪৫ শতাংশ বল পড়েছে গুড লেংথে। কিন্তু উইকেটশিকার করতে পেরেছেন ফুল লেংথে বল ফেলে। আবু জায়েদও একই সূত্র মেনে সফল হয়েছেন। রাহানের আউটটা যা একটু ব্যতিক্রম। তবে সবচেয়ে প্রশংসিত হয়েছে কোহলিকে করা বলটি নিয়ে। যদিও খেলার সময় ভারতীয় অধিনায়কের মাথার অবস্থান (হেড পজিশন) নিয়ে কথা হচ্ছে। কিন্তু এভাবে খেলে তিনি গত দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজেও সফল হয়েছেন। ধারাভাষ্যকার মুরালি কার্তিক কোহলির আউটকে একটা বাজে দিনের বেশি ভাবতে চান না।
‘রান মেশিন’ কোহলিকে শূন্য রানে ফিরিয়েই আলোচনায় আসার জন্য যথেষ্ট ছিল। কিন্তু আবু জায়েদ তার চেয়ে বেশিই করেছেন। ভারতের চার তারকা ব্যাটসম্যানকে আউট করেছেন। অন্য প্রান্তের নির্বিষ বোলিংয়ের বিপরীতে ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপে তিনিই কিছুটা চাপ তৈরি করতে পেরেছেন। আর প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন বাংলাদেশের দুই পেসারকে নিয়ে খেলার রক্ষণাত্মক কৌশলকে। ভারত এখন অনায়াসে তিন পেসার নিয়ে খেলতে পারে। বাংলাদেশের সে ‘সাহস’ তাহলে এখনো হয়নি! কাল বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল বলছিলেন সাহসের ব্যাপার নয়, তাঁর ভান্ডারে অস্ত্র অপ্রতুল, ‘নিয়মিত চার দিন খেলার পেস বোলার আমার স্টকে কম। আর আমরা সব সময় ব্যাটিংয়ে একটু বেশি মনোযোগ দিই। এ কারণে হয়তো দুই পেসার খেলছে আমাদের একাদশে।’
টেস্টে বাংলাদেশ অধিনায়কের এ অসহায়ত্ব নতুন কী! দেশের বাইরে টেস্ট খেলতে এলেই শুধু পেসারদের কদর বাড়ে। ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সেভাবে পরিচর্যা করা হয় না। দেশে টেস্ট হলেও খুব একটা নয়। উপমহাদেশের বাইরের কোনো দল এলে তো কথাই নেই! এমনকি গত সেপ্টেম্বরে আফগানিস্তানের বোলিং শক্তি স্পিন জেনেও বাংলাদেশ একাদশে কোনো পেসার রাখা হয়নি। দিনের পর দিন উপেক্ষিত থাকার পর হঠাৎ পেস সহায়ক উইকেটে খেলতে নেমেই কি সফল হওয়া যায়? টেস্টে শুধুই স্পিননির্ভরতা থেকে বেরিয়ে এসেছে ভারতীয় দল। গত দুই বছরে পেস বোলিং আক্রমণে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। বাংলাদেশের পেস আক্রমণে কবে এ বিপ্লব আসবে?