‘গান মানুষের জীবনকে প্রসারিত করে, গান জীবনের প্রতিচ্ছবিও—যাঁরা গানে গানে জীবনের প্রতিচ্ছবি এঁকে যান, তাঁদের অনেক আশীর্বাদ। খুরশীদ আলম আমার খুব কাছের এবং প্রিয় একজন মানুষ। গানে অবদানের জন্য সংবর্ধিত হচ্ছেন, তাঁকে অভিনন্দন।’ বললেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী, নির্মাতা ও বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান মুস্তাফা মনোয়ার। সংগীতশিল্পী খুরশীদ আলমের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘সুন্দর গান শুধু অনুভূতির বিষয় না, সেটা আত্মার ও মনের খোরাক। এ কারণে “তুমি–আমি” টাইপ গান বেশি দিন চলে না। গান এমন হতে হবে, সেটা যেন মানুষের মনে গেঁথে থাকে। গানের মাধ্যমেই উঠে আসবে জীবনের প্রতিচ্ছবি। এমন গান গেয়ে শিল্পী খুরশীদ আলম আজকের এই পর্যায়ে এসেছেন।’
সিনেমায় গান গেয়ে শুরু। এরপর কেটে গেছে ৫০ বছর। ১৯৬৯ সালে ‘আগন্তুক’ ছবি দিয়ে শুরু করে এখন পর্যন্ত গেয়েছেন চার শতাধিক সিনেমায়। শুরুর দিকে রবীন্দ্রসংগীত গাইলেও পরবর্তী সময়ে সিনেমা আর আধুনিক গানে অপরিহার্য একটি নাম হয়ে ওঠেন খুরশীদ আলম। বাংলাদেশি গানের গুণী এই শিল্পীকে সংগীতে অবদানের জন্য সংবর্ধিত করা হলো। সিটি ব্যাংক এনএ বাংলাদেশ আয়োজিত ‘গানে গানে গুণীজন সংবর্ধনা’র এবারের আসরে শিল্পীকে সম্মাননা জানানো হয়। গুণী এই শিল্পীর হাতে সম্মাননা স্মারক ও পোট্রে৴ট তুলে দেন বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান মুস্তাফা মনোয়ার ও সিটি ব্যাংক এনএর কান্ট্রি অফিসার এন রাজাকোরান। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিশিষ্ট গীতিকবি রফিকউজ্জামান। স্বাগত বক্তব্য দেন সিটি ব্যাংক এনএর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা শামস জামান।
শিল্পীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে অনেক জনপ্রিয় গানের গীতিকার রফিকউজ্জামান বলেন, ‘শিল্পী হিসেবে খুরশীদ আলম যেমন যথেষ্ট গুণী, তেমনি মানুষ হিসেবেও তিনি খুব ভালো। সব সময় অন্যের বিপদে–আপদে এগিয়ে যান। শিল্পীসমাজে কেউ অসুস্থ হলে বা বিপদে পড়লে সবার আগে খুরশীদ আলমের ফোনকল পাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘একসময় দেশের চলচ্চিত্রের গানে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল খুরশীদ আলমের। চলচ্চিত্রে নায়করাজ রাজ্জাক অভিনীত চলচ্চিত্রের বেশির ভাগ গান গেয়েছেন তিনি। রাজ্জাক চাইতেন ছবিতে তাঁর লিপের গানগুলো যেন এই শিল্পী পরিবেশন করেন। খুরশীদ আলম এমন এক শিল্পী, যাঁর কণ্ঠের চটুল গান থেকে হৃদয়স্পর্শী গান ছুঁয়েছে শ্রোতার মনন।’
এন রাজাকোরান বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী খুরশীদ আলমকে সম্মানিত করতে পেরে আমরা গর্বিত। তাঁর কণ্ঠ থেকে যে শক্তি ও উৎসাহ পাওয়া যায়, তা বিশ্বজুড়ে বাঙালি সংগীতপ্রেমদের জন্য অনুপ্রেরণামূলক।’
‘গানে গানে গুণীজন সংবর্ধনা’ অনুষ্ঠানে খুরশীদ আলমের সম্মানে গান গেয়েছেন মুহিন। মোস্তফা মেহমুদ পরিচালিত ‘মানুষের মন’ চলচ্চিত্রের ‘ছবি যেন শুধু ছবি নয়’ গানটি দিয়ে শুরু করে একে একে পাঁচটি গান গেয়ে শোনান তিনি। সংবর্ধিত শিল্পী খুরশীদ আলমের পরিবেশনা ছিল অতিথিদের জন্য বাড়তি প্রাপ্তি—‘মাগো মা ওগো মা আমারে বানাইলি তুই দিওয়ানা’, ‘এ আকাশকে সাক্ষী রেখে’, ‘তোমাকে এত যে বেসেছি ভালো’।
ষাটের দশক থেকে দেশের সংগীতজগতের পরিচিত নাম মো. খুরশীদ আলম। ১৯৪৬ সালে জয়পুরহাটে জন্ম নেওয়া শিল্পী ১৯৪৯ সালে চলে আসেন ঢাকায়। এরপর ঢাকাতেই তাঁর বেড়ে ওঠা। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে গানের অনুশীলন করে গেছেন। ১৯৬৭ সালে প্রথম ‘আগন্তুক’ চলচ্চিত্রে গান করেন। তারপর শুধুই এগিয়ে চলা। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে সাড়ে চার শতাধিক চলচ্চিত্রে গান গেয়েছেন এই শিল্পী।
দেড় দশকের বেশি সময় ধরে ‘গানে গানে গুণীজন সংবর্ধনা’ প্রদান করছে সিটিব্যাংক এনএ বাংলাদেশ। ২০০৪ সালে নীলুফার ইয়াসমীনকে সম্মাননা জানানোর মধ্য দিয়ে ‘গানে গানে গুণীজন সংবর্ধনা’ অনুষ্ঠান প্রবর্তিত হয়। ইতিমধ্যে ফিরোজা বেগম, সন্জীদা খাতুন, সোহরাব হোসেন, ফেরদৌসী রহমান, ফরিদা পারভীন, আলাউদ্দিন আলী, সাবিনা ইয়াসমীন, রুনা লায়লা, ফেরদৌস ওয়াহিদ প্রমুখকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে এ আয়োজনে। সংগীতে অসামান্য অবদানের জন্য এ বছরে এই সম্মাননা প্রদান করা হয় দেশের গুণী সংগীতশিল্পী খুরশীদ আলমকে।