বিশ্বে বাংলাদেশের যেসব দূতাবাস রয়েছে, তারা সময়মতো পাসপোর্ট পাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এখন যে পরিমাণ পাসপোর্টের চাহিদা রয়েছে, আমরা সেটা পূরণ করতে পারছি না।’
সচিবালয়ে আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের এসব কথা জানান।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের (দূতাবাসগুলোর) একটাই দাবি, তারা সময়মতো পাসপোর্ট পাচ্ছে না বা কম পাচ্ছে। আমরা যেভাবে হিসাব করেছিলাম, পাসপোর্ট যারা তৈরি করে, তারা সেভাবে দিতে পারেনি। সে জন্যই আমাদের একটা শূন্যতা (গ্যাপ) সৃষ্টি হয়েছে।’
ক্রয় কমিটিতে আজ ২০ লাখ মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) কেনার একটি প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, আইডি গ্লোবাল সলিউশন লিমিটেড (সাবেক ডি লা রু ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড) নামের একটি কোম্পানি ৫৩ কোটি ৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০ লাখ পাসপোর্টের বই সরবরাহ করবে।
অবশ্য গত ২৭ নভেম্বর ক্রয় কমিটির এক বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ৬৭ শতাংশ বেশি দামে প্রস্তাব করা হয়েছে বলে কমিটি তা ফেরত পাঠিয়েছে। এ বিষয়ে আজ অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ২৭ নভেম্বরের বৈঠকে ভুল করে একনেকে অনুমোদিত মূল্য হিসাব করেছিলাম। দ্রুত চাহিদা মেটাতে পুরোনো প্রতিষ্ঠান থেকে ২০ লাখ এমআরপি কিনছি। আমাদের পাসপোর্ট লাগবে। পাশাপাশি আমরা ই-পাসপোর্টে যাওয়ারও চেষ্টায় রয়েছি।’
ই-পাসপোর্ট চালুর সময় জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘খুব অল্প সময়ের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী ই-পাসপোর্ট উদ্বোধন করবেন। যদিও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৈঠকে জানিয়েছে, ই-পাসপোর্ট চালু হতে আরও দুই থেকে তিন মাস সময় লাগবে। প্রথম দিকে দিনে ৫০০ ই-পাসপোর্ট দেওয়া হলেও পরে তা বাড়িয়ে করা হবে দুই হাজার করে।’
পাসপোর্ট অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন ২০ হাজার পাসপোর্টের বইয়ের চাহিদা রয়েছে। সে হিসাবে এই পাসপোর্ট দিয়ে চলবে ১০০ দিন। এরই মধ্যে ই-পাসপোর্ট চালুর সময়সীমা কয়েক দফা পেছানো হয়েছে।
ই-পাসপোর্ট চালুর বিষয়ে জানতে চাইলে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সোহায়েল হোসেন খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাতে লেখা পাসপোর্ট থেকে আমরা যখন এমআরপিতে এসেছিলাম, তখনো সময় লেগেছিল। এখন এমআরপি থেকে যখন ই-পাসপোর্টের দিকে যাচ্ছি, তখন সময় লাগাটা স্বাভাবিক। প্রস্তুতিতে পিছিয়ে নেই আমরা।’
অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সময় চাওয়া হয়েছে। চলতি মাসেই ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম উদ্বোধন করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী।
গত ২৮ নভেম্বর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন তাঁর নিজ দপ্তরে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশ ২৮ নভেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ই-পাসপোর্ট চালু করবে এবং এর মেয়াদ ১০ বছর থাকায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাসপোর্ট নবায়নে আর কোনো ঝামেলা থাকবে না।
ই-পাসপোর্টে থাকে ইলেকট্রনিক মাইক্রোপ্রসেসর চিপ, যাতে সংরক্ষিত বায়োমেট্রিক তথ্য বিশ্লেষণ করে পাসপোর্ট বহনকারীর পরিচয় শনাক্ত করা হয়। এতে ২৮ ধরনের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য থাকবে। বর্তমানে এমআরপি তথ্যভান্ডারে থাকা তথ্যগুলো ই-পাসপোর্টে স্থানান্তর করা হবে। এতে চোখের মণির ছবি, আঙুলের ছাপসহ সিকিউরিটি চিহ্ন থাকবে। এই নিরাপত্তাব্যবস্থার কারণে পরিচয় গোপন করা কঠিন হবে। যেসব দেশে ই-পাসপোর্ট রয়েছে, সেসব দেশের যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হয় না। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডাসহ ১১৮টি দেশে এই ধরনের পাসপোর্ট চালু আছে।
বিদেশে যাতায়াত সহজ করতে গত জুলাই থেকে ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট বা ই-পাসপোর্ট বিতরণ শুরু করার কথা ছিল। যথাসময়ে চালু করতে না পেরে গত বছরের ১৯ জুলাই এ বিষয়ে একটি চুক্তিও সই করে বাংলাদেশ ও জার্মানি। বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ‘ই-পাসপোর্ট চালু এবং স্বয়ংক্রিয় সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা’ নামে ৪ হাজার ৫৬০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পও চলছে। শুরুতে ১৮ বছরের নিচে ও ৫৫ বছরের বেশি বয়সীদের পাঁচ বছর মেয়াদি পাসপোর্ট এবং ১৯ থেকে ৫৫ বছর বয়সীদের জন্য ১০ বছর মেয়াদি পাসপোর্ট দেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল।