‘খেলতে খেলতেই অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হয়’, ক্রীড়াঙ্গনে কথাটি ব্যবহৃত হয় বেদ বাক্যের মতো। কিন্তু বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের নীতি দেখে মনে হতে পারে কথাটি ভুল। না হলে কি আর ব্যর্থতার ভয়ে সদ্য সমাপ্ত দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে নারী ফুটবল দল না পাঠাত তারা।
২০১০ এসএ গেমসের নারী ফুটবলে প্রথমবারের মতো অংশগ্রহণ করেই ব্রোঞ্জ জিতেছিল বাংলাদেশের নারী ফুটবলাররা। ২০১৬ সালে গুয়াহাটিতে এসএ গেমসেও বাংলাদেশের মেয়েরা জিতেছিল ব্রোঞ্জ। তবে এর মাঝেও স্বপ্ন দেখা হচ্ছিল ভবিষ্যতে উন্নতির। ২০১৯ সালে এসে দলটি পূর্বের থেকে উন্নতি করবে বা আগের পদক ধরে রাখবে, এই আশা করাটাই স্বাভাবিক। অথচ ব্যর্থতার শঙ্কায় এসএ গেমসে দলই পাঠায়নি বাফুফে। এই শঙ্কাটাই যেন নারী ফুটবলের বর্তমান মানদণ্ড! বাফুফের এই ব্যর্থতার ভয়কেই তাদের কাজকর্মের আয়না বলে চিহ্নিত করেছেন জাতীয় দলের সাবেক কোচ গোলাম সারওয়ার টিপু।
এসএ গেমসে নারী ফুটবলে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের দল না পাঠানোর সিদ্ধান্তটা হতাশ করেছে ফুটবলপ্রেমীদের। মেয়েদের দল না পাঠানো সম্পর্কে বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ বলেছিলেন, ‘মেয়েদের পূর্ণাঙ্গ একটি জাতীয় দল গড়ে তুলতে আমাদের আরও সময় লাগবে। তাই আমরা এই এসএ গেমসে মেয়েদের দল পাঠাচ্ছি না। আসলে আমাদের দল এখনো ভারত, নেপালকে হারানোর পর্যায়ে যায়নি। মেয়েদের দলটি পরিণত হতেও সময় প্রয়োজন। নেপালে গিয়ে খারাপ করলে এই মেয়েরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়তে পারে।’
২০১৬-১৭ সালে ভারতের শিলিগুড়িতে অনুষ্ঠিত মেয়েদের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে দুর্দান্ত খেলে রানার্সআপ হয়েছিল বাংলাদেশ। মেয়েদের ফুটবল ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ভারতের সঙ্গে ড্র করেছিল। প্রায় সেই দলটাই চলতি বছর মার্চে নেপালের বিরাটনগরে ভারতের কাছে ৪-০ গোলে হেরে টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল থেকেই বিদায় নিয়েছে। পেছনে হাঁটার গল্পটা স্পষ্ট। কোথায় এখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য বেশি করে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ম্যাচ খেলার প্রয়োজন, উল্টো ব্যর্থতার ভয়ে এসএ গেমসে দলই পাঠাল না বাংলাদেশ।
সাম্প্রতিক কালে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের তুরুপের তাস মেয়েদের ফুটবল। দেশের ফুটবলে সীমাহীন ব্যর্থতার মাঝেও মেয়েদের বয়সভিত্তিক ফুটবলের সাফল্যকে দেয়ালে টাঙিয়ে নিজেদের অর্জনের বিজ্ঞাপন হিসেবে প্রচার করছে বাফুফে। সঠিক পরিকল্পনা করে এগিয়ে গেলে মেয়ে ফুটবলে বাংলাদেশের সম্ভাবনা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু গত বছর তাজিকিস্তানে অনুষ্ঠিত এএফসি অনূর্ধ্ব-১৯ বাছাইপর্ব থেকে মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাইপর্ব ও চলতি বছর মার্চে সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে বের হয়ে এসেছে নারী ফুটবলের ভেতরের কঙ্কালসার দেহ।
খারাপ পারফরম্যান্স হতেই পারে। তাই বলে প্রতিযোগিতায় অংশ না নেওয়া তো প্রতিকার হতে পারে না। না খেলে উন্নতি করার রাস্তা কোনো দেশ আবিষ্কার করেছে বলেও জানা নেই। আগ থেকেই ব্যর্থতার শঙ্কা নিয়ে বসে থাকায় বাফুফের দায়িত্ব নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন জাতীয় দলের সাবেক কোচ গোলাম সারোয়ার টিপু, ‘কেন দল পাঠাল না এই বিষয়টির আমি কোনো যথার্থ কারণ খুঁজে পাই না। ফল খারাপ হবে এটা আগেই জানে বাফুফে। তাহলে এত দিন তারা কী কাজ করেছে। নারী ফুটবল নিয়ে এত মাতামাতি দেখায় তারা। তাহলে এখন কেন দল পাঠানোর সাহস পায় না। এভাবে কখনো ভালো দল গড়া যায় না।’