নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে গত সপ্তাহে আসামের গুয়াহাটিতে যে সহিংসতা হয়েছিল, তার জন্য সরকার দায়ী করছে মুসলমানদের একটি দল এবং কংগ্রেসের কয়েকজন মুসলমান নেতাকে।
তাদের কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।
তবে ‘পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া’ নামে মুসলিমদের ওই সংগঠনটি তাদের কোনো সদস্যের সহিংসতায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করছে।
প্রতিবাদকারীরা বলছেন, এধরনের বক্তব্য দিয়ে বিজেপি সরকার আসামের সাধারণ মানুষের আন্দোলনের মধ্যে ধর্মীয় আর সাম্প্রদায়িক বিভাজন সৃষ্টির চেষ্টা করছে।
বিজেপি এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলছে যে পুলিশ বহু ঘণ্টার ভিডিও দেখে ৮,০০০ মানুষকে চিহ্নিত করেছে, যারা সেদিনের সহিংসতার সময়ে হাজির ছিল।
রাজধানী দিসপুরের সচিবালয় আর লাগোয়া গুয়াহাটি শহরে শঙ্করদেব কলাক্ষেত্রর সামনে যে সহিংসতা হয়েছিল ১০ ও ১১ তারিখে, তাতে তৃতীয় কোনো শক্তি জড়িত ছিল বলে প্রথম থেকেই বলা হচ্ছিল।
সেই তৃতীয় শক্তি যে আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী ছাত্র সংগঠন – অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন বা আসু নয়, তার বাইরের কোনো শক্তি, সেটাও বলা হচ্ছিল সরকারি আর ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে।
সম্প্রতি রাজ্যের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা করেন, পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া এবং কংগ্রেসের কয়েকজন নেতাই ওই সহিংসতার সঙ্গে জড়িত বলে তদন্তে জানতে পেরেছে পুলিশ।
তিনি যাদের নাম করেন, ঘটনাচক্রে তাদের বেশিরভাগই মুসলমান।
নাগরিকত্ব আইন: ‘আমরা দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হচ্ছি’
নাগরিকত্ব আইন: ‘আমরা দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হচ্ছি’
বড় গণতান্ত্রিক দেশ ভারতে ইন্টারনেট বন্ধের রেকর্ড
এই ঘোষণার পরেই শুরু হয় ধরপাকড়। গ্রেপ্তার হন বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী। গ্রেপ্তার হন পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়ার রাজ্য সভাপতি।
সংগঠনটির আসাম রাজ্য সহ-সভাপতি আবু সামা আহমেদ সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলছেন, সরকার স্পষ্ট করে প্রমাণ দেখাতে পারবে না যে পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া বা পি এফ আই সেদিনের সহিংসতায় জড়িত ছিল।
“সেদিন সংবাদ সম্মেলনে হিমন্ত বিশ্বশর্মা যে ভিডিও ফুটেজ দেখিয়েছেন, তা অস্পষ্ট। আমাদের পৃথক কোনো কার্যক্রমই ছিল না সেদিন। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি, তিনি সুস্পষ্ট প্রমাণ দেখান যে আমাদের কেউ ওই ঘটনায় জড়িত। আমরা জানি তিনি তা পারবেন না,” – বলছিলেন মি. আহমেদ।
সরকার আর পুলিশ অবশ্য বারবার বলছে, আসুর মতো যেসব সংগঠন গণতান্ত্রিকভাবে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করছে, বাইরের তৃতীয় কোনো শক্তি ওই সহিংসতায় জড়িত ছিল।
তবে আসুর প্রধান উপদেষ্টা সমুজ্জ্বল ভট্টাচার্য বলেছেন, বেছে বেছে নানা সংগঠনের মুসলমান নেতার নাম উল্লেখ করা বা গ্রেপ্তার করার মাধ্যমে সরকার একটা সাম্প্রদায়িক বিভাজন তৈরি করতে চাইছে।
মি. ভট্টাচার্যের কথায়, “সরকার চেষ্টা করছে এই আন্দোলনের মধ্যে বিভাজন ঘটাতে, তাদের নীতিই হচ্ছে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করার।”
“তবে মানুষ সেই প্রচেষ্টাকে নস্যাৎ করে দিচ্ছে। আসু সরকারকে সতর্ক করে দিতে চায় যে এই ইস্যুটাকে সাম্প্রদায়িক রঙ দেওয়ার চেষ্টা যেন তারা না করে।”
ওই সহিংসতার পরে ধীরে ধীরে গুয়াহাটি আর আসাম শান্ত হয়েছে। যদিও প্রতিদিনই প্রতিবাদ মিছিল, বিক্ষোভ অবস্থান চলছে – কোথাও ছাত্রদের, কোথাও শিল্পী-গায়কদের।
বৃহস্পতিবারও গুয়াহাটির চাদমারিতে ছিল অসমিয়া শিল্পী সমাজের এক প্রতিবাদ সভা। ওই সভায় হাজির ছিলেন চলচ্চিত্র সংগঠন ফিল্ম ফ্রেটার্নিটি, আসামের সাধারণ সম্পাদিকা গরিমা শইকিয়া।
বিবিসিকে তিনি বলেছেন, “হিন্দু-মুসলিম, অসমিয়া বাঙালী বা অসমিয়া আর উপজাতিদের মধ্যে সংঘাত বাঁধানোর চেষ্টা চলছে। এটা জানি না যে এই সংঘাত সরকার বাঁধাচ্ছে না কোনও তৃতীয় শক্তির হাত আছে এর পিছনে। কিন্তু এটা বলতে পারি, যারাই এটা করুক না কেন, তারা আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্যটা ঘুরিয়ে দিতে চাইছে!”
নাগরিকত্ব আইন-বিরোধী আন্দোলনে ধর্মীয় রঙ চড়াতে চাইছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে বিজেপির সরকারের বিরুদ্ধে সেবিষয়ে রাজ্য বিজেপির সভাপতি রঞ্জিত দাশ বলেছেন, “প্রমাণ আছে বলেই আমরা বলতে পেরেছি যে সেদিনের সহিংসতায় কারা জড়িত ছিল।”
“যদি অন্য দল এসে প্রমাণ দিতে পারে যে আমরা যাদের কথা বলছি, তারা নয়, অন্য কেউ জড়িত ছিল ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় – তাতে তো আমাদের মুখেই ছাই পড়বে! আমরা প্রমাণ দিয়েছি বলেই সাম্প্রদায়িক বিভাজনের রাজনীতি করছি – এটা বলে দেওয়া তো ঠিক নয়,” বলেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, “এখনও পর্যন্ত খুব নগণ্য সংখ্যক গ্রেফতার হয়েছে – আরও গ্রেপ্তার হবে।”
নাগরিকত্ব আইন বিরোধী আন্দোলনের আরেক নেতা – কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতির প্রধান অখিল গগৈকে মাওবাদীদের সঙ্গে যুক্ত সন্দেহে গ্রেপ্তার করে সন্ত্রাসবাদ দমন এজেন্সি – এন আই এ-র হাতে তুলে দিয়েছে আসাম পুলিশ।