ছুটির দিনের অফিস পার্টির উজ্জ্বলতা অনেক সময় ম্লান হয়ে যায় অপ্রত্যাশিত যৌন আচরণের কারণে। গবেষকেরা বলছেন, রঙ্গ বা কৌতুকের আড়ালে অনেক সময় যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটে। তবে ব্যবস্থাপকেরা চাইলে এসব ঘটনা কমিয়ে আনতে পারেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ৬০০ কর্মচারীর ওপর করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিছক বিনোদনের জন্য অফিস আয়োজিত অনুষ্ঠানে অনেকে যৌন নির্যাতনের শিকার হন। এ নিয়ে সম্প্রতি ‘এমপ্লয়ি রিলেশনস’ নামের সাময়িকীতে ‘দ্য ডার্ক সাইড: ফান ইন দ্য ওয়ার্ক প্লেস অ্যান্ড আন ওয়ান্টেড সেক্সুয়াল অ্যাটেনশন’ নামে একটি গবেষণা নিবন্ধ ছাপা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পেন স্টেট ইউনিভার্সিটি ও ওহিও স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা পুরো যুক্তরাষ্ট্রের ৩০৮ জন হোটেল কর্মচারী এবং বিভিন্ন শিল্পে কর্মরত ৩৩৪ জন কর্মচারীর ওপর জরিপ করেন। এটা ছিল অনলাইন জরিপ। অফিসের কাজ বহির্ভূত পাঁচ ধরনের কর্মকাণ্ডের সময় ঘটা অনাকাঙ্ক্ষিত যৌন আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন গবেষকেরা। কর্মকাণ্ডগুলো ছিল: ছুটির দিনের পার্টি বা পিকনিক, একযোগে কাজ করার জন্য দল গঠন, , প্রতিযোগিতা, প্রকাশ্যে সাফল্য উদ্যাপন এবং ব্যক্তির বিশেষ ঘটনা বা অর্জন প্রকাশ্যে উদ্যাপন (যেমন জন্মদিন)।
এসব কর্মকাণ্ডের সময় কী কী ধরনের অভিজ্ঞতার মুখে কর্মীরা পড়েন, তা জানতে বেশ কিছু প্রশ্ন করা হয় এ জরিপে।
প্রশ্নগুলো ছিল: ‘তোমার দিকে কেউ কি যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ অশোভন দৃষ্টিতে তাকায়?’ ‘উত্তর দিতে অস্বীকৃতি জানালে কেউ কি একই প্রশ্ন বারবার জিজ্ঞেস করে?’, ‘এমনভাবে কেউ কি তোমাকে স্পর্শ করে যাতে তুমি অস্বস্তি বোধ করো?’
‘কখনোই না’ থেকে ‘সব সময়’—এই পাঁচটি স্তরে উত্তর দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল।
গবেষণায় দেখা গেছে, কর্মক্ষেত্রে সাধারণ কাজের দিনের চেয়ে এসব বিশেষ দিনে যৌন হয়রানির ঘটনা অনেক বেশি ঘটে।
কর্মচারীদের ওপর প্রভাব খাটিয়ে বা চাপ প্রয়োগ করে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করানোর বিষয়গুলো দেখার চেষ্টা করেছেন গবেষকেরা। তাঁরা জানতে চেয়েছিলেন, এসব কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করা বাধ্যতামূলক কি না? এসব অনুষ্ঠান সন্ধ্যায় হয়, নাকি ছুটির দিনে? কর্মচারী নন এমন ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকতে পারেন কি না, মদ্যপান হয় কি না ইত্যাদি।
গবেষকেরা দেখেছেন, অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এমন পার্টি বা কৌতুকের অনুষ্ঠানে যৌন নির্যাতনের ঘটনা বেশি ঘটে। অন্যদিকে কর্মক্ষেত্রের নির্ধারিত কর্মসময়ের বাইরে অনুষ্ঠান হলে যৌন হয়রানি অনেক বেশি হয়।
গবেষকেরা দেখেছেন, যেসব অনুষ্ঠানে কর্মচারীদের বন্ধু বা পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত থাকেন, সেখানে হয়রানি কম হয়। গবেষকেরা বলছেন, বন্ধু বা পরিবারের সদস্যরা ‘বাফার’ হিসেবে কাজ করেন। বিবদমান দুটি রাষ্ট্রের মধ্যবর্তী অপেক্ষাকৃত ছোট দেশটিকে ‘বাফার স্টেট’ বলা হয়। কিন্তু গবেষকেরা এটা দেখে কিছুটা অবাক হয়েছেন যে মদ্যপানের খুব বেশি প্রভাব এসব ক্ষেত্রে পড়ে না।
গবেষকেরা করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, মূলত কৌতুক বা হাসিঠাট্টার এই অনুষ্ঠানগুলো অফিসের সময়ে করা ভালো। তবে এসব অনুষ্ঠানে কর্মচারীদের উপস্থিত থাকা বাধ্যতামূলক করা ঠিক না। আর যদি করতেই হয়, তাহলে বন্ধু বা পরিবারের সদস্যরা যেন উপস্থিত থাকতে পারেন, সেই ব্যবস্থা রাখা দরকার।