আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে অনেকগুলো আশঙ্কা আছে বলে মন্তব্য করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেছেন, অনেক ক্ষেত্রে আচরণবিধির লঙ্ঘন হচ্ছে। আর নির্বাচন কমিশন শুধু নিষ্ক্রিয় নয়, অনেক ক্ষেত্রে নির্বাক। তারা যদি দুয়েকটি ঘটনা যেমন গাবতলীর ঘটনায় দ্রুততার সঙ্গে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতো, তাহলে গোপীবাগের ঘটনা ঘটতো না। ভবিষ্যতে যে ঝুঁকিগুলো আছে তা এড়ানো যেত।
রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে বদিউল আলম মজুমদার এসব কথা বলেন। আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ মানববন্ধন হয়। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন এবং সৎ ও যোগ্য প্রার্থীদের নির্বাচিত করার দাবিতে সুজন এ মানববন্ধনের আয়োজন করে।
মানববন্ধনে সুজন সম্পাদক বলেন, ‘আমরা নির্বাচন কমিশনের এক ধরনের ধরি মাছ না ছুঁই পানি মানসিকতা লক্ষ করছি। তাদের দেখে মনে হচ্ছে, এমন কাজ তারা করবে না যাতে ক্ষমতাসীনরা রুষ্ট হয়। এ রকম মানসিকতা অশনিসংকেত। এর ফলে কোনো রকম অন্যায় হবে না সহিংসতা ঘটবে না নিশ্চিত করে বলা যাবে না।’
নির্বাচন কমিশন যেন পোস্ট অফিস— এ মন্তব্য করে বদিউল আলম বলেন, তারা মনে করে একটা পোস্ট অফিস। পোস্ট অফিসে যেমন চিঠি আসে, তেমনি বিতরণ হয়। পোস্ট অফিসের আর কিছু করার নাই। তেমনিভাবে ইসির ধারণা, যেকোনো অন্যায়, অনিয়ম হবে, আর তাদের কাছে অভিযোগ আসবে। অভিযোগ পাওয়ার পর তারা নড়েচড়ে বসবে। এই দৃষ্টিভঙ্গি, মানসিকতার মাধ্যমে তারা গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক দায়িত্বের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারছেন না।
নির্বাচনী পোস্টার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সারা শহরে লাখ লাখ, কোটি কোটি পোস্টার দেখা যাচ্ছে। পোস্টারগুলোর অনেকগুলো লেমিনেটিং করা যা পরিবেশের জন্য চরম ঝুঁকিপূর্ণ। আমাদের আশঙ্কা নির্বাচনের পর এগুলো নালায় জমা হবে। বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা চরম আকার ধারণ করতে পারে। আদালত নির্দেশ দিয়েছে প্রার্থীরা যেন এগুলো সরায়। কিন্তু তাদের কাছ থেকে এ উদ্যোগ হতে পারে তা আশা করা যায় না।
বদিউল আলম বলেন, আরেকটি অস্বস্তির জায়গা হলো, অনেকের বিরুদ্ধে মামলা আছে, হুমকি ধামকির ঘটনা আছে, যা ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে নিরুৎসাহিত করবে।
ইভিএম প্রসঙ্গে বদিউল আলম বলেন, পেপার ব্যালটে ভোটারদের নিয়ম থাকে, বাক্সে ফেলা পর্যন্ত জানায় যায়, কোথায় ভোট দিলেন, প্রার্থীর এজেন্ট, গণমাধ্যম, পর্যবেক্ষক সঠিক দায়িত্ব পালন করলে ভোট গণনা সঠিক হয়। পেপার ব্যালটে অনিয়ম হলে বের করা যায়। কিন্তু ইভিএমের বেলায় তা সম্ভব নয়। ইভিএমে সবচেয়ে বড় সংকট নির্বাচন কমিশনের প্রতি মানুষের অনাস্থা। গত জাতীয় নির্বাচনের তারা জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে, তাদের প্রতি মানুষের অনাস্থা তৈরি হওয়াই স্বাভাবিক।
বদিউল আলম বলেন, ভারতের ইভিএমে পেপার অডিট ট্রেইল, অর্থাৎ কাকে ভোট দিলেন সেটা প্রিন্ট দিয়ে জানা যায়, ভোট পুনঃগণনা করা যায়, কিন্তু আমাদের ইভিএম ভারতের গুলোর চেয়ে ১১ গুণ বেশি দামে কেনা স্বত্বেও সেই ব্যবস্থা নেই। ইভিএম কেনার আগে যে প্র্যাকটিক্যাল কমিটি করা হয়েছে, যার প্রধান ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী, তিনি স্বাক্ষর করেননি এসব সুবিধা না থাকার কারণে। ইভিএম যন্ত্র নিয়েও আমাদের অস্বস্তি আছে।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, কে নির্বাচিত হলো, কোন দল নির্বাচিত হলো তাতে কিছু আসে যায় না। আমরা দেখতে চাই, সঠিক ব্যক্তি যেন নির্বাচিত হয়, এবং যে আশঙ্কাগুলো আছে তা যেন সঠিক না হয়।’
সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচনের একটি সুষ্ঠু দিতে আনার আহ্বান জানানো হয় মানববন্ধনে। মানববন্ধনে সুজনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।