করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ইরান বিভিন্ন জনাকীর্ণ কারাগারের ৫৪ হাজারের বেশি বন্দীকে সাময়িক মুক্তি দিয়েছে। বিচার বিভাগবিষয়ক মুখপাত্র গোলাম হোসেন ইসমাইলি সাংবাদিকদের এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, করোনাভাইরাসে সৃষ্ট রোগ কোভিড-১৯ পরীক্ষার ফল নেগেটিভ আসার পর ওই বন্দীদের জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়, ব্যাপক হারে জামিন দেওয়া হলেও পাঁচ বছরের বেশি সাজাপ্রাপ্ত ‘নিরাপত্তা বন্দীদের’ ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হয়নি।
আর এই গণজামিনের ঘটনায় ইরানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ দাতব্যকর্মী নাজানিন জাঘারি-র্যাটক্লিফ খুব শিগগির মুক্তি পেতে পারেন বলে জানিয়েছেন ব্রিটিশ এমপি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি টিউলিপ সিদ্দিক।
খবরে টিউলিপ সিদ্দিকের টুইটার পোস্ট তুলে ধরে বলা হয়েছে, তিনি বলেন, জাঘারি-র্যাটক্লিফ আজ-কালের মধ্যে মুক্তি পেতে পারেন বলে জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত ইরানি রাষ্ট্রদূত।
নাজানিনের মুক্তি চেয়ে ‘হ্যাশট্যাগ ফ্রি নাজানিন’ লিখে দ্বিতীয় পোস্টে টিউলিপ বলেন, ‘যদি এই সাময়িক মুক্তির ঘটনা ঘটে, তবে ব্রিটিশ সরকারের এটিকে (মুক্তি) স্থায়ী করার দায়িত্ব থেকে যায়। তাঁকে যেন দর-কষাকষির বস্তু হতে না দেওয়া হয়। আমি আরও উদ্বেগ প্রকাশ করছি যে নাজানিন তাঁর পরিবারকে জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের জন্য এখনো তাঁকে পরীক্ষা করা হয়নি।’
এদিকে নাজানিনের স্বামী গত শনিবার দাবি করেছেন, তেহরানের ইভিন কারাগারে তাঁর স্ত্রীর কোভিড-১৯ সংস্পর্শ ঘটেছে। তবে কর্তৃপক্ষ তাঁকে পরীক্ষা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
এ ব্যাপারে বিচার বিভাগবিষয়ক মুখপাত্র গোলাম হোসেন ইসমাইলি বলেছেন, নাজানিনের সঙ্গে পরবর্তী সময়ে তাঁর পরিবারের যোগাযোগ হয়েছে এবং তিনি পরিবারকে জানিয়েছেন, তিনি সুস্থ আছেন।
২০১৬ সালে নাজানিনকে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে পাঁচ বছরের জেল দেয় ইরান। তবে নাজানিন ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ব্রিটিশ সরকারও নাজানিনকে নির্দোষ দাবি করেছে।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, ব্রিটিশ-ইরানি দ্বৈত নাগরিকদের পরিস্থিতি মূল্যায়ন করতে ব্রিটিশ স্বাস্থ্যকর্মীদের ইভিন কারাগারে ঢোকার অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে ইরানের কাছে।
বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯–এ আক্রান্তের সংখ্যা এখন ৯০ হাজারের বেশি। মারা গেছেন ৩ হাজার ১১০ জন। এর বেশির ভাগই চীনের। গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে ভাইরাসটি ছড়ায়।
চীনের বাইরে দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান ও ইতালির পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ।
গতকাল মঙ্গলবার ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সেখানে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৩৩৬ জন। তবে প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি বলে মনে করা হচ্ছে। ৭৭ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। ইরানের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের মাধ্যমে আফগানিস্তান, কানাডা, লেবানন, পাকিস্তান, কুয়েত, বাহরাইন, ইরাক, ওমান, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
ইরানের শীর্ষ কর্মকর্তারাও ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন। কোভিড-১৯–এ আক্রান্ত হয়ে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ৭১ বছর বয়সী মীর মোহাম্মদি মারা গেছেন। দেশটির ২৯০ জন এমপির মধ্যে ২৩ জনের পরীক্ষার ফল পজিটিভ এসেছে। সবশেষ আক্রান্ত হয়েছেন জরুরি স্বাস্থ্যসেবার প্রধান পিরহোসেইন কোলিভান্দ।