সম্প্রতি পাকিস্তানে আদালতের মধ্যেই গুলি করে হত্যা করা হয়েছে এক ব্যক্তিকে। পেশোয়ারে বিচারাধীন অভিযুক্তকে আদালতকক্ষে ঢুকে গুলি করে খুন করে এক তরুণ। খুন হওয়া যুবকের বিরুদ্ধে ধর্মদ্রোহিতার মামলা চলছিল। তার নাম তাহির শামিম আহমেদ। খালিদ খান নামে ঘাতককে ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে আদালতে আহমদিয়া মুসলিমকে খুন করে ঘাতকই নায়ক বনে যান। ইসলাম অবমাননায় অভিযুক্তকে হত্যা করায় তরুণদের আইকন হিসেবে অভিহিত করে বেশ কিছু স্থানীয় গণমাধ্যম। তাঁকে ন্যাশনাল হিরোও বলা হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সিংহের সঙ্গে তুলনা করছেন অনেকেই। সিংহের সঙ্গে খালিদের ছবি যুক্ত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সয়লাব হয়ে ওঠে।
পাকিস্তানে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচারের প্রবণতা বহু পুরনো। ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান সরকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা বলেও সংখ্যালঘু ও আহমদিয়াদের ওপর নিপীড়ন করছে। সম্প্রতি পাকিস্তানের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারা এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের সদস্যরা আহমদিয়াদের কবরস্থান থেকে ইসলামিক প্রতীক সরিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পাঞ্জাবের জেলা গুজরানওয়ালার একটি গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। ডন নিউজ এ তথ্য জানিয়েছে।
সংখ্যালঘু আহমদিয়া সম্প্রদায়ের এক সদস্যের মতে, তিরিগরি গ্রামে একটি কবরস্থান ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত মুসলিমরা এবং আহমদিয়ারা এটি ব্যবহার করত। তবে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মানুষ ৬০ শতাংশ ব্যবহার করত এটি। পরবর্তী সময়ে তাদের সংখ্যালঘু ঘোষণার পর মুসলমানরা কবর পৃথক করে ফেলে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, পাকিস্তানে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের কবরস্থানে ইসলামিক প্রতীক ব্যবহারের বিষয়টি নিয়ে রাহওয়ালি পুলিশে অভিযোগ জানান স্থানীয় এক ব্যক্তি। তিনি পুলিশে প্রতীকগুলো অপসারণের জন্য বলেন।
পরে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সদস্যরা বিষয়টি নিয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হলে তারা গুরুত্ব দেয়নি। আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সদস্যদের দাবি ছিল, পুলিশ যেন প্রতীকগুলো অপসারণ না করে। তবে উল্টো কাজ করেছে পুলিশ। প্রতীকগুলো অপসারণের বিষয়টি মেনে নিতে সম্প্রদায়ের সদস্যদের চাপ প্রয়োগ করে পুলিশ। একটি নথিতে স্বাক্ষর করার জন্যও চাপ দেওয়া হয়। তবে পুলিশ এই অভিযোগটি অস্বীকার করেছে।
এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, দেশের (পাকিস্তান) সংবিধানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে আইনিভাবে প্রতীক প্রদর্শন করতে দেওয়া হয়নি বলে প্রতীকগুলো অপসারণ করা হয়েছে। তবে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের এক মুখপাত্র বলেছেন, পাকিস্তানের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সম্পর্ক উন্নয়নের ইচ্ছায় এ রকম কর্মকাণ্ড বাধা সৃষ্টি করছে।
সংখ্যালঘুদের ওপর নৃশংসতা চালানোর জন্য চরমপন্থীদের মনোবল জোরদার করছে পাকিস্তানের কিছু পুরনো আইন। তার মধ্যে অন্যতম হলো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে আইনিভাবে প্রতীক প্রদর্শন না করতে দেওয়া।
এদিকে পাকিস্তানে হিন্দুদের ওপর অত্যাচার চলে বলে সম্প্রতি খবর প্রকাশ করেছে জি-নিউজ। খবরে বলা হয়েছে, পাকিস্তানে সংখ্যালঘু হিন্দুদের বাড়ি ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। পথে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে একাধিক হিন্দু পরিবারকে। দেশটির পাঞ্জাব প্রদেশের ভাওয়ালপুরের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের কয়েকটি বাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ঘরবাড়ি ভাঙার ঘটনায় ইমরান খানের সরকারের আবাসনমন্ত্রী তারিক বশির চিমার এবং প্রদেশের প্রধান কর্মকর্তা শহীদ খোকরের প্রত্যক্ষ মদদ রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।