পাকিস্তানের কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই দেশটিতে বসবাসরত সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষা ও উপাসনালয় তৈরির অধিকারের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে বলে জানিয়েছে আ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। ইসলামাবাদে প্রথম হিন্দু মন্দির নির্মাণে বাধা দেওয়ার পর গত ৭ জুলাই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনটির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে এই সতর্কবার্তা দেওয়া হয়।
পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে প্রথম হিন্দু মন্দির নির্মাণের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যদিও এ মন্দির নির্মাণের জন্য সরকারই অনুদান দিয়েছিল। কিন্তু ইসলামি সংগঠনের ফতোয়া জারি এবং আলেমদের বৈষম্যমূলক প্রচারণার চাপে পড়ে পিছু হটেছে ইমরান সরকার। মন্দির নির্মাণ বন্ধে আদালতে পিটিশনও দাখিল করা হয়েছে। প্রস্তাবিত মন্দিরটি যেখানে নির্মাণ করা হবে সেই স্থানের সীমানা প্রাচীরটিও বিক্ষুব্ধ জনতা ভেঙে গুঁড়িয়ে ফেলেছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান ওমর ওয়ারাইচ বলেছেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধার প্রতিশ্রুতি পাকিস্তানের হিন্দুদের কাছে দেশটির প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ করেছিলেন। দেশের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় বিশ্বাসের স্বাধীনতা ও অবাধে ধর্মীয় অনুশীলনের অধিকারকে যারা অস্বীকার করে তার দেশের প্রতিষ্ঠাতার প্রতিশ্রুতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে। পাকিস্তানের সংবিধান এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের দায়বদ্ধতার অধীনে দেশটিতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার সুরক্ষিত। যারা এটাতে বাধা প্রদান করছে তারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে।’
গত বছর পাকিস্তান যখন ভারতীয় তীর্থযাত্রীদের জন্য করতারপুরের শিখ মন্দির চালু করেছিল তখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়নের সৃষ্টি হয়েছিল। সবাই ইমরান সরকারের এই পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানিয়েছিল, বিশ্বে পাকিস্তানের একটা ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছিল। তবে চলতি বছরে উগ্রবাদীদের ঘৃণ্য চাপে ইসলামাবাদে হিন্দুদের মন্দির তৈরির কাজ বন্ধ করে সেই অর্জনকে উল্টে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে পাকিস্তানের হিন্দু সম্প্রদায়কে যে বৈষম্যের মুখোমুখি হতে হচ্ছে তা আরো বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
পাকিস্তানে হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরবচ্ছিন্ন ধর্মীয় বৈষম্যের শিকার হওয়ার আরেকটি উদাহরণ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটির বিভিন্ন স্থানে হিন্দুদের মন্দির ধ্বংস করা। এছাড়া হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যক্তিরা বৈষম্যমূলক ‘ব্লাসফেমি’ এর মিথ্যা অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছেন। ব্লাসফেমি পাকিস্তানে এমন একটি অপরাধ যার শান্তি বাধ্যতামূলক মৃত্যুদণ্ড। মন্দির এবং দোকানগুলোতে হামলা.অপহরণ, জোরপূর্বক ধর্মান্তরকরণ এবং শত শত হিন্দু মেয়েকে জোরপূর্বক বিবাহ দেশটিতে হিন্দুদের ধর্মীয় স্বাধীনতা হরণের উদাহরণ।
২০১৯ সালে দুটি পৃথক ঘটনায়, একটি হিন্দু স্কুলের অধ্যক্ষ এবং একজন হিন্দু পশুচিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্লাসফেমির অভিযোগের পরে দক্ষিণ সিন্ধু প্রদেশে বিক্ষুব্ধ জনতা হিন্দুদের সম্পত্তি এবং উপাসনা স্থানগুলোতে বেপরোয়া আক্রমণ করেছিল।
পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই এ জাতীয় পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। সরকারকে সংখ্যালঘুদের দেওয়া সাংবিধানিক অধিকার রক্ষায় স্পষ্ট ও প্রকাশ্যে এ জাতীয় ঘটনার নিন্দা জানাতে হবে। সংখ্যালঘুদের প্রতি সহিংসতার প্রতিটি ঘটনার তাৎক্ষণিক তদন্ত করতে হবে এবং দায়ীদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে। পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হলে এ জাতীয় ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা যেতে পারে।
দ্য সিঙ্গাপুর পোস্ট।